পাহাড়ে এখনো বহুমুখী শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে- সন্তু লারমা

0

মো: সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি : পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৭ সালে ২ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলায় এখন বহুমুখী শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা মঙ্গলবার(২৮মার্চ)রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আয়োজিত মাধ্যমিক শিক্ষার কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মান উন্নয়ন শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় বহুমুখী শাসন ব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ আজ নিষ্পেষিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ স্থাপিত হলেও তা কার্যকর ও দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী সাধারণ প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা জেলা পরিষদে ন্যস্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখানে তা উপেক্ষিত। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ জটিল আবর্তে পড়েছে। তিনি পার্বত্য এলাকায় চলমান বহুমুখী শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে শাসন ব্যবস্থাকে একমুখী করার উপর জোর দিয়ে দিয়ে বলেন, পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ভিত্তিতে ১৯০০সালের শাসনবিধি, ১৮৬১সালের পুলিশ এ্যাক্ট এবং বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন সংশোধনের মাধ্যমে সাধারণ প্রশাসন ও আইন শৃংখলা পরিষদে ন্যস্ত করে পার্বত্য অঞ্চলের বিশেষ শাসন ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমার সভাপতিত্বে সভায় পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি চাকমা বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী। এর আগে রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলার ১০জন প্রধান শিক্ষক, ১০জন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পক্ষে কাউখালী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক বক্তব্য রাখেন।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে আইনের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় যে বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পার্বত্য প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক শিক্ষা পার্বত্য চুক্তি অনুসারে জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত একটি বিষয়। ইতিমধ্যে তা চুক্তিপত্রের মাধ্যমে জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয়েছে। আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ যথারীতি প্রবিধানও প্রণয়ন করেছে এবং পরামর্শের জন্য সরকারের কাছে প্রেরণ করেছে। এক্ষেত্রে জেলা পরিষদ তার দায়িত্ব পালন করলেও সরকার থেকে এখনও সে বিষয়ে কোন পরামর্শ পাওয়া যায়নি। ফলে তা দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। তারপরেও জেলা পরিষদকে এই প্রণীত প্রবিধানের আলোকে কাজ করে যেতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সন্তু লারমা আরও বলেন, পার্বত্য এলাকায় সাধারণ প্রশাসন কার হাতে তা নিয়ে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে মাধ্যমিক শিক্ষার কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের যেকোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ধারাগুলি অবাস্তবায়িত থাকার কারণে এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পার্বত্য অঞ্চলের যে বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে তারই আলোকে এবং পার্বত্য এলাকার ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক ও এখানকার মানুষের জীবনধারার উপর ভিত্তি করে এখানকার শিক্ষানীতি প্রণয়ন হওয়া বাঞ্চনীয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সভাপতির বক্তব্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, পার্বত্য এলাকার প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নিতে হবে। তবেই তারা ভালোমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে সক্ষম হবে। তিনি মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতেও না জড়ানোর বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.