ফাউন্ডেশনের মূল কাজ দুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো

0

সিটিনিউজ ডেস্ক :: আজ ২৩ অক্টোবর (সোমবার) চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের ৭৬তম জন্মদিন। ১৯৪১ সালে বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এর পর পরই চাষী নজরুল ইসলামের স্ত্রী জোৎস্না কাজী ও আরো কয়েকজনের উদ্যোগে গড়ে ওঠে একটি ফাউন্ডেশন। যা তখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে মানুষের সেবায়। বিশেষ করে দুস্থ শিল্পীদের সহায়তায় কাজ করছে এই ফাউন্ডেশনটি।

চাষী নজরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে জোৎস্না কাজী বলেন, “আমাদের ফাউন্ডেশনের মূল কাজ হলো দুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের কাছে প্রতি মাসেই সাহায্য চেয়ে গরিব শিল্পীরা আবেদন করেন, সেগুলো যাচাই বাচাই করে এই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে যারা চাষীর ভক্ত আছেন তাদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে শাখা করার চেষ্টা করছি, যারা চাষীর চলচ্চিত্র বাঁচিয়ে রাখবে, স্থানীয় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াবে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”

এমন একটি ফাউন্ডেশন কেন করা হলো জানতে চাইলে জোৎস্না কাজী বলেন, “মৃত্যুর আগে চাষী দীর্ঘদিন হাসাপাতালে কাটিয়েছেন। সে থেকে আমরা জানি একজন শিল্পী হাসপাতালে কী করুণ দিন কাটান। আল্লাহর রহমতে আমাদের টাকার সমস্যা হয়নি, কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান, অসমর্থ হলে তিনি সমাজের কাছে সাহায্য চান, কিন্তু শিল্পীদের বেলায় চিকিৎসা নিতে পারে না, পারলেও কারো কাছে হাতও পাততে পারে না। কারণ তাঁর টাকা না থাকলেও সমাজে সম্মান আছে। যে কারণে এসব শিল্পীর পাশে আমরা দাঁড়াই।”

ফাউন্ডেশনে অর্থের জোগান প্রসঙ্গে জোৎস্না কাজী বলেন, “একদিন আমি চাষীকে বললাম তুমি তো আমার জন্য কিছু রেখে গেলে না, আমার আগে তুমি মারা গেলে আমার কী হবে? এমন কথা শোনার পর সে হেসে দিল, এর কিছু দিন পর আমার হাতে ১০ লক্ষ টাকা দিল। সেই টাকাটা আমি চাষীর মৃত্যুর পর চাষী নজরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনে দিয়ে দেই। সেই টাকায় ব্যাংক থেকে যে ইন্টারেস্ট আসে, তা দিয়েই আমরা চালাই।’

চাষী নজরুল ইসলামের শুভাকাঙ্ক্ষীরাও টাকা দিয়ে সাহায্য করেন জানিয়ে জোৎস্না কাজী আরো বলেন, “দেশের বাইরে থেকেও মাঝেমধ্যে আমরা কিছু সাহায্য পাই। চাষীর ভক্তরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং দুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ান।”

ফাউন্ডেশন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে জোৎস্না কাজী বলেন, “আমরা চাই কোনো শিল্পী যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যান। আমরা জানি সব শিল্পীকে সাহায্য করার মতো অবস্থা আমাদের নেই, কিন্তু সারা দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা পাশে দাঁড়াতে চান, আমি সবাইকে বলব, আমাদের পাশে দাঁড়ান, যেন চাষী নজরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের কাজগুলো সঠিক ভাবে পালন করতে পারি।”

চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৬১ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ আওয়ালের মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পর্দাপণ করেন। খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ফতেহ্ লোহানী ও প্রখ্যাত সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কাহিনীচিত্র ‘ওরা ১১জন’ নির্মাণের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ জীবনে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। চাষী নজরুল ইসলাম চার বার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি।

এ ছাড়া অসংখ্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সর্বাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রের নির্মাতা।

তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- মুক্তিযুদ্ধের ছবি- সংগ্রাম, হাঙ্গর নদী গ্রেনেট, মেঘের পরে মেঘ, সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র-দেবদাস, শুভদা, চন্দ্রনাথ, রবী ঠাকুরের সুভা, শাস্তি, বঙ্কিম চন্দ্রের বিষবৃক্ষ উপন্যাস অবলম্বনে বিরহ ব্যথা, শিল্পী হাসন রাজা প্রভৃতি। এ ছাড়া তিনি দেশবরেণ্য তিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন জীবন ভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র-মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক এবং দেশ-জাতি-জিয়াউর রহমান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.