নুহাশপল্লীতে ভক্তদের ঢল

0

সিটিনিউজ ডেস্ক:: পাঁচ বছর আগে যখন নুহাশ পল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়, সেদিন ছিল তুমুল বৃষ্টি। কিন্তু তা কোনো বাধা হতে পারেনি হুমায়ূনের ভক্ত-অনুরাগীর জন্য। প্রিয় লেখকে শেষ বিদায় জানাতে নুহাশ পল্লীতে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার হিমু-রুপা আর সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিদায়-ব্যথাতুর ভক্ত-অনুরাগীদের চোখের জল মিশেছিল সেই বর্ষণবারিতে।

পাঁচ বছর পর আজ তার মৃত্যুদিবসে সেই দৃশ্য যেন আবার ফিরে এসেছে। সকাল থেকে আকাশ ভার। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। যেন বা হুমায়ুনের জন্য ঝরছে আকাশের অশ্রু। তাহলে হুমায়ুন-ভক্তরা কেন কান্না চেপে ঘরে বসে থাকবে।  আজও তারা সকাল থেকে দলে দলে হাজির হতে থাকে নুহাশ পল্লীতে। কেউ এসেছে হিমু পরিবহনে। কেউ বা সেজেছে হুমায়ূনের প্রিয় সৃষ্টি হিমু রূপে। কেউ বা রুপা।  আরো আরো ভক্ত-অনুরাগী তো আছেই। চোখের জলের সঙ্গে বৃষ্টির জলেও সিক্ত তারা।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সকাল থেকে হুমায়ূন পরিবার, তার ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনদের ভিড় নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। তারা ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন প্রিয় লেখককে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে নুহাশ পল্লীর বৃক্ষপল্লব সজীব-সতেজ। আঙ্গিনা জুড়ে নানা বয়সী মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে হুমায়ূন-ভক্তরা। হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমু পরিবারের সদস্যরাও আসছেন। লিচু তলায় হুমায়ুনের কবর ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে।  হিমু-ভক্ত কেউ কেউ কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিষণœ মুখে ঘোরাঘুরি করছে এদি-ওদিক।

দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য মঙ্গলবার দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন হুমায়ূন-পতœী মেহের আফরোজ শাওন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাওন দুই ছেলেকে নিয়ে তাদের বাবার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অসংখ্য হুমায়ুন-ভক্ত, হিমু ও রুপার চরিত্র সেজে প্রিয় লেখকের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘বিশেষ দিনে কেবল নয়, সারা বছর  হুমায়ূনকে স্মরণ করি আমরা। তার বড় স্বপ্ন ছিল একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমার একার পক্ষে তার সেই স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশের যারা গুণীজন আছেন, নীতি নির্ধারণে যারা আছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই। তবে আগামী ১৩ নভেম্বর তার জন্মদিনে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘরের অংশবিশেষ চালু করা হবে।’

এর আগে কবর জিয়ারতে যোগ দেন হুমায়ূনের দুই বোন রোখসানা আহমেদ, সুফিয়া হায়দার, শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী তহুরা বেগম।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রিয় লেখককে স্মরণ করতে এসেছে অনেক ভক্ত। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কাছে বৃষ্টি কোনো বাধা নয় জানিয়ে ভক্তদের কয়েকজন জানান, প্রিয় লেখকের সবচেয়ে পছন্দ ছিল বৃষ্টি। ভক্তদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিমু পরিবহনে চড়ে আসেন হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমুরা। বিভিন্ন সাজে রুপাদের পদচারণে প্রাণ ফিরে পায় নুহাশ পল্লী। তারাও এসেছেন প্রিয় লেখককে স্মরণ করতে।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক জানান, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পল্লীতে কোরআন খানি, দোয়া, মিলাদ মাহফিল, এতিমদের খাবার বিতরণসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। আশপাশের কয়েক শ এতিম শিশু দিনব্যাপী এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা শহীদ ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তবে তার সৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত যারা, তার মনে করেন,  হুমায়ূন ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। তার সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.