পটিয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ভাংচুর : আহত ৪
সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিদ্যুতের দাবীতে বিক্ষুব্ধ এক থেকে দেড় শতাধিক গ্রাহক গতকাল চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে জিএম এর কক্ষ সহ বেশ কয়েকটি কক্ষের কাঁচ সহ মূল্যবান মালামাল ভাংচুর করেছে। এসময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জিএম এএইচএম মোবারক উল্লাহ সহ চার কর্মকর্তা আহত হয়। ঘটনাটি ঘটে শনিবার দুপুর ১২.১১ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত মাত্র ৫ মিনিট। বলতে গেলে ৫ মিনিটেই সব তছনছ করে হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করে।
জানা যায়, পটিয়া সহ চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ৭টি উপজেলায় সম্প্রতি ঘুর্নিঝড় মোরার কারণে বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বিদ্যুৎ লাইনে গাছ পড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা গতকাল অতর্কিতভাবে পল্লী বিদ্যুৎ সদর দপ্তরে হামলা চালায়। এব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দাবী করেন কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ সমস্যা থাকলেও শুক্রবার থেকে পটিয়ায় ৯৯ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে কিছু লোক এসে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সদর দপ্তরে হামলা চালায়। এ হামলায় জিএম এর কক্ষ, এজিএম এর কক্ষ, জুনিয়র অফিসার কক্ষ, ক্যাশ কাউন্টার, ৩টি কম্পিউটার ও ১টি ল্যাপটপ ভাংচুর করা হয়। এছাড়াও এসময় জিএম এএইচএম মোবারক, ডিজিএম আসাদুজ্জামান খান, ক্যাশিয়ার রেহেনা আকতার, সহকারী ক্যাশিয়ার সুমাইয়া আকতার আহত হন।
এব্যাপারে জিএম এএইচএম মোবারক উল্লাহ বলেন, এ হামলাটি পরিকল্পিত। তারা আমার রুমে ঢুকে প্রথমে আমাকে রাজাকার বলে গালি দেয়। পরে বলে তুমি ভাল মানুষ, কিন্তু তোমার আশে পাশে দুর্নীতিবাজরা তোমাকে ঘিরে রেখেছে। তুমি এ অফিস থেকে দুর্নীতিবাজদের না তাড়ালে তোমার রক্ষা নেই। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমি কিছুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে এ অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করায় কিছু প্রভাবশালী লোকের উস্কানীতে এ ঘটনা সৃষ্টি করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, গত ৪ দিন ও এর ১ সপ্তাহ পূর্ব থেকে পল্লী বিদ্যুতে ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকট ছিল। বিশেষ করে ঘুর্নিঝড় মোরার পরে বিদ্যুৎ ছিল না বললেও চলে। এতে একটু একটু করে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রাহকরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এব্যাপারে জানতে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, বিদ্যুতের দাবীতে হামলা হচ্ছে জেনে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব তছনছ হয়ে যাওয়ায় শেষ রক্ষা করা যায়নি।
তবে যতটুকু জেনেছি গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের অভাবে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে ভাংচুর কারো কাম্য নয়। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলে এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাবী থাকলে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে গ্রাহকরা উপস্থাপন করতে পারেন। এভাবে দেশের সম্পদ নষ্ট করতে পারেন না।
তিনি এ কাজে যে বা যারাই জড়িত হোক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। গতকাল বিকেলে ঘটনার খবর পেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস পরিদর্শন করেন পটিয়ার সাংসদ আলহাজ¦ সামশুল হক চৌধুরী। তিনি থানার অফিসার ইনচার্জ, পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের সাথে বৈঠক করে এ অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে বলেন, দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হতে পারে। তবে এর ভাষা কিন্তু ভাংচুর নয়। এর জন্য স্মারকলিপি, মানববন্ধন সহ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচী দেওয়া যেতে পারে। যারা ভাংচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।