উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স

0

সুজিত দত্ত,পটিয়া প্রতিনিধি, সিটিনিউজ : মাতৃভূমিকে পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত করার প্রত্যয়ে আত্মোৎসর্গকারীদের মধ্যে প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৫ তম আত্মহুতি দিবস আজ।

এবারের আত্মহুতি দিবসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিতব্য প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের স্বপ্ন বাস্তবায়ন।

এ ভবন আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে উদ্বোধন করা হবে বলে এ ট্রাস্টেও নির্বাহী পরিচালক পঙ্কজ চক্রবর্ত্তী জানান।

জানা যায়, এ বীর কন্যা প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামের দক্ষিণ সমুরায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রীতিলতা শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা, ঢাকার ইডেন কলেজে থেকে আইএ এবং কলিকাতার বেথুন কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ বি.এ পাশ করেন।

বি.এ পাশের পর পর চট্টগ্রামের নন্দনকানন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। ইডেনে পাঠ্যাবস্থায় তিনি বিপ্লবী দলের সংস্পর্শে আসেন।

চট্টগ্রামে এসে সূর্যসেন ও নির্মল সেনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং গোপনে কাজ করতে থাকেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাষ্টারদা’র নির্দেশে প্রীতিলতা পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। প্রায় ৫৩ জন ইংরেজকে মারাত্মকভাবে আহত করে ধরা পড়ার আশংকায় পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহুতি দেন।

পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব সফল আক্রমনের পর যখন বীর দর্পে ফিরছিলেন এমন সময় পিছন থেকে একটা গুলি এসে প্রীতিলতার বুকে বিদ্ধ হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মারা যাননি বলে পকেট থেকে পটাসিয়াম সায়ানাইট মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মহুতি দেন।

প্রীতিলতার গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমুরা গ্রামে। বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দাদার মিউনিসিপ্যাল অফিসের কেরানী মাতা প্রতিভা ওয়াদ্দাদার একজন গৃহিনী ছিলেন। এক ভাই তিন বোনের মধ্যে প্রীতিলতা ২য়। যার ডাক নাম রানী।

এবারের বীর কন্যা প্রীতিলতার ৮৫ তম আত্মহুতি দিবসে মুক্তিকামী মানুষের জন্য শুভ বার্তা বয়ে এনেছে প্রীতিলতার জন্মভূমি ধলঘাটে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে নির্মিত প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স। এটি ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বীর কন্যা প্রীতিলতা ট্রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হচেছ।

এ প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে পটিয়া এলজিইডি। ৬ তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিতব্য ৪ তলা এ ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যাদেশ পেয়ে এ প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়ন করেছে কনসোনেল ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড বিল্ডার্স। বর্তমানে এ প্রকল্পের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জানা গেছে।

প্রীতিলতা ট্রাষ্টের নির্বাহী পরিচালক পঙ্কজ চক্রবর্ত্তী জানান, প্রকল্পটি বর্তমানে ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর প্রচেষ্ঠায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এর আন্তরিক সহায়তায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেছে। এ নিয়ে পটিয়ায় বর্তমানে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পটিয়া একটি অগ্রসর জনপদ হলেও এখানে শিশু কিশোরদের মেধা বিকাশে স্থায়ী কোন সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র এখানে এতদিন গড়ে না উঠায় সংস্কৃতি কর্মীরা হতাশ ছিলেন। ফলে বর্তমানে এ কেন্দ্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ায় এখানে সংস্কৃতি চর্চার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে সংস্কৃতি সেবীরা মনে করেন।

দীর্ঘদিন যাবত পটিয়ার ধলঘাটে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাষ্ট নামে একটি সংগঠন প্রীতিলতার সংগ্রামী জীবনাদর্শ তুলে ধরে তার স্বপ্নের শোষনমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করলেও এ সংগঠনের কোন স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় এর সাথে জড়িতরা হতাশ ছিলেন। তারপরও এ ট্রাষ্ট কর্তৃক ১৯৯১ সালে প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম করণে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে তা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে। বর্তমানে এটি স্থায়ী কমপ্লেক্সে রূপ লাভ করায় এ অঞ্চলে সংস্কৃতির বিকাশে অফুরন্ত সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রীতিলতা ট্রাষ্ট নির্বাহী আরো জানান, এ পর্যন্ত প্রীতিলতা কমপে¬ক্স পরিদর্শন করেছেন প্রয়াত বিপ¬বী মাস্টারদা’র সহযোগী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, ভারতের সহকারী হাই কমিশনার সোমনাথ ঘোষ ও সোমনাথ হালদার, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এছাড়াও বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তপত্রী মুখোপাধ্যায়সহ দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ও বুদ্ধিজীবিরা এ কমপে¬ক্স পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে বাস্তবায়িত বীরকন্যা প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকবে একটি বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ, নারীদের ব্যায়ামাগার, লাইব্রেরী, নারী উন্নয়ন প্রকল্প, সকল বিপ¬বীদের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর। এছাড়াও থাকবে একটি বিশাল আকারের মিলনায়তন। এটি আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুভ উদ্বোধন করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছে।

আজ প্রীতিলতার ৮৫ তম আত্মহুতি দিবস পালন করার লক্ষ্যে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাষ্ট, পটিয়া প্রেস ক্লাব, গৌরব সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.