‘খান আতাউর রহমান রাজাকার,এর প্রমাণ কী?’: ফারুক

0

সিটিনিউজ ডেস্ক :: প্রয়াত অভিনেতা, চিত্রপরিচালক খান আতাউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিতর্কের সূচনা হয়েছে সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার’।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার’-এর পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন খান আতার ঘনিষ্ঠ চিত্রনায়ক ফারুক। তিনি খান আতাকে যারা ‘রাজাকার’ বলে বিতর্ক তুলেছেন তাঁদের বিচার দাবি করেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে খান আতার মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নাট্যব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।

তিনি বলেন, ‘খান আতা অনেক বড় শিল্পী। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু খান আতা রাজাকার। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি না হলে খান আতা বাঁচত না। আমি গৌরব করে বলি, আমি না হলে খান আতা একাত্তরে মারা যায়, ১৬ ডিসেম্বরের পরে।’

“‘আবার তোরা মানুষ হ’- এটা নেগেটিভ ছবি। মুক্তিযোদ্ধাদের বলছে, আবার তোরা মানুষ হ। আরে তুই (খান আতা) মানুষ হ। তাই না! তুই তো রাজাকার ছিলি,” যোগ করেন বাচ্চু।

অনুষ্ঠানের কিছু অংশের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে চলচ্চিত্র জগতের কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।  

https://youtu.be/nIMvTn284Ak

সংবাদ সম্মেলনে নায়ক ফারুক বলেন, ‘খান আতাউর রহমান আমার কাছে পিতা ও বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন। আমাকে যেমন তিনি অনেক ভালোবাসতেন তেমনি আমিও তাঁকে শ্রদ্ধা করতাম। উনি আমার কাছে তাঁর জীবনের অনেক ঘটনা শেয়ার করতেন। আমিও মনোযোগ দিয়ে সেগুলো শুনতাম।’

“মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি আর্মিরা খান আতাউর রহমানের বাড়ি ঘেরাও করেন এবং তাঁকে একটা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। তখন খান আতাউর রহমান তাঁদের কাছ থেকে দুই মিনিট সময় নিয়ে এক বিশেষ ব্যক্তিকে ফোন করেন। সেই বিশেষ ব্যক্তি তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন কাগজটিতে স্বাক্ষর  করার।

তিনি খান আতাউর রহমানকে বলেছিলেন, ‘তুমি সই করো তা না হলে তোমাকে ও তোমার পরিবারকে তাঁরা মেরে ফেলবে।’ তখন খান আতাউর রহমান  বলেছিলেন, ‘আমি দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে যেতে পারব না।’ তখন সেই  বিশেষ ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘আমাদের কোরআনে আছে, জীবন বাঁচাতে মিথ্যা কথা বলা  যায়।’”

ফারুক বলেন, ‘এর পরই জীবন বাঁচাতে সেই কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন খান আতাউর রহমান। সেই কাগজে আরো ৫৫ জনের  স্বাক্ষর আছে। তাঁরা প্রত্যেকে দেশের গুণী ব্যক্তি ছিলেন। আসলে যুদ্ধের পর পাকিস্তানিরা বাঙালিদের বিভ্রান্তিতে রাখতে চেয়েছিলেন। যাঁরা কাগজে সই করেছিলেন তাঁদের অনেককেই তাঁরা ১৪ ডিসেম্বর মেরে ফেলেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের গুণী ব্যক্তিদের তালিকা আগে থেকেই পাকিস্তানিদের কাছে ছিল।’

খান আতাউর রহমান কখনোই রাজাকার হতে পারেন না- উল্লেখ করে নায়ক ফারুক বলেন, ‘আমরা কাদের রাজাকার বলি- যারা যুদ্ধের সময় লুটপাট করেছে, যারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অত্যাচার করেছে।’

ফারুক প্রশ্ন করেন, ‘খান আতাউর রহমান এমন কাজ কী করেছেন? যদি এর একটি কাজের প্রমাণ কেউ দিতে পারেন তাহলে আমরা মাথা নত করব। খান আতাউর রহমান রাজাকার এর প্রমাণ আছে কী?’

এ সময় খান আতাউর রহমানকে যিনি রাজাকার বলেছেন, তাঁর শাস্তি ও বিচার দাবি করেন নায়ক ফারুক।  

সংবাদ সম্মেলনে চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিশাল একটা পাহাড়ে যদি একটা বাচ্চা ঢিল মারে সেটার কিছুই হয় না। খান আতাউর রহমান কী ছিলেন- এটা আমরা জানি। তাঁর বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য আশা করা যায় না।’

https://www.youtube.com/watch?v=i39ZmWCvhnY

সংবাদ সম্মেলনে খান আতাউর রহমানের ছেলে সংগীতশিল্পী আগুন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটি প্রদর্শন করা হয়। ছবিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফারুক।

খান আতাউর রহমান একাধারে অভিনেতা, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক ছিলেন। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘জাগো হুয়া সাবেরা’। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবি পরিচালনা করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। তাঁর অভিনীত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটিও প্রশংসিত হয়। শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক হিসেবেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

অন্যদিকে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু মঞ্চনাটক নির্দেশক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘একাত্তরের যীশু’ ও ‘গেরিলা’। ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করে শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.