পাহাড়ের কান্না আর লাশের মিছিল

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি:: ভারী বৃষ্টিপাতে গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে সংঘটিত হয় এক দুর্যোগ। পাহাড় ধসের প্রাণ যায় বেশ কিছু মানুষের। পাহাড় ধসের ঘটনার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাঙামাটি শহরের শিমুলতলি, রুপনগর, টিভি স্টেশন, রেডিও স্টেশন, পশ্চিম মুসলিম পাড়া, পূর্ব মুসলিম পাড়া, লোকনাথ মন্দির এলাকা, সনাতন পাড়া, যুব উন্নয়ন, মন তলাসহ বেশ কিছু এলাকা।

মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে সংবাদ আসে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস হচ্ছে। ভোর রাত থেকে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন। ভেদভেদী বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় অসংখ্যা মানুষ। প্রায় মানুষ’র লাশ পাওয়া যায় মাটির নিচ থেকে।

মাটির নিচ থেকে উঠে আসে বহু মানুষের লাশ। তাদের মধ্যে হলো নুরী আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিয় চাকমা, আয়ুশ মল্লিক, চুমকি মল্লিক, লিটন মল্লিক, নুর হোসেন, সুমন, আবু সহ আরো অনেকে। দিন যখন বাড়তে থাকে তার সাথে বাড়তে থাকে লাশের মিছিল। এই মিছিলে যোগ দেয় নারী, পুরুষ ও শিশুদের লাশ।

সন্ধ্যার সময় রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী সেনা ক্যাম্পের পাশের কবরস্থানে গণকবর দেওয়া হয় অনেক জনকে। হিন্দুদের নেওয়া হয় আসামবস্তি শ্মশানে।

দিনে মৃত দেহ উদ্ধার আর রাতে দাফন-
১৩ জুন মঙ্গলবার রাঙামাটিতে সংঘটিত হওয়া পাহাড় ধস। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সকল এলাকায় পাহাড় ধস হয়েছিলো প্রতিটি স্থানে চলে উদ্ধার কাজ। এই উদ্ধার কাজে যোগদেন সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন। সারা দিন বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি চাপা পরা মানুষের মৃত দেহ উদ্ধার করা হতো। আর অন্য দিকে সারা রাত কবর করার পরে দাফন করা হতো সেই উদ্ধারকৃত লাশগুলো। প্রতিদিনই বহু মানুষের লাশ দিনে উদ্ধার করার পরে রাত জুড়ে সেই লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন করা হতো।

ভেদভেদী স্থানীয় যুবক রাজু বলেন, আমরা প্রায় অনেক বন্ধু এবং এই এলাকার বিভিন্ন বয়সের মানুষ এক সাথে সারা দিন বিভিন্ন স্থানে মাটি চাপা পরা মৃত মানুষকে উদ্ধার করতাম আর রাতে সেই মানুষগুলোর জন্য কবর তৈরি করতাম। সেই করবে দাফন কাজ সম্পন্ন করতাম উদ্ধারকৃত মৃত মানৃষগুলোর।সোহেল জানান, আমরা এর আগে এমন দুর্যোগ দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম পাহাড় ধসে এত মানুষ মারা গেছে। আমরা এলাকার মানুষসহ প্রশাসনের বহু মানুষ এক সাথে সারা দিন এই মাটি চাপা পরা মানুষকে উদ্ধার করেছি। আর অন্য দিকে সারা রাত কবর তৈরি করে সেই মৃত মানুষের দাফন করেছি।

বাতাশে লাশের গন্ধ-
রাঙামাটি শহরের শিমুলতলি, রুপনগর, টিভি স্টেশন, রেডিও স্টেশন, পশ্চিম মুসলিম পাড়া, পূর্ব মুসলিম পাড়া, লোকনাথ মন্দির এলাকা, সনাতন পাড়া, যুব উন্নয়ন, মন তলা সহ বেশ কিছু এলাকায় পাহাড় ধসে বহু মানুষের জীবন গিয়েছে।

নারী, পুরুষ, শিশু সহ অনেক লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে থেকে। ১৩ জুন সংঘটিত এই দুর্ঘটনার ছয় দিনে প্রায় মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত এলাকার বাতাশে এখন শুধু লাশের গন্ধ। বহু নারী, পুরুষ ও শিশুর লাশের গন্ধ এই এলাকা জুড়ে।এমন পাহাড় ধস দুর্ঘটনা আগে তেমন একটি দেখেনি এই এলাকার মানুষ জন। এই প্রথম এমন বড় আকারে পাহড় ধস ঘটেছে অত্র এলাকায়। পাহাড়ে বসবাস করা বহু মানুষের এমন অমানবিক মৃত্যু যেনো কেউ মেনে নিতে পারছে না। তার সাথে মেনে নিতে পারছে না ‘বাতাশে লাশের গন্ধ’।

কাপ্তাই জলে ভাসছে পৌর আবর্জনা-
রাঙামাটির শহরের পৌর এলাকার সকল আবর্জনা সংগ্রহ করে পৌর কর্তৃপক্ষ এই আবর্জনা ফেলতো শহরের দূরে রেডিও স্টেশন এলাকায়। ১৩ জুন (মঙ্গলবার) শহরের বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসের সাথে এই আবর্জনার স্তুপও ভেঙ্গে পড়ে। সকল আবর্জনা জলে ভেসে ভেসে চলে যায় কাপ্তাই হ্রদে। এই আবর্জনা এখনো ভেসে বেড়াছে কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে।

এই প্রসঙ্গে রাঙামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো: জামাল উদ্দিন বলেন, কেউ এখনো পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি। আমরা জানতে পেরেছি এই আবর্জনা স্তুপ ভেঙ্গে পরেছে। মেয়র’র সাথে কথা বলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি অতিদ্রুত।

 

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.