চট্টগ্রামে গ্রুপিং নির্মুলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দল সাজাচ্ছে

0

জুবায়ের সিদ্দিকী- জাতীয় নির্বাচন এখনো দুলে হলেও চট্টগ্রামে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাত দিয়েছে দলের দ্বন্দ্ব গ্রুপিং দুর করতে এবং বিএনপি সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দলকে সংগঠিত করছে। উভয় দলের টারগেট আগামী নির্বাচন। তিন মাসের মধ্যে দলের তৃনমুল পর্যায়ে অভ্যন্তরীন কোন্দল-গ্রুপিং মিটিয়ে দল গোছানোর জন্য সাংগঠনিক সফরে নেমেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে বিভিন্ন টিম কাজ শুরু করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করে এ টিমের সদস্যরা সাংগঠনিক প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এর উপর পরবর্তী করনীয় নির্ধারন করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

এ ক্ষেত্রে দলের অভ্যন্তরীন গ্রুপিং ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের সতর্ক করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম বিভাগে গ্রুপিং নিরসনে কাজ শুরু করেছেন। তিনি ৫টি জেলা সফর করেছেন। মুলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, এখন থেকেই গুছিয়ে তৃনমুল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে। দলের মধ্যে যাতে কোন বিভেদ না থাকে। ইতিমধ্যে মন্ত্রী ও এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে তৃনমুল মানুষের সাথে কথা বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সাথে সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড এলাকার জনগনের কাছে তুলে ধরারও নির্দেশনা দিয়েছেন।

মাসখানেক আগে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় দলের সাধারন সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নগর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে নিয়ে সাংগঠনিক বিষয়ে আলাপ করেছেন। চট্টগ্রাম বিএমএ নির্বাচনে দুটি পরিষদের পক্ষে দুই শীর্ষ নেতা অবস্থান নেয়ায় আওয়ামী লীগের গ্রুপিং ফের আলোচিত হয়। এ নির্বাচনের পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের দুই নেতার সাথে সাংগঠনিক বেশকিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিটি উপজেলায় গ্রুপিং-কোন্দল থাকলেও নগর আওয়ামী লীগ ও দক্ষিন জেলা সাম্প্রতিক সময়ে তা মারাত্বক আকার ধারন করেছে। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে দুরত্ব। বিভিন্ন সময়ে তা আলোচনায় এসেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায়, দক্ষিণ জেলা, বান্দরবান ও কক্সবাজারের গ্রুপিং নিরসনে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে। দক্ষিন জেলায় বছর খানেক আগে থেকে ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পক্ষে বড় একটি অংশ অবস্থান নিয়েছে।

চন্দনাইশ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম ও সাতকানিয়া লোহাগাড়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড.নদভী ছাড়াও তার সাথে রয়েছেন সাবেক সংসদস সদস্য, রাষ্ট্রদুত এবং জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা। অপরদিকে দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমানের পক্ষেও রয়েছেন পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী ও বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা।

জেলার চন্দনাইশ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ও আনোয়ারা উপজেলা ছাড়া বাকি ৪ উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিও রয়েছেন এই গ্রুপের সাথে। দীর্ঘদিন দক্ষিণ জেলার শীর্ষ পদে থাকায় সভাপতি মোসলেম উদ্দিনের পাল্লা ভারী হলেও দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল গ্রুপিং ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে অঙ্গসংগঠনেও। এই জেলায় দুটি ধারা আলাদাভাবে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও জাতীয় দিবসের অনুষ্টান আয়োজন করছেন। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও। জন্ম হচ্ছে তীক্ততার।

ইতিমধ্যে ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নেতৃত্বাধীন অংশটি দলের সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ’এর নেতৃত্বাধীন অংশটি মুলধারা হিসেবে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল গ্রুপিং কিছুটা শৈতল্য মনে হলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ সালামের বিরুদ্ধে একাট্টা অনেক নেতা। অনেক উপজেলায় নামেই আওয়ামী লীগ কার্যক্রমে নেই। নেতারা করছেন ঠিকাদারী ও ব্যবসা-বানিজ্য। দলের সুযোগ সুবিধার নাগাল পাচ্ছেন না তৃনমুল নেতাকর্মীরা। এর প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে। জানা গেছে. বান্দরবান জেলায় সাধারন সম্পাদক মুজিবুল হককে বহিস্কার নিয়ে কোন্দল বেড়েছে বহুগুন।

এ জেলার নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সুত্র। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির লোকজন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। গ্রুপিং নিরসনের পর পটিয়ায় বিশাল জনসভা করার পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন তারা।

দেশের দ্বিতীয় বৃত্তমর রাজনৈতিক দল বিএনপির রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে দল গোছানোর কার্যক্রম। আগামী নির্বাচন এবং দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সম্ভাব্য রায়কে মাথায় রেখে আন্দোলন চাঙ্গ করতেই দলকে গুছিয়ে নেয়া হবে বলে জানান নেতৃবৃন্দ। ওয়ার্ড পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করতে হাত দিয়েছেন নগর বিএনপির বর্তমান কমিটি। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ জানুয়ারী চকবাজার ওয়ার্ডে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। চকবাজার কিশলয় কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্টিত এ সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।

বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর নগর বিএনপির ৪১টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে ৩৯টি মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ায় সেগুলো বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়। বিলুপ্ত হওয়া ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি কমিটি ঘোষনা করা হয় ওই সময়। ৩৯ ওয়ার্ডের মধ্যে প্রথমে ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে দ্রুত কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানান নগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। জানা গেছে, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিন বছর মেয়াদ পুরন না হওয়া কাট্টলী ও উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কমিটি বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ৩৯টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সবুক্তগীন সিদ্দিকী মক্কীকে আহবায়ক করে ওই সময় ৫৩ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,’ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে।

এর মাধ্যমে তৃনমুল গনতন্ত্রের চর্চা আরও সুদৃড় হবে। একই সঙ্গে নগর বিএনপিকে আরও গুছিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুর হলো। গেল বছরের আগষ্ট মাসে ড. শাহাদাত হোসেন কে সভাপতি, আবু সুফিয়ানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আবুল হাশেম বক্করকে সাধারন সম্পাদক করে ৩ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষনা করে বিএনপি। একই সঙ্গে ঘোষিত হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। দলীয় সুত্র মতে, নগরীর ৩৯ টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করে এক মাসের মধ্যে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের ঘোষনা দিয়েছিলেন ডা. শাহাদাত। ঘোষনার প্রায় তিনমাস পর চকবাজার ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হল বলে জানান দলের নেতারা। দলীয় সুত্র মতে, ১৯৯৭ সালে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে সভাপতি, দস্তগীর চৌধুরীকে সাধারন সম্পাদক ও এফ এইচ খান ফজুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঘোষিত কমিটি ছিল পুর্নাঙ্গ কমিটি।

২০০৪ সালে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমকে আহবায়ক করে এক সদস্যের কমিটি হলেও সাংগঠনিক অবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৮ সালে পুনরায় আমীর খসরু মাহমুদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। কিছুদিন পর দস্তগীর চৌধুরী মারা গেলে সাংগঠনিক ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। ওই সময় আন্দোলন সংগ্রাম শুধু দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রীক দৈনন্দিন কর্মসুচীতে পরিনত হয়। সম্প্রতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পর নগর সাধারন সম্পাদক ডা. শাহাদাতকে সভাপতি করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এর পর ভেঙ্গে দেয়া হয় ওয়ার্ড কমিটি। সম্মেলনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.