আনোয়ারায় ঝিমিয়ে পড়েছে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম : বাড়ছে জনসংখ্যা

0

জাহেদুল হক,আনোয়ারা::আনোয়ারায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। মাঠ পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের সঠিক তদারকি না করায় জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে সাথে গর্ভবতী মায়েরাও প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকটা দায়সারা ভাবেই চলছে এ বিভাগের কার্যক্রম।

জানা যায়,পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীরা আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগের মতো সেবা দিচ্ছেন না। প্রচারও দুর্বল হয়ে পড়ায় বেশিরভাগ মানুষ জানেন না জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও সেবা পাচ্ছেন না আগ্রহী দম্পতিরা। ফলে মাঠ পর্যায়ে এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী। আর এ কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জনসংখ্যা।

এদিকে,মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম তদারকি জোরদার করার লক্ষ্যে গত ১৬ জুলাই সংশ্লিষ্ট বিভাগে পরিপত্র পাঠিয়েছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিভাগের কার্যক্রমে চরম অসন্তোষ জানিয়ে এতে বলা হয়েছে,দায়িত্ব পালনে কোন গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় মামলা রুজু পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরও মাঠ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়েনি।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানায়,আনোয়ারার ১১টি ইউনিয়নে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ,গর্ভবতী মাদের সেবা প্রদানসহ জনসংখ্যা রোধে সহায়ক হিসেবে ৫১ জন পরিবার কল্যাণ সহকারীর (এফডব্লিউএ) মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩৮ জন। তারমধ্যে ৬ জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। আর তাদের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত ১১ পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের (এফপিআই) স্থলে ৯ জন এবং ১২ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার (এফডব্লিউভি) স্থলে ১০ জন কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের কাউকেই নিয়মিত কর্মস্থলে দেখা যায় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,উপজেলার ১১ ইউনিয়নে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় তিন লক্ষাধিক। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুরে। এ ইউনিয়নের সরেঙ্গা,পুর্ব গহিরা,খোর্দ্দ গহিরা, চুন্নাপাড়া, পরুয়াপাড়ার মতো প্রত্যন্ত গ্রামেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোন ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। এসব গ্রামগুলোর প্রতিটি পরিবারেই ৫-৬ জনের অধিক সদস্য রয়েছে। অথচ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের শ্লোগান ‘দুইটির চেয়ে বেশি নয়,একটি হলে ভাল হয়’ সেই মধুর শ্লোগান যেন সরকারি কাগুজে কলমেই সীমাবদ্ধ। এসব এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবটা বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,তাদের গ্রামে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা পরিদর্শকের নামও তারা জানেন না। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কেন কিভাবে তা গ্রহণ করতে হয় সেটাও তারা জানেন না। শুধু রায়পুর ইউনিয়ন নয়,পুরো উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের বেহাল দশা। পরিবার কল্যাণ সহকারীরা মাঠ পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ বিনামূল্যের ঔষধ বিতরণের নিয়ম থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তা পালিত হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,মাঠে না গিয়ে নিজ বাড়িতে বসে কার্যক্রম চালাচ্ছেন পরিবার কল্যাণ সহকারীরা। অনেকে আবার শহরে থাকার কারণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এভাবে মাসের পর মাস তাদের কাজে ফাঁকি দিলেও কিন্তু বেতন-ভাতা যথাসময়ে উত্তোলন করছেন। বর্তমানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতেও জড়িয়ে পড়েছেন তারা। প্রতি দুইমাসে একবার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম নিয়ে সভা করার নিয়ম থাকলেও গত তিন বছরে কোনো সভা হয়নি। ফলে মাঠ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে হু হু করে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বাল্য বিয়ের প্রবণতাও বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জোর চেষ্টা চালিয়েও বাল্য বিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কিছু অসাধু বিবাহ রেজিষ্ট্রার ও জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির কারণে বাল্য বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে। এতে করে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কৃষি জমি ও কর্মসংস্থানের উপর বেশ প্রভাব পড়ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সালেহ মো.ফোরকান উদ্দিন জানান, আমাকে দুটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখানে যোগদানের পর থেকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। তবে জনবল সংকট থাকায় মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.