জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রেড লেডি পেপে চাষ

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ: থাইওয়ানে উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির পেপে রেড লেডির আবাদ এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চন্দনাইশের কৃষকেরা এ পেপে আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে অনেকের। রেড লেডি পেপে আবাদ করতে বাড়তি জমির প্রয়োজন হয় না। পরিকল্পনা মোতাবেক আম, লিচু, আদা, আনারস, পেয়ারাসহ যেকোন বাগানে সাথি ফসল হিসেবে এ পেপে আবাদ করা যায়। একটি পেপে গাছ তিন বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তাই এ পেপের আবাদ কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উন্নত প্রজাতির এ পেপে আকারে বেশ বড়, স্বাদে-গন্ধে দেশীয় জাতের মত। একটি পেপে চারা রোপনের ম্রাত ছয়মাস পর থেকে একাধারে তিন বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।

এগ্রি কনসান নামের একটি বেসরকারি আমদারী কারক প্রতিষ্ঠান দেশে সর্বপ্রথম থাইওয়ান থেকে রেড লেডি প্রজাতির পেপে বীজ আমদানি শুরু করে। ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প পরিমাণে বীজ আমদানি শুরু করলেও তখন থেকে তা বাজারজাত করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হতো। বর্তমানে দেশব্যাপী কৃষকদের মাঝে রেড লেডি পেপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বীজ আমদানিও বেড়েছে প্রচুর।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কমপক্ষে শতাধিক কৃষক রেড লেডি প্রজাতির পেপে আবাদ করেছে। ছৈয়দাবাদের বাবুল দাশ, বৈলতলীর আলম বলেছেন, লক্ষাধিক টাকা খরচ করে চার শতাধিক রেড লেডি প্রজাতির পেপে চারা রোপন করে। ইতিমধ্যে দুই লক্ষাধিক টাকার পেপে বিক্রি করেছেন। আগামী বছর তিন থেকে চার লক্ষ টাকা এবং তৃতীয় বছর তার চেয়েও বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

তাদের হিসাব অনুযায়ী রেড লেডি পেপের বাগান করতে জায়গার পরিমাণ অনুযায়ী এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। উৎপাদনপ খরচ বাদ দিয়ে তিন বছরে তার তিনগুণ টাকা আয় করা যাবে। অপরদিকে চাষী নুরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি বাড়ীর পাশে ১শটি রেড লেডি প্রজাতির পেপে চারা রোপন করে প্রথম বছরে ১ লক্ষ ২২ হাজার টাকার পেপে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। পেপেগুলো খুব সুস্বাদু ও বড় হওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যায়।

এগ্রি কনসার্ন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ আবদুল মান্নান বলেছেন, রেড লেডি প্রজাতির খুব দ্রুত কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি রেড লেডি পেপে চারা উৎপাদনে তিন টাকা থেকে সাড়ে তিন টাকার বেশি খরচ পড়ে না। চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও এখন খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলায় এ পেপের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এখন প্রতি বছর চট্টগ্রামে ২৩ কেজির উপরে এ প্রজাতির বীজ বাজারজাত করে থাকেন। সারা দেশে বাজারজাত করা হয় ৫০ কেজি বীজ।

প্রতি বছরে রেড লেডি প্রজাতি বীজের চাহিদা বেড়ে চলেছে বলে তিনি দাবী করেন। তাদের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম বীজ দিয়ে চার একর জমিতে পেপে বাগান করা যায়। সে হিসেবে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে ৯শ ২০ একর, সারা দেশে ২ হাজার একর এ পেপে বাগান। প্রতি একর বাগানে প্রতি বছর ২০ থেকে ২১ টন পেপে উৎপাদন হয় বলে তিনি জানান। আর পাইকারী প্রতি কেজি পেপে বর্তমানে বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি বছর চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার রেড লেডি পেপে উৎপাদিত হয়ে আসছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক আমিনুল হক চৌধুরী বলেছেন, পেপে একটি আদর্শ এবং সুস্বাদু ফল। এটি সবজি ফল হিসেবেও খাওয়া যায়। দেশী প্রজাতির পেপের পাশাপাশি এখন রেড লেডি প্রজাতির পেপে চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। আর দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.