নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের ৪০গ্রাম প্লাবিত

0

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,কক্সবাজার :: সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও ক·বাজার সদর উপজেলার ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে অত্যাধিক জোয়ারের কারণে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

জোয়ারের সময় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি, পেকুয়া বকশিয়া ঘোনা উত্তর ও পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধে দুটি আলাদা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।

এছাড়াও বেড়িবাঁধ উপচে সাগরের পানি ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

মহেশখালী ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সাগরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙা বেড়িবাঁধের অংশ পানি ঢুকে উত্তর সুতুরিয়া, ভারতঘোনা, শরইতলা, পন্ডিতেরডেইল ও বেগুনবনিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।’

ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান আরো বলেন, ‘চকরিয়ার মানিক চেয়ারম্যান ও মাতাবাড়ির মানিক ঠিকাদার ধলঘাটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ নেন। কিন্তু তারা ঠিক মতো কাজ করেনি। এতে করে অল্প পানি বাড়লেই ভেঙে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার লিখিত অভিযোগ করেও কাজ হয়নি।’

মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মাহমুদুল্লাহ জানান, ‘উত্তর রাজঘাট ও দক্ষিণ রাজঘাটের বেড়িবাঁড়ের ৭০ নং ফোল্ডার ভাঙা ছিল। সাগরের পানি বেড়ে ওই পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে উত্তর ও দক্ষিণ রাজঘাট, ফুলজানমোরা, বানিয়াকাটা প্লাবিত হয়েছে। পশ্চিম দিকে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ দিয়েও পানি ঢুকে পড়ায় এতে সাইট পাড়া প্লাবিত হয়েছে। সুইচ গেইট বন্ধ থাকায় পানি আটকে রয়েছে। এতে মানুষ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানিয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারা কাজে ফাঁকি দিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। ঠিক মতো কাজ করেননি। এতে করে অল্প পানি বাড়লেই ভেঙে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার লিখিত অভিযোগ করেও কাজ হয়নি।

পেকুয়া উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানিতে প্লাবিত হয়েছে রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনা ও নতুন ঘোনা গ্রাম। এতে ওই এলাকার চিংড়ি ঘের ও কাঁচা বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রাজাখালী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, দিনের বেলায় জোয়ারে পানি প্রবেশ করায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর বলেন, বেড়িবাঁধের এসব অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের অবহেলার কারণে বকশিয়া ঘোনা এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ক·বাজার শহরের নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, সমিতি পাড়া ও সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের বৃহত্তর গোমাতলীর ৮ গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

শনিবার থেকে গ্রামগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এতে এসব গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোপূর্বে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মহেশখালীর চ্যানেল সংলগ্ন বেড়িবাঁধ আর সংস্কার করা হয়নি। এই কারণে তখন থেকে পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীর (৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড) ৮টি গ্রামের জোয়ার-ভাটা চলে আসছে।

গ্রামগুলো হলো, উত্তর গোমাতলী (রাজঘাট), গাইট্টাখালী, রাইন্ন্যাপাড়া, চরপাড়া, পূর্বগোমাতলী, কোনাপাড়া, আইছিন্নপাড়া, পশ্চিম গোমাতলী। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বিদীর্ণ এলাকার চিংড়িঘের। পান্দিবন্দি থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দা এস.এম সৈয়দ উল্লাহ আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গোমাতলীর মানুষ পানির ভেতরে বসবাস করছে। জোয়ারের সময় পানিতে সব কিছু প্লাবিত হয় আর ভাটার সময় পানি নেমে যায়। এভাবে সামাহীন দুর্ভোগ নিয়ে এখানকার মানুষ জীবন যাপন করলেও কতৃপক্ষের কোনো ধরণের নজরদারি নেই।

পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সাগরে পানি বাড়ায় গোমাতলীর গ্রামগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রাতে জোয়ারের পানি আরো বাড়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই লোকজন উঁচু এলাকায় সরে আসতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য কতৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকবার লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অনুরূপভাবে কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, মুন্সির ডেইল, আলী আকবর ডেইল, চরধুরুং সহ বিভিন্ন স্থানে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

এছাড়াও কুমিরা ছড়ার জেলে পাড়া, আনিছের ডেইল, হায়দার বাপেরপাড়া, কাহারপাড়া, তেলি পাড়া, কৈয়ারবিলের বেড়িবাঁধের বাইরে ৬-৭শ’ পরিবারের বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি সরাসরি ঢুকে পড়ছে।

এসময় নিম্ন এলাকার লোকজন পার্শ্ববর্তী আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

৯১’র ঘূর্ণিঝড়ের পর কুতুবদিয়ার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে উলে­খযোগ্য বরাদ্দ মিলেনি। তাই দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় কোন বেড়িবাঁধ নেই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.