আনোয়ারায় জমে উঠেছে ভোটের রাজনীতি

0

জাহেদুল হক,আনোয়ারা,সিটিনিউজ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মতো চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিসহ সব কটি রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ইসলামী দলগুলোও। এবার ঈদ ঘিরে রাজনীতিবিদদের ভোটের রাজনীতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দুর্গাপূজা নিয়েও দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছেন বড় দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এদের অনেককে আগে এলাকায় দেখা না গেলেও ইতিমধ্যে তারা নির্বাচনী এলাকায় নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন। ঈদ ও শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকেই ঝুলিয়েছেন ব্যানার,ফেস্টুন ও পোস্টার। আবার কেউ কেউ মসজিদ,মন্দিরে দান-খয়রাত ছাড়াও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আর বছর খানেকের বেশি নেই। ফলে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামীলীগ বিএনপিতে ততই বাড়ছে মাঠ দখলের কৌশল ও পরিকল্পনা। লক্ষ্য একটাই পরস্পরকে ঘায়েল করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠন করা। প্রধান দুই দলের এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই ছোট ছোট দলগুলোও। সবার বক্তব্যে একটাই বিষয়-নির্বাচন। সবমিলিয়ে নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে ভোটের রাজনীতি।

জানা গেছে,আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৩ সংসদীয় এলাকায় আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। নির্বাচনের আগে এ কোন্দল নিরসন করা না হলে নির্বাচনী মাঠে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নামানো কঠিন হবে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দু‘গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম। অপরাংশের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এডভোকেট কবির চৌধুরী। দুই গ্রুপেরই উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন করা হলে বিএনপির বিজয় অনিশ্চিত। এ আসনে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কর্মকান্ড কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড না করলেও গোপনে তাদের দলীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর রয়েছে।

সূত্র জানায়,বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে এ আসনের আনোয়ারা উপজেলায় আওয়ামীলীগ এগিয়ে থাকলেও বিএনপির দূর্গ হিসেবে খ্যাত কর্ণফুলীর ভোটে বিজয়ী হয়ে আসছে বিএনপি। তার ব্যতিক্রম ঘটে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সেবার আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুতে শূণ্য হওয়া এ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাবুপুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এরপর ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় স্থান পেলে আনোয়ারা-কর্ণফুলীবাসী প্রথমবারের মতো মন্ত্রীর স্বাদ পায়। মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে তিনি আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেন। প্রতি শুক্রবারে নির্বাচনী এলাকার কোন না কোন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে জনগণের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

এছাড়া কর্ণফুলীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কর্ণফুলীকে উপজেলা ঘোষণার পেছনেও প্রতিমন্ত্রীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। যার কারণে এবারের নির্বাচনে কর্ণফুলী উপজেলায় বিএনপির ভোট অনেকটা কমে যাবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। আওয়ামীলীগের টিকিটে এবারও নির্বাচনে লড়বেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এছাড়াও এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামীলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান,কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্জাদা মহিউদ্দিন,জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান।

অপরদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ও জেলা বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। দুই গ্রুপে বিভক্ত আনোয়ারা-কর্ণফুলী বিএনপিতে চলছে হিসাবের লড়াই। বিগত কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দলের তৃণমূল নেতাদের দূরে রেখে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে সরওয়ার নিজামের। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় নেতাকর্মীদের কোন খবর রাখেনি বলেও অভিযোগ দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের।

এছাড়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ সভাপতি তপন চক্রবর্ত্তী। তবে সম্মিলিত জাতীয় জোটের শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন এ আসন থেকে একাধিক বার নির্বাচন করেছেন। সে হিসেবে জাতীয় পার্টি এ আসনটি ইসলামী ফ্রন্টকে ছেড়ে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে তপন চক্রবর্ত্তী জানান,দলের চেয়ারম্যান আমাকে আনোয়ারা আসনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্র ঘোষিত ১৫০ প্রার্থীর তালিকায়ও আমার নাম রয়েছে। তাই আমি নিশ্চিত দলের মনোনয়ন আমি পাবো।

 

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.