ই-কমার্সে যাচ্ছে ডাকঘর

0

বিশেষ প্রতিবেধক :  মনের ভাব প্রকাশের যতো মাধ্যম ও ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনও ঘটেছে ততটা। আধুনিক যুগের মুঠোফোনের ক্ষুদের বার্তা, ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপিতে কথোপকথনের নানা আধুনিকতার মধ্যেও এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ডাকঘর হারিয়ে গেছে চিঠি!মোবাইল-ফেসবুকের এই নয়া দুনিয়ায় রোজ কতো কথাই তো হয়। স্বজন কিংবা প্রিয়জনের হাতের লেখা চিঠি বড্ড বেশি মিস করে এখনো অনেকেই।

প্রায় দুইশ বছর ধরে মানুষের দোরগোড়ায় যার সঙ্গী ছিল, সেই ‘ডাকঘর’ আজ গ্রাহকহীন। তেমন আগ্রহ নেই গ্রাহকদের। কুরিয়ার সার্ভেসগুলো দাপটে ব্যবসা করলেও অবহেলায় পড়ে রয়েছে ডাকঘর। এ অবস্থায় ডাকঘরকে আবার জনমূখী করতে পোস্ট ই-কমার্স কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এর অনলাইনে ই-কমার্স সাইটের যে কোন পণ্য সহজেই গ্রাহকের হাতে পৌছে দিবে ডাকঘর। সম্প্রতি ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাথে ডাক বিভাগের এ সম্পকৃত একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়।

কথা হলে চট্টগ্রাম জিপিও‘র সিনিয়র পোস্ট মাস্টার জেনারেল এবিএম ফজলুল হক বলেন, ই-কমার্স কার্যক্রম ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডাকবিভাগের ভিপি সার্ভিস নামে একটি সেবা ছিলো। সেই সেবাকে আধুনিক রুপে ই-কমার্স সেবার সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে। এজন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ১১৮টি গাড়ি কেনা হচ্ছে।

মানুষ চিঠিপত্র লেখা ছেড়েই দিয়েছে প্রায়। নেহায়েত প্রয়োজন না পড়লে ডাকঘরে যাবার পথটিও ভুলতে বসেছে। এখন শুধু সঞ্চয় স্কিম, চাকরির জন্য পোস্টাল অর্ডার কেনা আর রেজিস্ট্রি ডাকে আবেদন প্রেরণ, বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে দেশে বিদেশে নিকটজনদের কাছে পার্সেলযোগে উপহার পাঠানো ইত্যাদি কারণে ডাকঘরের চত্বরে মানুষের আনাগোনা, ভিপি সার্ভিসের কথা আর কে মনে রেখেছে। একটা সময় ছিল, পুথিঘর বা সেবা প্রকাশনীর বই, আয়ুর্বেদীয় প্রতিষ্ঠানের ওষুধসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্য দূরের ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিয়ে পণ্যের মূল্য আদায় করে সেটা ভিপি মানি অর্ডারযোগে আবার বিক্রেতার কাছে পৌঁছানোর কাজটা এই ভিপি সার্ভিসের মাধ্যমে সুচারুরূপে নির্বাহ করেছে ডাক বিভাগ। প্রতিটি ডাকঘরের কার্যতালিকায় এখনও শোভা পায় এই সার্ভিসের নাম। তবে সার্ভিসটির গ্রাহক কমেতে কমতে শূণ্যের কোঠায়। এ অবস্থায় সার্ভিসটিকে নতুনরুপে আধুনিকভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে ডাক বিভাগ। নতুন এ সেবার মাধ্যমে ডাক বিভাগ আবার ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবিএম ফজলুল হক বলেন, ডাক বিভাগের সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক এবং সামর্থ্যরে প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এখনও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। ব্যবহার কমে গেলেও আমাদের কর্মীরা এখনও দক্ষভাবেই কাজে নিয়োজিত আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ই-কমার্স ও ডাক বিভাগ দুটোই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে।

দেশে ই-কমার্স উদ্যোক্তা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে ই-কমার্সের ব্যবসার পরিধিও। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সাথে ডাক বিভাগের এ চুক্তির ফলে সুযোগপযোগী হয়ে উঠবে ডাক বিভাগ। অন্যদিকে স্মার্ট সার্ভিস পাবে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। কুরিয়ার সার্ভেস কোম্পানিগুলোর কাছে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের টাকা বকেয়া পড়ে থাকলেও ডাক বিভাগ তাৎক্ষকিভাবেই টাকা পরিশোধ করে দিবে। যার কারণে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বড় সম্ভাবনার কথা। অন্যদিকে ডাক বিভাগের জন্য এটি হবে ‘দূরগামী রেলগাড়িটিতে দৌড়ে গিয়ে চড়া না হয় আলস্যভরে তাকিয়ে সেটির চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখার মতো।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.