চট্টগ্রামে পেয়ারার বাম্পার ফলন, হিমাগার না থাকায় শঙ্কা

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি:: চট্টগ্রামের পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে ৭ উপজেলায় পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে।

সংরক্ষণের হিমাগার না থাকায় পেয়ারা উৎপাদনে কৃষকরা শংকিত।

এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি অফিস ও পেয়ারা চাষীরা জানান।

দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারীরা সরবরাহ করে থাকে।

এখন পর্যন্ত কোনো হিমাগার বা পেয়ারা সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করেনি সরকার এই অঞ্চলের জন্য।

হিমাগার না থাকায় অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে অনেক কম দামে পেয়ারা বিক্রয় করতে হয় চাষীদের। এতে পেয়ারচাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

তাছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,

গত বছর প্রায় তিন হাজার ছয় শত একর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। এ বছর চাষ আরো বেড়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ উপজেলায় ছোট-বড় পেয়ারার বাগান আছে প্রায় ৬ হাজার ৮০০টির মত।

বেশির ভাগ বাগান গড়ে উঠেছে পাহাড়ে।

পটিয়া-চন্দনাইশ, কাঞ্চননগর, হাশিমপুর. ছৈয়দাবাদ, রায়জোয়ারা, ধোপাছড়ি, দোহাজারী শঙ্খ নদী পাশ ঘেষে।

পটিয়া উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, খরনা, কচুয়াই ইউনিয়নের শ্রীমতি খাল পাশে।

বাঁশখালী উপজেলার, কালীপুর, বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা পাহাড়ে, সাতকানিয়া উপজেলার পদুয়া, বাজালিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার পূর্বাংশের পাহাড় এবং সমতল ভূমিতে পেয়ারা চাষ ভালো ফলন হয় বলে চাষী সূত্রে জানা গেছে।

তবে বিশ্বে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে কাজী, আঙগুরী, বাউকাবিরি— এ চার জাতের পেয়ারা বেশি পাওয়া যায়।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার একর বনভূমিকে যদি পেয়ারা চাষের আওতায় আনা যায়, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমান পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

এর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা যায়,

পটিয়া ও চন্দনাইশের অধিকাংশ পেয়ারার মাঝেখানে লাল আবরণ থাকে। দেশজুড়ে এ লাল পেয়ারার খ্যাতি রয়েছে।

তাছাড়া কিছু বাগানে ১২ মাস পেয়ারা পাওয়া যায় এইখানে। কৃষক এই পেয়ারাকে বারমাসি পেয়ারা নামে ডাকে।

তবে চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলায় পেয়ারা সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। তাই এর প্রচুর চাহিদাও বেশি রয়েছে দেশজুড়ে।

দক্ষিন চট্টগ্রামের পেয়ারা চাষী একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন,

তারা দাবি করেন শুধু মাত্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে বছরে ৪০ কোটি টাকা পেয়ারা উৎপাদিত হয়।

সরকার বা কৃষি বিভাগ পেয়ারা চাষীদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি।

অপার সম্ভাবনাময় পেয়ারা চাষে সরকারে সহযোগিতা কামনা করেন এ অঞ্চলের পেয়ারাচাষী ও ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ২০টি স্পটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পেয়ারা বেচাকেনা হয়।

হাটে আসা পেয়ারা চাষীরা জানান, শুধু রৌশন হাট ও কমল মুন্সীর হাটে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার বারেরও বেশি পেয়ারা বিক্রি হয়।

পটিয়ার কমল মুন্সীর হাট, চন্দনাইশ উপজেলার বাদমতল, গাছবাড়িয়া খান হাট ও বাগিচা হাটে চাষিরা পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা নিয়ে আসে ভারে করে।

সেখান থেকে সংগ্রহ করে বেপারিদের হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায় এই পেয়ারা।

বংশপরম্পরায় পেয়ারা চাষ ও বিক্রিতে নিয়োজিত এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শধু চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাই নন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ক্রেতারা ছুটে আসেন দক্ষিন চট্টগ্রামে।

একটি পেয়ারা খুচরা বাজারে ২ থেকে ৮ টাকায় পর্যন্ত বিক্রয় হতে দেখা যায়।

চন্দনাইশ উপজেলার পেয়ারা চাষী কৃষক সামশুল আলম মেম্বার বলেন,

আমি নিজের ৩০০ শতক জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। যাতে বাগান সংখ্যা হচ্ছে ৮টি। বাম্পার ফলন হয়েছে।

একটি বাগান থেকে ২-৩ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করা সম্ভব বছরে।

বর্তমানে প্রতি ভার পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার এবং ১২শত টাকায়। এক ভারে ৫০০ থেকে ৬০০ পেয়ারা থাকে।

পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা ও তৌফিক হোসেন খান জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া ও চন্দনাইশে সব চাইতে বেশি পেয়ারা উৎপাদিত হয়।

এ বছর উৎপাদন অনেক ভালো। তবে বাগান পরিচর্যা ও অন্য কতিপয় বিষয়ে মনোযোগ দেয়া গেলে এ উপজেলা গুলোতে পেয়ারার উৎপাদন দ্বি-গুণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশে যে কয়টি পেয়ারার জাত রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে চন্দনাইশ ও পটিয়ার পেয়ারা বেশি সুস্বাদু। এই অঞ্চলের পেয়ারা চাষীদের দাবির কথা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

পেয়ারা বিষয়ে ডাক্তাররা বলেন, দাঁতের ব্যাথার জন্য পেয়ারা খুব উপকারী। পেয়ারা গাছের চাল ও শেকড় আমাশয় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

মুখের রুচি বাড়াতে পেয়ারা খুব ভালো। পেয়ারার পুষ্টির সাথে রয়েছে ভেষজগুনও।

একটি পেয়ারাতে রয়েছে একটি কমলার চাইতে চারগুন ভিটামিন সি। তাই বিশ্বজুড়ে পেয়ারার গুনি ফল হিসাবে স্বীকৃতি রয়েছে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.