বন্ধুত্বের বন্ধন হোক চিরকালের

0

আবছার উদ্দিন অলি,সিটিনিউজ ::  ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ীত গেলাম দেখা পাইলাম না’, ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে বুক আর মুখ বলে এক সাথে সে হলো বন্ধু বন্ধু আমার’, ‘বন্ধুর তোর বারত নিয়া আমি যাবো’, ‘বন্ধু বলে ডাকো যারে সেকি তোমায় ভুলতে পারে’।

চিরদিনের বন্ধু তুমি এই গান গুলো অসংখ্য গান রচিত হয়েছে বন্ধুত্ব নিয়ে। বন্ধুত্বকে অনুভব করার এক চিরন্তন হৃদয় জাগানিয়া সুর আমাদের উজ্জীবিত করে রাখে।

বন্ধু। দুটি অক্ষরের একটি শব্দ। শব্দটি ছোট হলেও একজন মানুষের জীবনে এ শব্দটির প্রভাব অনেক।

একজন মানুষের জীবনে বন্ধু আসে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন প্রকৃতির।

কখনো সমবয়সী বন্ধু, কখনো ক্লাসমেট বন্ধু, কখনো বয়স্ক বন্ধু, কখনো ভাই বোন বন্ধু, সহকর্মী বন্ধু, অংশীদার বন্ধু, প্রতিবেশী বন্ধু ইত্যাদি।

বন্ধু যেই হোক, তাকে শুভেচ্ছা জানাতে কার না ভাল লাগে। আর এজন্য যদি বেচে নেয়া হয় একটি বিশেষ দিন তাহলে তো কথাই নেই, বন্ধুত্বের কোন দিন নেই ক্ষণ নেই। বন্ধুত্ব যেন এক মুগ্ধতা নিয়ে আসে।

বন্ধুত্ব কোন অপরাধ নয়, বন্ধুত্ব হল অধিকার।

হৃদয়ের শুদ্ধতা, পবিত্রতা এবং মানবিক বন্ধুত্ব হৃদয়কে বিকাশিত করে প্রশান্ত রাখে, সৃজনশীল করে। বন্ধুত্ব পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান ও সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠা করে। বন্ধুত্ব পারিবারিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠান করে, সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে। বন্ধুত্ব সকল প্রকার হিংসা বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব, কলুষতা ধ্বংস করে দেয়। বন্ধুত্ব শান্তি, স¤প্রীতি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করে।

বন্ধুত্ব মানব সভ্যতার এক শ্রেষ্ঠ শক্তি ও অর্জন বন্ধুত্ব হচ্ছে হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের বসবাস, অনুভূতি এবং আনন্দ। সৎ ও সুন্দর মনের বন্ধু আপনাকে নিয়ে যেতে পারে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে। বন্ধু আপনার আশ্রয়স্থান কখনো অভিভাবকও বটে। ভালো বন্ধুর সংস্পর্শ আলোর পথ দেখায়।

কিন্তু একজন অসৎ ও খারাপ বন্ধু আপনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। খারাপের সাথে থাকলে ভালো একদিন খারাপ হবেই এটাই চির সত্য কথা। বন্ধুত্বের কারণে কেউ রাজ্য জয় করে আবার বন্ধুত্বের কারণেই কাউকে সর্বনাশে পা বাড়াতে হয়। আমাদের চারপাশে আজকাল যেন বন্ধুত্বের সংকট চলছে।

বন্ধু বন্ধুকে হত্যা করে, নেশায় আসক্ত করে অপরাধ প্রবণ করে। নির্ভরযোগ্য বন্ধু, প্রাণের আশ্রয় আজ বলতে গেলে নেই। মূল্য বোধহীন, চরিত্রহীন বন্ধুর সংখ্যা বাড়ছেই। আমাদের স্বার্থনেষী নেতৃত্বে দরিদ্র, অসচেতন অন্যমনস্ক বাবা-মা এবং সর্বোপরি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব আমাদের তরুণ বন্ধুদের বিচ্যুত বিভ্রান্তি করছে।

ভুল বন্ধুত্বের কারণে এখন তরুণ সমাজ প্রায়শ বিপদগামী হচ্ছে। সেই সাথে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী পথে পা বাড়াচ্ছে। এই পথ প্রতিরোধ করতে হবে। কেননা অসৎ বন্ধুত্ব আপনার জীবনকে করে তুলতে পারে দুর্বিসহ।

১৯৬৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে। ঐতিহাসিক ঐ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সিঙ্গাপুর সরকার তাদের যাবতীয় শিক্ষা কর্মসূচীতে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। দিবস পালনে অন্তর্ভূক্ত হয় নানা কর্মসূচী।

বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস হচ্ছে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার। যা এখন আমাদের দেশেও পালিত হয়। অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে তুলি। বন্ধুত্ব ছিল আনন্দের, এখন তা হয়েছে আতঙ্কের। বন্ধুতব ছিল ভালবাসার, এখন হয়েছে হিংসার। আতঙ্ক আর হিংসা চাইনা। চাই ভাল বন্ধুত্ব, যাকে বিপদে সব সময় পাওয়া যায়।

বন্ধুত্ব একটা বিশাল ব্যাপার। কর্মে সাধনায় প্রেরণায় জীবন চলার পথে বন্ধুত্ব সহায়ক ভূমিকা রাখে। বন্ধুর বন্ধন সব সময়ের সঙ্গী তাই বন্ধুত্ব নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। এখন বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের মত নেই। বন্ধু, বন্ধুকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করে না।

স্বার্থের আঘাত, টাকা পয়সা, নারী, ব্যবসা বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে এখন বন্ধুত্বের ভিন্নরূপ প্রতিফলিত হচ্ছে। বন্ধুত্ব টিকে থাকছে না দীর্ঘদিন ধরে। নামে মাত্র বন্ধু শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে সবার ক্ষেত্রে একা প্রযোজ্য নয় ভালো বন্ধু এখনো আমাদের সমাজে আছে। তা না হলে দুনিয়াটাই বদলে যেতো। এখনো অনেক বন্ধু বন্ধুর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে। পরম আশ্রয় বন্ধুর।

বন্ধুত্বের বন্ধন হউক চিরদিন। বন্ধুত্ব হলো জীবনে মরণে এক ঐশ্বরিক শক্তি বন্ধুত্ব হলো একান্তে নিভৃতে বৃক্ষের ছায়া। বন্ধুত্ব পুষ্পিত এক অনুভূতি। সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও বন্ধুত্ব থাকবে, বন্ধুত্ব হলো সুন্দর মানুষ এবং সুন্দর মন, আমার দুঃসময়ের একমাত্র সাথী বিপদে যাকে কাছে পাবো। বন্ধু আমার দ্রুতিমানের ছায়া।

বন্ধুত্ব হলো দুটি মনের এক হয়ে মিশে যাওয়া নদী যেমন করে মোহনায় গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।

বন্ধুত্ব আমার হৃদয়ের গভীরতার বহিঃপ্রকাশ এবং আনন্দ বেদনার অংশীদার। বন্ধু একটা ইতিহাস যার কোন শেষ নেই, বন্ধুত্ব আমার হৃদয় জুড়ে বন্ধুত্ব আমার জীবনের অস্তিত্ব, বন্ধুত্ব আমার কর্মের সাধনা, বন্ধুত্ব আমার অর্জন, বন্ধুত্বের চেয়ে বড় সম্পর্ক পৃথিবীতে আর নেই। যদি বন্ধুত্ব হয় নিঃস্বার্থ তবে অবশ্যই সে সম্পর্ক গড়ে তুলবে আনন্দ, সুখ, শান্তিময়।

সবচেয়ে নিকটতম বন্ধুকে একটি ফুল উপহার দিয়ে বলি বন্ধু তোমাকে খুব ভালবাসি, তুমি থেকো সারা জীবন ভর মোর পাশে। সারা পৃথিবীতে প্রায় সব দেশেই এই দিন পালিত হয়। তবে শুধু উপহার দেয়াই এর উদ্দেশ্য নয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য বন্ধুত্বের প্রকাশ।

বন্ধুত্ব দিবসে বন্ধুকে দেয়া যেতে পারে যে কোন প্রিয় উপহার। সম্বোধন করা যায় যে কোন প্রিয় শব্দে। যা সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বলা উচিত ভালবাসি ভালবাসি শুধু তোমাকে, শুধু তোমাকেই বন্ধু, আমাদের চারিদিকে সুযোগ সন্ধানী আর স্বার্থপর বন্ধুর ছড়াছড়ি, তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। সুন্দর মনের বন্ধুত্ব হোক চিরদিনের।

 

লেখকঃ সাংবাদিক ও গীতিকার
০১৭১১-১৬৯১৪৯

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.