চট্টগ্রাম ফিশারীঘাট রাঘব বোয়ালদের পেটে

0

গোলাম শরীফ টিটু : চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ফিশারীঘাট মৎস্য আড়ত বাকলিয়া থানাধীন চাক্তাই পাইকারী মৎস্য বাজারে স্থানান্তর নিয়ে তুলকালাম কান্ড হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারী বৃধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের মহড়া, পুলিশি সহযোগিতায় আড়ত স্থানান্তর, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও মানবন্ধন হয়েছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের অভিযোগ, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে কর্ণফুলী নদীতে ভরাট হওয়া তীরে নির্মিত পাইকারি মৎস্য বাজারে ৭ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা দিয়ে দোকান নিতে হচ্ছে।

কিন্তু স্থানীয় জেলে সম্প্রদায় ও বরফ বিক্রেতাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তারা এখন না খেয়ে পথে বসতে যাচ্ছেন। অপরদিকে মৎস্য আড়ত সমবায় সমিতি নেতৃবৃন্দ বলছেন,’ সরকারী নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সহযোগিতায় পাইকারী মৎস্য আড়ত নতুন নির্মিত স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে আগের সব শ্রমিকরা কাজ করতে পারবে। কারো ক্ষতিগ্রস্ত হবার কথা নয়’। জানা যায়, সুদীর্ঘকাল থেকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার ফিশারীঘাটে মাছের পাইকারী বাজার বসে আসছিল। এখানে মাছের আড়তে কিছু লোক বরফ বিক্রি, নদী থেকে মাছ খালাস, আড়তে মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

বিশেষ করে স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন মাছের আড়তের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। আগে এসব গরীব পরিবারের মেয়েরা স্থানীয় গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে এসজেডএস গার্মেন্টস নামের ওই প্রতিষ্টানটি বন্ধ হয়ে গেলে নারীরা বেকার হয়ে পড়ে। এতে করে জেলে পরিবারগুলো পুরোপুরি মাছের আড়তের কাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। গত দুই বছর আগে থেকে চাক্তাই এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নতুন মৎস্য আড়ত নির্মান শুরু করে জাতীয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি:। অন্যদিকে কর্নফুলী নদীর ভরাট হওয়া পাড়ে অবকাঠামো নির্মান শুরু হলে বেশ কয়েকটি রিট মামলা হয়।

আবার নির্মিত পাইকারী বাজারের স্থানটিও বন্দর কর্তৃপক্ষের হওয়াতে তারাও এই সব রিট মামলার পক্ষ হয়। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারীও একটি রিট মামলায় ওই স্থানে স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। এদিকে কয়েকদিন আগে থেকেই দ্রুত আড়তগুলো নতুন নির্মিত বাজারে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে মৎস্য আড়ত সমবায় সমিতি ও সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি লি:। সকাল থেকে ওই সমিতির সদস্য আড়ত মালিকদের নতুন পাইকারী বাজারে স্থানান্তর করা শুরু হলে ওখানকার জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। তারা প্রথমে আড়ত স্থানান্তরে বাধা দিলেও পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

দুপুর ১২টার দিকে কয়েকশত নারী পুরুষ জমা হয় ফিসারীঘাটের পুরাতন আড়ত এলাকায়। দুপুর একটার দিকে কয়েকশত নারী পুরুষ মানববন্ধন করেন। এখানকার জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ’স্থানীয় মৎস্য আড়ত সমবায় সমিতি হাজী মোহাম্মদ আলী, সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল সরকার, নুর হোসেন ও নতুন মার্কেটের পুলক খাস্তগীর দোকান প্রতি ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে মাত্র তিন লাখ টাকার দলিল দিয়েছে। যে কারনে টাকার অভাবে অনেকে ওখানে দোকান কিনতে পারেনি। মৎস্য আড়ত সমবায় সমিতির সদস্য সামশুল ইসলাম জানান,’নতুন নির্মিত বাজার নিয়ে হাইকোর্টে কয়েকটি রিট মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় ওই স্থানে স্থগিতাদেশও রয়েছে। সর্বশেষ চলতি ১৪ ফেব্রুয়ারীও একটি রিট মামলা হয়েছে।

এটাতেও স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ফিশারীঘাট থেকে মাছের আড়ত স্থানান্তর করেছে। আবার নতুন পাইকারী বাজারে সকাল ১১টা থেকে ব্যানার সাটিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে, বাজনা বাজিয়ে নতুন মৎস্য আড়তের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া দেখা যায়। অনেকে পুরাতন আড়ত থেকে নিজেদের মালামাল নিয়ে নতুন আড়তে উঠে। দুপুর দেড়টার দিকে চসিক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন নতুন পাইকারী বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে নতুন বাজারটি উদ্বোধন ঘোষনা দেন।

সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি লি: সাধারন সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন,’ সরকারি নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় নতুন করে নির্মিত পাইকারী বাজার আজ থেকে শুরু হয়েছে। সমিতির ১০৪ জন সদস্য তাদের আড়ত নিয়ে চলে এসেছে। তারা পুরনো দোকানের ব্যবহার্য মালামাল সরিয়ে নিয়ে আসছেন। দোকান প্রতি ৭-১২ লাখ টাকা নেিয় ৩ লাখ টাকার দলিল দেয়ার বিষয়ে জেলে সম্প্রদায়ের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন,’আমরা সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা নিয়েছি। সমিতির বাইরে কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। নতুন পাইকারী বাজারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে জানান।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের কর্নফুলী নদীর তীরঘেঁষে প্রায় চার একর জায়গার উপর স্থাপন করা হয়েছে মৎস্য বাজার। পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমোদনহীন এ প্রকল্প এলাকা কর্নফুলী নদীর আগের সীমানার ভেতরেই পড়েছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর নামে নদী ভরাট করে গড়ে ওঠা জায়গায় এ পাইকারী মৎস্যবাজার নির্মান করেছে জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতি। আর জমিটি ইজারা দিয়েছে সরকারী সংস্থা।

ফিশারী ঘাটের পাইকারী বাজারটি এখানে স্থানান্তরের ফলে কর্নফুলীর ন্যাব্যতা সংকটের পাশাপাশি নদী দখল ও দুষণ প্রাতিষ্টানিক রুপ নিবে বলে অনেকের আশঙ্খা। এদিকে নদী ভরাট, পার্ক নির্মান, পাইকারী মৎস্যবাজার, পাকা সড়ক ও সীমানা প্রাচীর করায় চাক্তাই, রাজাখালী ও মরিয়ম বিবি নগরীর তিনটি বানিজ্যিক খাল এখন মৃতপ্রায়। এসব খাল দিয়ে ফিশিং বোট, ট্রলাল, সাম্পান, নৌকা সহ সব ধরনের পন্যবাহী নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.