গভীর রাতে কি পড়ান শিক্ষক হামিদ?

0

মো: সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি::এক শিক্ষকের অপকর্মের কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ। শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ নানান নিপীড়নের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে মামলা করেছে ভুক্তভোগী এক অভিভাবক। তারপরও ঐ শিক্ষক রাতের আঁধারে শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেওয়ার কথা বলে এখনো যৌন হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত এ শিক্ষকের নাম আব্দুল হামিদ। তিনি রাঙামাটি শহরের আমানতবাগ দারুল উলুম রাঙামাটি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক(বর্তমানে বহিষ্কৃত)। তার নাম শুনলেই ছাত্ররা এখন আতঙ্কে থাকেন।

সম্প্রতি এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মাদ্রাসায় গিয়ে কথা বলি মাদ্রাসার বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে। এসময় শিক্ষার্থীরা জানায়, হামিদ হুজুরের দ্বারা অনেক ছাত্ররাই এখানে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখনো প্রায় রাতে হামিদ হুজুর মুখে গামছা পরা অবস্থায় এসে ‘বিশেষ ক্লাস’ আছে বলে ছাত্রদের তুলে নিয়ে যায় এবং খারাপ কাজ করে। এই বিষয়ে কোন প্রকার কথা বলতে নিষেধ করেছে মাদ্রাসার হুজুররা এমন তথ্য দিয়েছেন ছাত্ররা। এই বিষয় নিয়ে কথা বললে তাদের শাস্তি দেওয়ার হুমকিও দেয় বলে জানা যায়।

মাদ্রাসার এমন কাজের ভুক্তভোগী এক ছাত্র রহিম(ছদ্মনাম)। তার সাথে প্রায় রাতেই ‘বিশেষ ক্লাস’ এর কথা বলে যৌন নির্যাতন করে হামিদ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১৮ মার্চ হামিদকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে।

কিন্তু বহিষ্কারের পর সেই হামিদ এখনো মাদ্রাসায় গভীর রাতে মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়। আর ছাত্রদের তুলে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়। এ বিষয়ে কথা হয় ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রের সাথে।

এই ঘটনার বিবরণ জানা যায় দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র করিম(ছদ্মনাম) এর কাছ থেকে। করিম বলেন, আমাকে আমার মা-বাবা গত ২৬ জানুয়ারি এই মাদ্রাসায় রেখে যায়। পরে ২৮ জানুয়ারি আমাদের ক্লাস শিক্ষক মো: আব্দুল হামিদ হুজুর প্রায় রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে কোলে করে নিজ রুমে নিয়ে যায় এবং খারাপ কাজ করে। ঠিক একইভাবে ২৯ জানুয়ারি তিনি রাতেও আবার আমার সাথে এই ধরনের খারাপ কাজ করে। আমি চিৎকার করতে চাইলে তিনি আমাকে মাদ্রাসার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

এই ছাত্র আরো বলেন, শুধুমাত্র আমাকে নয়, আমার ক্লাসের অন্য অনেক ছেলের সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে। যদি কেউ কোন কথা বলে তবে তাকে মেরে ফেলার কথা বলতো এই হুজুর। প্রতিদিন হুজুর এভাবে এক এক জন ছেলের সাথে এমন খারাপ কাজ করতো। এছাড়া ক্লাসে সবাইকে খুব মারধোর করতো এই হুজুর।

সে আরো জানায় রহিম(ছদ্মনাম) নামে এক ছেলের সাথে এমন কাজ করায় হুজুরকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয় গত ১৮ মার্চ। কিন্তু এরপরেও গত ২৬ মার্চ মাদ্রাসার বার্ষিক দোয়া মাহফিল চলাকালে রাত্রিবেলা মুখোশ পরা একজন এসে আবারো আমার সাথে খারাপ কাজ করে। পরে ৩১ মার্চ আবারো রাত্রিবেলা এমন কাজ করতে এলে আমি তাকে ঘুষি মারি, পরে সে চলে যায় কিছু বলে না। কিন্তু এর আগে আমাকে চেপে ধরে খারাপ কাজ করা হতো। কোনভাবে নড়াচড়া করতে দিতো না।

ছেলে করিম(ছদ্মনাম) যৌন নির্যাতন হওয়ার কথা জানার পরে তার মা বাদী হয়ে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় ৩৭৭ প্যানাল কোর্ট ধারা অনুসারে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করার অপরাধে মামলা করেন।

এই প্রসঙ্গে এই অভিভাবক বলেন, মাদ্রাসায় একবার আমার ছেলের বন্ধুর এক অভিভাবক মাদ্রাসা আসলে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে আমাকে ফোনে কান্না করে এসব কথা জানায়। প্রথমে ভয়ে সে বলতে না চাইলেও আমি সাহস দেওয়ার পর সে আমাকে সবকিছু খুলে বলে। এরপর আমরা মাদ্রাসার বড় হুজুরকে জানালে হামিদকে নাকি মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দারুল উলুম রাঙামাটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো: শরিয়ত উল্লাহ বলেন, বিষয়টি জানার পরেই আমরা মাদ্রাসার কমিটি ও শিক্ষকদের ডেকে কথা বলেছি এবং হামিদ হুজুরকে বহিষ্কার করেছি। আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমাদের চিন্তায় আসেনি। আমরা চিন্তা করেছি নিজেদের মধ্যে সমাধান করে নেওয়ায় ভালো। কারণ এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সেই চিন্তায় আমরা তাকে বহিষ্কার করি।

সেই হুজুরের ছবি বা বায়োডাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কওমিদের এই নিয়ম এখনো হয়নি। সে কারণে আমরা বায়োডাটা ও ছবি রাখি নাই। ভবিষ্যতে আমরা এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করবো।

হামিদকে বহিষ্কার করার পরেও পুনরায় মাদ্রাসায় এমন ঘটনার অভিযোগকে তিনি অস্বীকার করে বলেন, বহিষ্কারের পর সে আর মাদ্রাসায় আসেনি। এখন যে অভিযোগ এটি মিথ্যা ও অপপ্রচার করার চেষ্টা শুধুমাত্র।

মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোতয়ালী থানার এসআই সৌরজিৎ বড়–য়া জানান, সকল প্রকার আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ভিকটিম’র মেডিকেল রিপোর্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি নিয়েছে, তার দুই বন্ধুও ঘটনার বিবরণ দিয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.