চট্টগ্রাম এল এ শাখার নজরুল ও করিমের অবৈধ সম্পদের খতিয়ান !

0

গোলাম সরওয়ার: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখায় চলছে ঘুষের মহোৎসব। এই শাখার ছোট বড় অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে। এখানে রয়েছে ঘুষখোরদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট চক্রের হোতারা ছোট পদে থাকলেও একেক জন কোটিপতি বনে গেছেন। সরকারী জমি অধিগ্রহন কার্যক্রমের জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেবার কাজ কারে এই এল এ শাখা।

অভিযোগে প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্থ জমি মালিকদের টাকা পাওয়ার আবেদন, চেক গ্রহণসহ জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এল এ শাখায় আসা লোকজনদের হয়রানি করছে প্রতিনিয়ত। চাহিদামত টাকা(ঘুষ) না দিলে ক্ষতিপূরনের টাকা সোনার হরিণে পরিনত হয়। মাসের পর মাস কাগজপত্র, ফাইল আটকিয়ে রাখা হয়। এ নিয়ে আজকের সূর্যোদয় ও বিভিন্ন দৈনিকে বিস্তর লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দুদক নীরব রয়েছে।

জানা গেছে, এল এ শাখার চেইনম্যান আহমেদ করিম, নজরুল ইসলাম ও মোঃ হানিফের চট্টগ্রাম শহর ও গ্রামে রয়েছে বিলাস বহুল অট্টালিকা, দোকান। এরা জেলাপ্রশাসনের এ শাখাকে নিজেদের ঘুষ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিনত করে রেখেছেন।

তাদের বিরুদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী এক আকষ্মিক ভিজিটে যান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এল এ শাখায় আগত ভূক্তভোগীরা মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে সংঘবদ্ধ এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় মাননীয় মন্ত্রী করিম, নজরুল ও হানিফের নাম ধরে জিজ্ঞেস করেন, এরা কই। তখন উপস্থিতরা বলেন, এরা অফিসে নাই। সাথে সাথে মন্ত্রী এই তিনজনকে ষ্ট্যান্ড রিলিজ করার আদেশ দেন।

এল এ শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে বড় প্রকল্প গুলো এল এ শাখার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের রাতারাতি পয়সাওয়ালা বানিয়ে দিয়েছে। গত ৫/৬ বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্থ ভুমি মালিকদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহনের মোট টাকার ১৫% হারে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। না দিলে ক্ষতি পূরনের টাকা পাওয়া যায় না। এল এ শাখায় ছোট পদে থাকা কর্মচারীরাই নিয়ন্ত্রন করে সিন্ডকেট। এরা উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, দুদুক সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভুগীরা ভূমি প্রতিমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এ উদ্যোগ চলমান রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এল এ শাখার চেইন ম্যান আহমেদ করিম তার গ্রামের বাড়ী বাঁশখালী উপজেলার চেচুরিয়া গ্রামে রহিমা আলিয়া মাদ্রাসার ঠিক পূর্ব পাশে নির্মান করেছেন ৬ তলা বিশিষ্ট আলিশান অট্টালিকা। গত কয়েক বছরের মধ্যে এলাকায় দানবীর ও সমাজ সেবক নামে নামডাক হয়েছে। গত মাস দুয়েক আগে এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের ভূরিভোজ দিয়ে তার ঘুষের টাকাকে হালাল করার চেষ্টা করেছেন। চট্টগ্রাম রিয়াজ উদ্দিন বাজার, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স এ তার মালিকানাধীন ৪টি দোকান রয়েছে। তার ভাই ও আত্মীয়রাই এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে।

এল এ শাখার আর এক চেইনম্যান নজরুল ইসলাম বাবুর বাড়ি চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার মদন হাট এলাকায়। চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সে নীচতলা ও ২য় তলায় ফ্যামিলি ফেয়ার, অনুকা নামে ৩ টি দোকান রয়েছে। অফিস শেষে দোকানে এসে সময় দেন বলে জানান তার দোকানের কর্মচারী মামুন। তার গ্রামের বাড়ীতে রয়েছে তার ২ টি পাকা দালান। এল এ শাখার আর এক দালাল আব্দুল্লাহ এখানে এসে তাকে সময় দেন ।

প্রতিমন্ত্রীর তাৎক্ষনিক বদলির আদেশ পাওয়া আর এক কর্মচারী মোহাম্মদ হানিফের বাড়িও হাটহাজারী এলাকায়। অল্প সময়ে অঢেল টাকা বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেছেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, এল এ শাখার অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এ শাখাকে ঢেলে না সাজালে দুর্নীতির গহবর থেকে বের করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা।

ভূমি অধিগ্রহনের টাকা নিতে আসা বাঁশখালীর জিয়াউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজের জমি সরকার অধিগ্রহন করে। বর্তমানে আমি ভূমিহীন বল্লেও চলে। আমার জমি বাবদ আমি ৮ লাখ টাকা পাই। এই টাকা উত্তোলন বাবদ ১৫ % হারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক এগেভাগেই নিয়ে নেয় চেইন ম্যান করিম। পরে ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখি আমার নামে কোন টাকা জমা হয়নি। চেক পাস হওয়ার আগে এভাবে চেক নিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে করিম সহ আরো কয়েকজন।

অন্য একটি সূত্র জানায়, মহেশখালী থেকে আনোয়ারায় আসা গ্যাসের পাইপ লাইন বসানো নিয়ে এল এ শাখার ঘুস সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। বসত বাড়ীর উপর দিয়ে গ্যাসের পাইপের লাইন যাবে এ ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছে। টাকা দিলে বসত ভিটার বাইরে দিয়ে যাবে টাকা না দিলে বসত বাড়ী ভাংগা পড়বে। এ ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছে অহরহ। পাইপ লাইন এলাকায় খোঁজ নিয়ে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে ভুক্তভূগীরা জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালেও ভূমি প্রতিমন্ত্রী একবার এল এ শাখা ভিজিট করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.