দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের জন্য চলছে জমি অধিগ্রহণ

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ::পর্যটকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, পর্যায়ক্রমে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় চলছে জমি অধিগ্রহণ এবং এ্যালাইনমেন্ট চুড়ান্ত পর্যায়ে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের রেল ষ্টেশন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণ করার জন্যেই সেখানে আইকনিক ইন্টারন্যাশনাল রেল ষ্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঝিনুক আকৃতির এ ষ্টেশন দেখলেই বুঝা যাবে এটি একটি সমুদ্র সৈকতের ষ্টেশন। ষ্টেশনটির অবস্থান হবে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের বিপরীতে চৌধুরী পাড়ায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে রেল ষ্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে। প্রথমে রেললাইন নির্মাণ হবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত। রামুতেই হবে ঝংশন। আর সেখান থেকে একটি রেললাইন যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। তখন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে পৌছা যাবে কক্সবাজারে। পরবর্তী সময়ে আরেকটি রেললাইন মিয়ানমারের ঘুমধুমে যাবে। ২০২০-২০২২ সালের মধ্যেই এ রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হবে বাংলাদেশের রেলপথ। রেলওয়ের নেটকওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত।
বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে একটি। তাই এ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই পুরোদমে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামে জড়ো হবে। এ প্রকল্পের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থাপনা ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার রেল ষ্টেশন।

সূত্রটি আরও জানা যায়, প্রস্তাবিত রেললাইনের রোড এ্যালাইনমেন্ট পিলার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। চলছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। উঁচু-নিচু টিলা, বনভূমি, সমতল, সবুজ প্রান্তর পেরিয়ে রেললাইনটি শেষ হবে সমুদ্র তীরের একেবারে নিকটে। এ জন্য ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের অনাপত্তি পত্রও নেয়া হয়েছে। এ রেললাইনে ১৪০ কিলোমিটার নতুন “ডুয়েল গেজ” রেলপথ নির্মাণ করা হবে। বনভূমির যেসব স্থানে বন্যপ্রাণি বা হাতির বিচরণ এলাকা, সে সব স্থান চিহ্নিত করে প্যাসেজ নির্মাণ করা হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকবে ৯টি রেল ষ্টেশন। আর এগুলি নির্মিত হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার রেল ষ্টেশনের জন্য চৌধুরী পাড়ার যে স্থানটি চিহ্নিত করে রেখেছেন, তা এখনো ধানি জমি। রামু থেকে চৌধুরী পাড়ায় কক্সবাজার ষ্টেশনে আসতে লাইনের দুটি স্থানে সড়ক ক্রসিং থাকবে। মে মাসে এডিবি’র সাথে প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে জুন-জুলাই মাসে শুরু হবে রেললাইনের কাজ। ইতিমধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ দুইভাগে বিভক্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র বাছাই শেষে সম্মতির জন্য এডিবির নিকট পাঠানো হয়েছে। কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রস্তুতি চলছে। এডিবির সম্মতির পর প্রাইজ বিল্ডিং করা হবে। সর্বনিন্ম দরদাতা ঠিক করে পুনরায় এডিবিতে পাঠানো হবে। তারপর মন্ত্রীসভায় চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হবে। মন্ত্রীসভা অনুমোদন করলে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হবে। প্রথম ভাগে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ, রেলের সিগন্যালিং ও টেলি কমিউনিকেশন কাজ করা হবে। পরে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ এবং কক্সবাজার রেল ষ্টেশন নির্মাণ করা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.