নির্বাচনমুখী সরকার: চট্টগ্রামে বঞ্চিত হতে পারেন ৫ এমপি

0

জুবায়ের সিদ্দিকী- 

চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বেশ নড়েচড়ে উঠেছেন। এসব সাংগঠনিক জেলায় দায়িতে ¡ নিয়োজিত দলের সংসদ সদস্যরাও তৃনমুলে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হচ্ছেন সবাই। জানা গেছে, ’সংবিধান মতে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারীর পুর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ার কথা। সে হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ার কথা। সে হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছরের কাছাকাছি সময় বাকি। এ বাকি সময়কে কাজে লাগাতে অনেকটা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ।

দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কেন্দ্রিক কয়েক দফা বক্তব্য দিলে তৃনমুল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আগাম নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশেও ভোট কেন্দ্রিক আলোচনা নেতাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। এমন তৎপরতাকে অনেকে আগাম নির্বাচনের আভাস বলেও ধারনা করছেন। দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, বিতর্কিত নয় এমন প্রার্থীদের বাছাইয়ের কাজ চলছে। যাদের বিরুদ্ধে কোন না কোনভাবে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন।

ইতিমধ্যে বর্তমান সংসদের শতাধিক সদস্যের উপর বিশেষ নজরদারী চলছে। এ ছাড়াও প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আমলনামা সংগ্রহে কাজ করছে সরকারী ও দলীয় হাইকমান্ডের একাধিক গোয়েন্দা টিম। এরা আসনভিত্ত্বিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক তথ্যগুলো সংগ্রহ করে দলের নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে প্রেরন করছেন। কয়েকজন বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীর আমলনামা দলীয় সভানেত্রীর কাছে সরাসরি জমা পড়েছে তারা জানিয়েছেন। জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্চের মধ্যে দল গোছানোর পরিকল্পনা নেয় আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে প্রত্যেকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নিয়মিত সম্মেলনের ঘোষনা দেয়া হয়।

গত ১৪ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরীর কথা বলেন। ২৩ জানুয়ারী সংসদীয় দলের সভায় এমপিদের আগামী নির্বাচনের জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার নির্দেশ ও বিতর্কিতদের মনোনয়ন না দেয়ার ঘোষনা দেন। ২৬ ফেব্রুয়ারী বগুড়ার এক জনসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানান। সর্বশেষ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। দলীয় একাধিক সুত্র মতে, চট্টগ্রামের পাঁচজন সংসদ সদস্যের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার গুঞ্জন চলছে। এদের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিনজন, নগরের একজন ও উত্তর চট্টগ্রামের একজন বিতর্কিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।

এসব আসনে নতুন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া কোন কোন আসনে জোটগত হিসাব নিকাশের প্রভাবেও প্রার্থী পরিবর্তনের ইংগিত রয়েছে। বিতর্কিত এসব নেতাদের আমলনামাও গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সংগ্রহ করেছে। দলীয় সুত্রগুলো জানায়, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচনের আগে তৃনমুলে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা একজন যুগ্ন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদদের নেতৃত্বে সংগঠনকে চাঙ্গা করার কাজ চলছে। দলকে চাঙ্গা করার অংশ হিসেবে সম্প্রতি তৃনমুলে চিঠি দিয়েছেন দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

চিঠিতে দলীয় কোন্দল নিরসন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কমিটি বিলুপ্ত কিংবা কাউকে বহিস্কার করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দল থেকে বহিস্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। দলীয় নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিয়মিত দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। দলীয় সভা সমাবেশগুলোতে নৌকার পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বক্তব্য রাখছেন।

নেতারা বক্তব্যের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন সরকারের উন্নয়ন বার্তা। সামাজিক অনুষ্টান, ধর্মীয় অনুষ্টান ও উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে সরাসরি উপস্থিতি বেড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। নির্বাচনী মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে সবধরনের কৌশলই অবলম্বন করছেন তাঁরা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন,’ বিভাগের প্রতিটি জেলায় সাংগঠনিক সফর, মতবিনিময় সভা নেত্রীর নির্দেশনা অনুসারে দলকে সুসংগঠিত করতে ব্যাপক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

নৌকার পক্ষে জনমত গঠন করছি। সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। নির্বাচনের কত বছর বাকি আছে তা বিবেচনায় না নিয়ে একটি নির্বাচনের পরই আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। আমাদের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়। দলের একাধিক সুত্র মতে, নগরীর একটি গুরুত্বপুর্ন আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নতুন চমক আসতে পারে। জাতীয় পার্টি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি আসনে একজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে চুড়ান্ত করে রেখেছে।

সে হিসেবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারে। একইভাবে বিএনপি ছেড়ে আসা আরেকটি দলের হেভিওয়েট নেতা দক্ষিনের আরেকটি আসন দাবী করতে পারে। একই সাথে উত্তর চট্টগ্রামের আরেকটি আসন জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারে ওই আসনের বর্তমান সাংসদ। যার বিরুদ্ধে দেশে এবং প্রবাসে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ জমা হয়েছে কেন্দ্রে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্র মতে,’ চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণে একাধিক নতুন প্রার্থী মনোনয়নে ইতিমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ পেয়েছেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের গ্রীন সিগন্যাল। এদের অনেকে এলাকার বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.