আমি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই

0

সাক্ষাৎকার :

-ড. মাহমুদ হাসান, নির্বাহী সদস্য
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ

জুবায়ের সিদ্দিকী : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে রাজনীতির মানচিত্রে একটি সুপরিচিত নাম ড. মাহমুদ হাসান। আওয়ামী লীগের দু:দিনের কান্ডারী ও ওয়ান ইলেভেনের দু:সময়ে দলকে যিনি জীবন বাজি রেখে ফটিকছড়িতে আগলে রেখেছেন শ্রম, মেধা ও মননে তিনি একজন শুধু রাজনীতিবিদই নন, সমাজ সেবক, দানবীর ও দক্ষ সংগঠক। মানুষের সুখে দু:খে সব সময় পাশে থাকেন ড. মাহমুদ হাসান। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সহ বিভিন্ন উপজেলায় তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনহিতকর কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত দীর্ঘদিন যাবত। মসজিদ ও মাদ্রাসায় শিক্ষা সামগ্রী সহ কম্পিউটার প্রদান, মসজিদ নির্মানসহ নানা ধর্মীয় কর্মকান্ডেও অংশ নিচ্ছেন তিনি।

একজন মানবতাবাদী, সদালাপী ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামে বেশকিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সংগঠনের সাথে জড়িত ড. মাহমুদ হাসান ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রামের একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও ত্যাগী এই নেতা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সহ বেশ কয়েকটি বড় সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। ফটিকছড়িতে প্রথম মহিলা কলেজ তিনি প্রতিষ্টা করেছেন। বর্তমানে ফটিকছড়িতে একটি মেটারনিটি ক্লিনিকও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

গত ৭ সেপ্টেম্বর আজকের সুর্যোদয়কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ড. মাহমুদ হাসান বলেন, ’আপনি বলেছেন ফটিকছড়িতে সম্মেলনে সভাপতি হওয়ার বিষয়ে। আমি বলবো, এটা নিশ্চিত করে এখন বলার মতো নয়। রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই। ফটিকছড়ি একটি বিশাল এলাকা। আমরা যাদের এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছি তাদের থেকে সেভাবে কোন উন্নয়ন পাচ্ছি না। সম্মেলন হতে হবে দলের প্রয়োজনে। আমি দলের কোন বিভাজন চাই না।

আপনি জানেন, ’আমি মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। প্রবাসে দলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য। সে জায়গায় যদি নেতারা বলেন, উপজেলায় আপনার দরকার আছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড বাড়াতে দলের প্রয়োজনে অবশ্যই তা চিন্তা করবো। আর যদি বলেন না, ’যারা আছেন তারা দায়িত্ব পালন করবে। তাহলে তাই হবে। আমি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। বিশিষ্ট সংগঠক, রাজনীতিবিদ ড. মাহমুদ হাসানকে জঙ্গি দমনে সরকারকে কি পরামর্শ দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,’ জঙ্গি দমনে সরকারের সকল পদক্ষেপই প্রশংসনীয়। সাধারন নিরহ ছেলে-মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে ও ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গি বানাচ্ছে। ইসলাম বলেনি, তুমি মানুষ মারো, আমি তোমাকে বেহেস্তে নিয়ে যাব! পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ’যে একজন মানুষকে খুন করলো, সে পৃথিবীর মানবজাতিকে খুন করলো’।

খুন করলে বেহেস্তে যাবে এমন ভ্রান্ত ধারনা তাদের মাথায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাদের মাথার মধ্যে পোকা প্রবেশ করানো হচ্ছে। এখানে দরগাহ, আলীয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, হেফাজত, জাতীয় পার্টি, পীর জামাত, সুন্নী ও ওহাবী দলের যে বিভাজন, এই বিভাজন আমাদের ত্যাগ করতে হবে। আপনি জানেন,’সেদিন আমাদের ওবায়দিয়া মাদ্রাসায় সোনার ছেলেরা আক্রমন করেছে। পত্রিকায় দেখেছেন। অনেক রক্ত সেখানে ঝরেছে। কি জন্য এই দাঙ্গা হাঙ্গামা হবে ভাইয়ে-ভাইয়ে? আমি একজন লোককে আক্রমন করে ধর্মের নামে জায়েজ করলাম। এটাও একটা আইএসের মত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। তারা বলছে, তুমি মৃত্যুকে আলীঙ্গন কর, তবেই তুমি বেহেস্তে যাবে। ইসলাম বলেছে, নিজেদের মধ্যে বাড়াবাড়িতে যাবে না। রাজনৈতিক ফায়দা লাভের আশায় অনেকে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতির চর্চা করছেন।

আমাদের উচিত, প্রত্যেক মসজিদে জুম্মার নামাজে যে খুতবা পড়া হয় তখন ৫২ সপ্তাহে ৫২টি ট্রফি নির্ধারন করে দেয়া। অর্থাৎ ৫২টি জরুরী বিষয়। যেমন- যৌতুক, জঙ্গি, বাল্যবিবাহ, শিক্ষা ও উন্নয়নে কি পন্থা অবলম্বন কবর। আচার ব্যবহার, সামাজিকতা, পিতামাতার, স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য, নারী শিক্ষা কেন দরকার, ডিজিটাল যাত্রায় কি পদক্ষেপ নিতে হবে, ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে কি বলে এসব বিষয় জুমার খুতবায় নিয়ে আসা জরুরী। মসজিদের ইমামদের ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষন প্রয়োজন। কারন দু:ভাগ্য হলেও সত্য সব ইমাম শিক্ষিত নয়। কোন কোন স্থানে জঙ্গি ও খারাপ মানুষগুলো মসজিদকে ব্যবহার করছে।

এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা নানাভাবে কোরআনের তরজমা করেছেন। গিরীস চন্দ্র সেন বাংলায় তরজমা করেছিলেন। কোরআন বলেছে, তুমি আমল কর। কোরআনের মহত্ব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দাও। ধর্মের নামে এক শ্রেনীর মানুষ দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে আমাদের মাতৃভুমিকে অকার্যকর করতে। প্রত্যেক মসজিদের ইমামদের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মুসল্লীদের বয়ান দেয়া প্রয়োজন। সমাজকে বিকশিত করতে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার প্রত্যেক অতিষ্টিক শিশুকে মাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা দিচ্ছে। এভাবে সমাজে অবহেলিত মানুষকে সাহায্য সহায়তা করছে সরকার। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এই দেশে থাকবে না যদি আমরা সকলে যার যার অবস্থানে সজাগ ও সচেতন থাকতে পারি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.