কক্সবাজার উখিয়ায় আল-ইয়াকিন গ্রুপ ফের সক্রিয় :আটক ২

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া,সিটিনউজ :: কক্সবাজার জেলায় ২ রোহিঙ্গা শিবিরে মিয়ানমার বিদ্রেুাহী সংগঠন আল-ইয়াকিন গ্রুপ ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় বিদ্রেুাহীরা ক্যাম্পের মানুষকে ধরে নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী, খুন, অপহরণ করছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আল-ইয়াকিনের আস্থানায় হানা দিয়ে রোহিঙ্গা আব্দুল হাকিমের পাহাড়ী আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ১৫ টি ওয়াল সুটার গান ও ২ টি রিপলভার এবং ৪৪২ রাউন্ড গুলিসহ ২ সহযোগীকে আটক করেছে র‌্যাব- ৭।

সোমবার গভীর রাতে টেকনাফ পৌর এলাকার উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন। আটককৃতরা হলো, মিয়ানমারের নাগরিক মোহাম্মদ ফরিদ (৩৭) ও শামসুল আলম (২২)। তারা দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা আল-ইয়াকিন নেতা আব্দুল হাকিমের সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল বলে জানায় র‌্যাব।

মেজর রুহুল আমিন আরও জানান, গোপন তথ্যে’র ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিমের দুই সহযোগীকে আটক ও পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৫টি ওয়ান শুটার গান, ২টি দেশীয় তৈরী রিভলবার ও ৪৪২ রাউন্ড গুলি। স¤প্রতি টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গা আল-ইয়াকিনের নেতা আব্দুল হাকিমের শ্যালককে অস্ত্রসহ আটক করেছিল র‌্যাব। উল্লেখ্য টেকনাফের পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল ডাকাত আব্দুল হাকিমের বাহিনী।

টেকনাফ থানার ওসি তদন্ত শেখ আশরাফুজ্জামান জানান, অস্ত্রসহ ধৃত দুই ডাকাতকে মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ থানায় সোপর্দ্য করে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করেছে র‌্যাব।
কে সে আল-ইয়াকিনের নেতা হাকিম : মিয়ানমারের রাশিদং থানার বড় ছড়া গ্রামের জানি আলীর ছেলে আব্দুল হাকিম। দীর্ঘ ৯ বছর আগে মিয়ানমার পুলিশ তার এক ভাইকে সেখানে মেরে ফেলে। এরপর সেখান থেকে শাহপরীরদ্বীপ পালিয়ে আসে। শাহপরীরদ্বীপের বাজারপাড়ার মৃত নজির আহমদের ছেলে আব্দুল জলিলের বাসায় বসবাস করত।

সেই সময় জলিলের নেতৃত্বেই গরু চুরি করত আল-ইয়াকিন নেতা আবদুল হাকিম। একদিন গরু চুরির সময় তাকে জনতা আটক করে গনপিটুনি দেয়। এরপর তিনি সেখান থেকে টেকনাফ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পুরাণ পল্লান পাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করে। গড়ে তোলে নিজস্ব বাহিনী। চালাতে থাকে ডাকাতি, অপহরণ ও খুন-গুম।

মূলত তার অপরাধ সার্মাজ্য মিয়ানমার কেন্দ্রিক হলেও কয়েক বছর আগে টেকনাফে পুলিশ সোর্স মুন্ডি সেলিম হত্যাকান্ডের পর প্রথম আলোচনায় আসে হাকিম ডাকাত। রাতের বেলা মুন্ডি সেলিমকে উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে মায়মুনা স্কুলের সামনে থেকে ধরে নিয়ে পাহাড়ী ছড়ায় গুলি করে ফেলে দেয়। সে ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামী। এরপর গতবছর রমজান মাসে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক মেম্বার সিরাজুল ইসলাম হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে টেকনাফে আব্দুল হাকিম ডাকাত আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

টেকনাফে সর্বত্র বিরাজ করছে আল-ইয়াকিনের নেতা হাকিম আতংক। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে সে একের পর এক অপহরণ, গুম হত্যা চালাতে থাকে। তার ভয়ে পল্লান পাড়া ও উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকার অনেক পরিবার এখনো ঘর ছাড়া। তার হাতে অপহৃত পল্লান পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাফেজ সহ অন্তত অর্ধডজন মানুষের এখনো খোঁজ নেই বলে জানা গেছে।

বেশ কিছুদিন আগে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হলে সে নিজেকে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আল ইয়াকিন-২ এর নেতা দাবী করে ইউটিউবে বেশ কয়েকটি ভিডিও আপলোড করে। এরপর সে আরও বেশী আলোচিত হয়ে উঠে। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির তার গোপন যোগাযোগ রয়েছে বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

সম্প্রতি র‌্যাব ৭ তার আস্তানায় ধারাবাহিক কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে তার শ্যালকসহ কয়েক সহযোগীকে আটকের পর জনমনে কিছুটা স্বস্থি ফিরলেও হাকিম আটক না হওয়ায় আতংক পুরোপুরি কাটেনি। সর্বশেষ সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে তার আরও দুই সহযোগীকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ আটক করলো র‌্যাব। এদিকে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা মোঃ ইউনুছের নেতৃত্বে আল-ইয়াকিন গ্র“প সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সোমবার রাতে ২ রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ পূর্বক ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করেছে। ১ মাসের ব্যবধানে ২ জন রোহিঙ্গা নেতাসহ ৩ জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে খুন করেছে আল-ইয়াকিন নামের একটি সংগঠন। কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পে হানা দিয়ে ই-১ ব্লকের নেতা আয়ুব মাঝি, কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের শরণার্থী আলী আহমদের ছেলে মোঃ সেলিমকে তাদের ঘর লুটপাট করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাদের লাশ উখিয়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে। একই ভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গত ২৩ মে কুতুপারং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের মালয়েশিয়া ফেরৎ মৃত ইমাম হোছনের ছেলে মোঃ শফি প্রঃ বলি (২৬) কে রাতে অন্ধকরে শিবির থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

মুক্তিপণ না দেওয়ায় অপহরণের ৩ দিনের মাথায় ২৫ মে সকালে পাশ্ববর্তী মধুর ছড়া জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গা মোঃ শফি প্রঃ বলির লাশ উদ্দার করে উখিয়া থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডে জড়িতদের এখনো পর্যন্ত আইন শৃংখলা বাহিনী আইনের আওতায় আনতে না পারায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যার ধারাবাহিকতায় গত রোববার সন্ধায় কুতুপালং ক্যাম্পে নুরুল কবির (৩৫) একই রাতে সিদ্দিক আহমদের ছেলে নুর হোছন এবং নজির আহমদের ছেলে জাকেরিয়া (৩২) কে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

পরে উখিয়া থানা পুলিশ, কুতুপালং ফাঁড়ির পুলিশ, অসংখ্য রোহিঙ্গা লোকজন নিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসলেও জনৈক ১ রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করছে বলে রাজাপালং ইউপি সদস্য মৌঃ বখতিয়ার আহমদ জানান।

কুতুপালং অনিবন্ধিত শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর সহ একাধিক রোহিঙ্গা জানান, অপহরণকারী ও খুনিদের মধ্যে কুতুপালং শিবিরের ই-ব্লকে আল-ইয়াকিনের প্রধান মোঃ ইউনুছ এর নেতৃত্বে নুর কামাল (৩০), নুরুল ইসলাম (৩৪), মোঃ জাবের (৩২), মোঃ নুর (২৮), খুইল্যা মুন্না (৩২), ছলিম (২৬), কলিম উল্লাহ (২৮) ও বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তির মোঃ কালু (৩৫) ও মোঃ ইসলাম (৩৫) সহ অর্ধশতাধিক সশস্ত্র একটি সন্ত্রাসী গ্র“প প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে অপহরণ পূর্বক চাঁদা দাবী খুন গুম সহ বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ সব সন্ত্রাসীরা ৩টি খুন সহ অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত করেছে।

রোহিঙ্গা নেতা আবু ছিদ্দি জানান, ঈদের পরের দিন সন্ত্রাসীরা আমাকে এলোপাতাড়ী চুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা নিয়ে ফিরে এসেছি। একের পর এক অপরাধ সরকারের আইন কানুন মেনে এখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করি আতংক বিরাজ করছে। কারণ অপহরণকারী খুনিরা মিয়ানমারের তথাকথিত আল-ইয়াকিনের পক্ষ হয়ে রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা মূলত এসবের মূল নায়ক।

কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়োজিত পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক বিনোত পাল বলেন, গত রোববার সারারাত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ২ জন রোহিঙ্গা যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে। এখানো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের গ্র“পকে ধমানোর জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.