চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় ১২৬ নিহত : হতাহত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে

0

সিটিনিউজবিডি ডেস্ক :   চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায়; পাহাড় ধসে হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ। টানা বর্ষণে পাহাড়ে মৃত্যুর মিছিল ক্রমান্বয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। তিন জেলায় এখন পর্যন্ত ১২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাহাড় ধসে আজ মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ১১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৮৯ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন ও বান্দরবানে সাতজন রয়েছে।

চট্টগ্রাম : টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামসহ রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড় ধসে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার জঙ্গল বগাবিল এলাকায় ১৬ জন, চন্দনাইশের ধোপাছড়ি এলাকায় চারজন ও বাঁশখালীতে একজন নিহত হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয়জন।
আজ ভোরে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে হানিফ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায়, পাহাড়ি ঢলে শঙ্খ ও সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

চন্দনাইশ সাঙ্গু নদীর পানি

রাঙামাটি : পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি শহরে চার সেনা সদস্যসহ ৪৫ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৪ জন, জুড়াছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় দুজন করে নিহত হয়েছে। জেলা প্রশাসনে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আজ রাত ৯টায় এই তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছে। এ ছাড়া কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে একজন ও গাছচাপায় একজন নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাশের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরে ৪৫ জন মারা গেছে। শহরের প্রবেশপথ মানিকছড়ি এলাকায় মারা গেছেন চার সেনা সদস্য। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তানভীরের লাশ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে এসেছে। এ ছাড়া আরো তিন সেনাসদস্য এখানে ভর্তি হয়েছেন।

রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৮৯ জন নিহত

শহরে নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক ও চুমকি দাস। তাঁরা শহরের যুব উন্নয়ন ও ভেদভেদি এলাকায় বসবাস করতেন।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান মানিকছড়ির ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড় ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহত সেনা সদস্যরা হলেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও বগুড়ার আদমদিঘীর সৈনিক মো. শাহিন আলম।

এদিকে, রাঙামাটি শহরের বেশির ভাগ এলাকাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বাড়তি ইউনিট কাজে যোগ দিতে আসছে।

বান্দরবান : টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। আজ মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ। নিহতরা হলেন লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪), আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তাঁর মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং কালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)।

পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।

পাহাড়ি ঢলের কারণে বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.