ইউরিয়া সার দিয়ে তৈরি হচ্ছে মুড়ি
মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ::ইউরিয়া ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব মুড়ি খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ কিডনি, ফেলিওর সহ ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত।
রমজানের ইফতারীতে ধনী-গরীব সকলের আপ্যায়নে মুড়ি একটি প্রিয় খাবার। সকলের প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন থেকে ইউরিয়া ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইট বা হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি করছে মুড়ি। আবার এ মুড়ি দিয়ে বানানো হচ্ছে মুয়া। শীতকালীন খাবার হিসেবে মুড়ি এবং মুয়া ছেলে-বুড়ো সবাই খুব মজা করে খাই। এ মুয়া-মুড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারীর সময় চনার সাথে মুড়ি একটি রুচিশীল খাবার হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষের জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। সার ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হওয়া মুড়ি দেখতে সুন্দর, সাদা ধবধবে হওয়ায় এর চাহিদও প্রচুর। বিশেষভাবে তৈরি এ মুড়ি খোলা বাজারে সহজলভ্য হওয়ার ফলে সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরির সাথে জড়িত শত শত পরিবার এখন আর্থিক অনটনে দিন কাটাচ্ছে। বিগত ৯/১০ বছর ধরে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইউরিয়া ও হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি মুড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়ে হাট-বাজারে আসলেও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আছে।
জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ মুড়ি উৎপাদন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এ ইউরিয়া ও হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি মুড়ি চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকায় মজুদ করে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে বিক্রি করা হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া উপজেলার সহস্রাধিক স্থানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব মুড়ি জনসম্মুখে বিক্রি করা হচ্ছে।
মুড়ি ব্যবসায়ীদের অনেকে জানালেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী মহল জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এ মুড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করে অবৈধভাবে হাজার হাজার টন মুড়ি উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। সে মুড়ি দিয়ে তৈরি হচ্ছে মুয়া। বিভিন্ন দোকানে প্রদর্শিত করে মুয়া পলিথিনের প্যাকে বিক্রি হচ্ছে অবাধে।
এ মুড়ি বাজারে আসার ফলে দেশীয় তৈরি সুস্বাদু মুড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এলাকার মুড়ি ব্যবসায়ী মানিক দে বললেন, ৩৪ বছর ধরে তারা মুড়ি বিক্রি করে আসছেন। আগে তারা দেশী মুড়ি বিক্রি করতেন। বর্তমানে দেশী মুড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় দর্শনীয় রাসায়নিক সার দিয়ে তৈরি মুড়ি বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে মুড়ি ব্যবসায়ী বাঁশী মহুরী জানালেন, তাদের সে বাপ-দাদার আমলে মুড়ি ব্যবসা সচ্ছল না থাকায় এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে তিনি অন্য পেশায় চলে যান। তার সাথে তার এলাকার অনেকে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তিনি বলেন, বাড়ীতে সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরি করে এক সময় বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি মুড়ি বাজারে আসার ফলে দেশী মুড়ির চাহিদা নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, ইউরিয়া ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এসব মুড়ি খেলে মানব শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ কিডনি, ফলিওর সহ ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হতে পারে। বিএসটিআই- চট্টগ্রাম অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৫৭টি আইটেমের উপর বিএসটিআই অভিযান পরিচালনা করে। ইউরিয়া সার ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ির ব্যাপারে এখনো তারা পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানান। সরকারিভাবে নির্দেশনা ফেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।