কর্মসংস্থানের প্রসারে জব ফেয়ার অনন্য ভূমিকা রাখবে

0

নিজস্ব প্রতিবেদক::চট্টগ্রামের বেসরকারি পলিটেকনিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র উদ্যোগে আগামী ১২ আগস্ট রেডিসন ব্লু’ চিটাগাং বে-ভিউ’র মেজবান হলে দিনব্যাপী জব ফেয়ার ২০১৭ উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলন অদ্য ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।

আগামী ১২ ই আগষ্ট ২০১৭ নগরীর রেডিসন ব্লু, চট্টগ্রাম বে ভিউ’র মেজবান হলে অনুষ্ঠিতব্য জব ফেয়ারের শুভ উদ্ভোধন করবেন মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি,মাননীয় মন্ত্রী “গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়”। সকাল ১০.০০ টায় উদ্ভোধন ও বিকাল ৪.০০ টায় সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র চেয়ারম্যান আহসান হাবিব। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাফর আহমদ ছাদেক, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল কবির, বাংলাদেশ সুইডিস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আশুতোষ নাথ, উন্নয়ন সংগঠক নোমান উল্লাহ বাহার, আইডিইবি, চট্টগ্রাম জেলা সদস্য সনাতন চক্রবর্ত্তী বিজয়, ইকো ফ্রেন্ডস এর সাংগঠনিক সম্পাদক কাইমুর রশিদ বাবু, সংগঠক বোরহান উদ্দিন গিফারী প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার ২ শতাংশ বাড়ানো গেলে প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮%। ৮% প্রবৃদ্ধি হলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া সম্ভব। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিবাচক ও সুদৃঢ়। উন্নত দেশে কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ প্রাধান্য এবং বৃত্তিমূলক ও শ্রমবাজার উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার দিকে অগ্রসরমান।
গবেষনায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালে মোট ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শ্রমশক্তি প্রয়োজন হবে। সুতরাং শিল্প ও সেবা খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে জনশক্তি তৈরীর জন্য কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রথাগত পদ্ধতিতে অদক্ষ, আধা-দক্ষ ও স্বল্পশিক্ষিত শ্রমশক্তি না পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনশক্তি রফতানি করা গেলে অত্যধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ^বাজারে শ্রমশক্তি রফতানিতে অন্যদের সমকক্ষ হতে চাইলে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের আগে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, বিশেষ করে কারিগরি তথা হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে প্রশিক্ষিত করে প্রেরণ করলে একদিকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে অন্যদিকে প্রবাসে চাকরি সন্ধানকারীরাও উপকৃত হবে।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, সর্বোপরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ হিসেবে কর্মসংস্থানের সংকট দৃশ্যমান। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন মতে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। ইউএনডিপির মতে, দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বেকার যুবকের সংখ্যা ১ কোটি ৩২ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন আই.এল.ও প্রতিবেদন অনুযায়ী বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০ টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২ তম। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সবচেয়ে অধিক। বর্ধিত জনসংখ্যাকে সমস্যা নয় বরং সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের বৃহৎ তরুণ সমাজকে মাদকাসক্তি, অসামাজিক কার্যকলাপ, বেকারত্ব , হতাশা আর উৎকণ্ঠা থেকে বের করে জীবনকে ইতিবাচকভাবে সাজিয়ে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবারে অবদান রাখতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি আবশ্যক। উদীয়মান অর্থনীতিতে সফল হতে হলে বাংলাদেশকে শুধু উৎপাদন কাঠামোতে নয় বরং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ঘটাতে হবে বহুমাত্রিক রূপান্তর। শিল্প খাতই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের মূল চালক- সেটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও তেমন। অর্থনীতি আরো গতিশীল করতে দেশে প্রয়োজন বহুমাত্রিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এক হিসাব মতে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক শিল্পায়ন করতে হবে।

বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুযোগ বৃদ্ধি, শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, সর্বোপরি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ সাধন এনআইটি জব ফেয়ার ২০১৭ এর অন্যতম উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কর্মজীবনে পদার্পণে দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান করতে জব ফেয়ার অনন্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে জব ফেয়ারে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ৭ হাজার চাকরিপ্রার্থী অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। দিনব্যাপি জব ফেয়ারে চাকরিপ্রার্থী ও চাকুরিদাতাদের সম্মিলন ঘটানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ১১.৩০ হতে বেসিক ট্রেনিং সেশন, বিকাল ২.৩০ হতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ জনশক্তি অপরিহার্য। কর্মসংস্থানের প্রসার প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষিতে জব ফেয়ারের মাধ্যমে আমরা চাকরিদাতা ও চাকরি প্রার্থীদের সম্মিলনের মাধ্যমে একে অপরের চাহিদা অনুধাবনে সহায়ক হবে, চাকরী প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ও নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি মনোনিবেশে প্রয়াস পাবে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.