কমিউনিটি পুলিশিং সপ্তাহ’র সমাপনীতে ৩০ মাদকসেবীকে কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন

0

নিজস্ব প্রতিনিধি :  নগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং জানমালের নিরাপত্তা বিধানের প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে পুলিশ ও জনগণের যৌথ প্রয়াসে সোমবার শেষ হলো কমিউনিটি পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭। সপ্তাহব্যাপী কমিউনিটি পুলিশিং উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। জঙ্গিবাদ ও মাদকের কবল থেকে নগরবাসীকে রক্ষাকল্পে নগরবাসীর প্রতি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় কমিউনিটি পুলিশিং সপ্তাহের মধ্য দিয়ে। তাতে সাড়াও মিলেছে বেশ।

সোমবার(২২মে) সমাপনী দিনে ৩০ জন মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবী মাদকের ছোবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন এবং অন্যদের এ অন্ধকার জগত থেকে ফিরে আসার আহবান জানান। এসময় ওই ৩০ নারী-পুরুষকে স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসনে অর্থ সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশ। তিনজনকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুলিশের উদ্যোগে ব্যবস্থা করা চাকরির নিয়োগপত্র এবং বাকিদের হাতে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান।

নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে সিএমপি ও মহানগর কমিউনিটি-পুলিশিং কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির আহ্বায়ক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার।
সভায় প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে পরিবার ও সমাজের উপর মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘একটি পরিবারের কোনো সদস্য যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তবে সে নিজের সাথে সাথে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়।’ তিনি বাল্য বিবাহের কুফলতা তুলে ধরে কমিউনিটি পুলিশসহ সর্বস্তরের জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া সমাজের দুষ্ট মানুষের পাশাপাশি দুষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে তথ্য প্রদানের জন্য সকলকে অনুরোধ করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘জঙ্গিবাদের নামে মানুষ হত্যা করে পৃথিবীর কোনো সমাজে কোনো মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায় না।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশিং’র মাধ্যমে পুলিশি কাজের প্রতি জনগণের আগ্রহ বৃদ্ধি করে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। একটি শ্রেণি জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে দেশ পরিচালানার মাধ্যমে যে উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি করেছেন সে ধারাকে ব্যাহত করতেই এই জঙ্গিবাদ। জঙ্গিদের মদদ দাতাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বেহেস্তের টিকেট পাবে বলে যারা আপনার সন্তানদের ফুসলিয়ে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত করছে তারা নিজেরা কেন বেহেস্তের টিকেট কাটে না?’

সভাপতির বক্তব্যে এম এ মালেক ‘মাদকের কুফলতা’ এবং ‘কমিউনিটি পুলিশ’ সম্পর্কে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের লেখা তার সম্পাদিত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করবেন বলে জানান।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ‘মাদকের কুফলতা’ এবং ‘কমিউনিটি পুলিশ’ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে মোট ১৬ জন শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট ও ল্যাপটপ/নোটবুকসহ নগদ আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে পুনর্বাসিত ৩০ মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীর একজন হালিশহর নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুল। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক সাইফুল ছিলেন মাদকসেবী, পাশাপাশি বিক্রেতাও। প্রথমে গাঁজা সেবন করলেও পরে হেরোইন, ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে দুইবার জেল খেটেছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ছিলেন জামিনে বের হওয়ার পর থেকে। বেকার সাইফুলের কর্মসংস্থান করে দিতে তার পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রামের ‘হাই বিজ লিমিটেড’ নামে একটি পোশাক কারখানায় ফিনিশিং হেলপার পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে সাইফুলকে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী খালেদা বেগম। মাদক ব্যবসা করে আটটি মামলার আসামি তিনি। তার মেয়েও একই পথের পথিক। পুলিশ একাধিকবার হানা দিয়েও গ্রেফতার করতে পারে নি তাকে। বর্তমানে মাদক ব্যবসা ছেড়ে মুদি দোকান পরিচালনা করছেন। তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে তাকে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকার চেক।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কুসুম দেওয়ান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, মহানগর কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আবিদা আজাদ, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মোহাম্মদ হাসনী, মহানগর কমিউনিটি পুলিশ সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.