ফটিকছড়ি আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে ক্ষোভের আগুন

0

জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ, ফটিকছড়ি : ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে চরম ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে। এ নিয়ে গত ২০ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে কমিটির প্রতি অনাস্থা ও প্রতিবাদ করেছে তারা। একই সাথে ওই কমিটি বাতিল করে পূন:রায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দাবী জানিয়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের নাজিরহাট এলাকায় দফায় দফায় মিছিল করেছে উপজেলা আ.লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। অপরদিকে একই সময়ে, একই স্থানে উপজেলা আ.লীগ মজিবনগর দিবসের আলোচনা সভার নাম করে পাল্টা কর্মসচি ঘোষণা করায় নাজিরহাট ঝংকার চত্বর এলাকায় চরম উত্তজেনা বিরাজ করে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ও জেলা আ.লীগের কঠোর হস্তক্ষেপে কোন প্রকার অপ্রীতিকর কিংবা বিশৃংখলা ছাড়া শেষ হয় কর্মসূচি।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত ২০ এপ্রিল নাজিরহাট ঝংকারস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারের কমিটির বিরুদ্ধে সংবাদ সস্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসতে থাকেন। যেখানে দফায় দফায় মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন। মিছিলে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিখো যায়। পূর্ব থেকে প্রশাসন বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে এলাকাটি বেষ্টিত করে রাখে।

কমিটির বিরোধী পক্ষের ব্যাপক উপস্থিতি ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করে চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আ.লীগ, উপজেলা আ.লীগের সেখানে পাল্টা কর্মসূচি মজিব নগর দিবসের আলোচনা সভা উপজেলা সদরের অফিসে আয়োজন করার নির্দেশ দিলে তারা সেখানেই তাদের সভা শেষ করেন। তা স্বত্বেও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সভায় আসার পথে তারা আমাদের কর্মীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়। এমনকি তারা ফাঁকা গুলিও ছুড়ে। আমাদের দুই কর্মীকে আটক করে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনস্থল নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে জনসভায় পরিনত হয়ে যায়। ফটিকছড়ি আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম ফসিউদ্দোল্লাহ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন দলের জন্য অবদান রাখা ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করে সম্পূর্ণ স্বজনপ্রীতির বশবর্তী হয়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের জন্য অগ্রহণযোগ্য, মাদকাসক্ত, শিবির ও এনডিপির চিহ্নিত ক্যাডারদের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। যা কখনোই কাম্য নয়।’
বক্তব্যে আরো বলেন, ‘যারা কোনদিন দলের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য পর্যন্ত ছিলেন না, তাদেরকেই সম্পাদকীয় পদে রাখা হয়েছে। দলের সাধারণ সদস্য পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রবাসী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিয়মবর্হিভূতভাবে এই কমিটিতে নাম প্রস্তাব করা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম. তৌহিদুল আলম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফখরুল আনোয়ার, নারী সভানেত্রী জেবুন নাহার, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা এইচ এম আবু তৈয়ব।
জানতে চাইলে প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, ‘ আমরা উপজেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মতামত নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলায় প্রস্তাব করেছি। তারপরও কারো বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে নেতৃবৃন্দের সাথে বসে ঠিক করা যেতে পারে। কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি না করে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতি পদে মুহাম্মদ মুজিবুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নাজিম উদ্দিন মুহুরী নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন পর গত ১৪ মার্চ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য প্রস্তুাব দেন।

জানতে চাইলে উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, ‘প্রস্তাবিত কমিটি জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ অনুমোদন দিয়েছে। এখানে বেশি বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.