বসন্ত ও ভালবাসা দিবসে ফুল চাষিরা তেমন সাড়া পাননি !

0

বশির আলমামুন,চকরিয়া : বসন্তের পয়লা ফাল্গুন ঋতুরাজ ও ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ দুই দিবসকে সামনে নিয়ে আশায় বুক বেধেঁছিল চকরিয়ার ফুল চাষিরা। ফুল চাষীরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য । সবাই আশা করেছিল দিবসটিতে প্রচুর ফুল বিক্রি হবে। কিন্তু তাদের সে আশা এবারে সফল হয়নি।
প্রতিবছর এ দুইটি দিবস পালিত হয় বাংলাদেশে । এই দিনটির জন্য বছর জুড়ে প্রহর গুনে কপোত-কপোতি, প্রেমিক-প্রেমিকা,ও স্বামী-স্ত্রীরা। এদিন নিরব ও নেপথ্যে থাকা অসংখ্য প্রেমিক জুটির পরিচিতি প্রকাশ্যে রুপ নেয়। নিজেদের সাধ্যমতো একে অপরকে ভালবাসার স্বীকৃতিস্বরুপ উপহার বিনিময় করে।

এদিনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে নানা জাতের নানা রংয়ের ফুল সবচেয়ে বেশি বিনিময় হয়। একজন অপরজনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। এ কারণে বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে কক্সবাজারের চকরিয়ার ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা আগাম ফুল মজুদ করে রাখে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার পেলেই। মাঠ থেকে ফুল তুলে নেয়ে আসে দোকানে। ফুল ব্যাবসায়ীরা বলেছে গতবছর বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে ঘিরে চকরিয়ায় ফুল বিকিকিনি হয়েছিলকোটি টাকার বেশী। কিন্তু এবার ভালবাসা দিবসের একরাত আগেও ফুলের অর্ডার তেমন না আসায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করেছে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয় উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন। আর এ ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে মাঠজুড়ে রয়েছে শুধু ফুল আর ফুল। সেখানে রং-বেরং এর গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাধা, গ্লাডিওলাসসহ নানা জাতের ফুল ফুটে রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাগানেই রয়েছে হরেক রকম অসংখ্য ফুল । অর্ডার পেলেই বাগান থেকে ফুল উঠানো হবে।
চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ে স্বাদীর চেয়ে ও বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে তাদের ব্যন্ততা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া প্রায়ই কোন না কোন উৎসবে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়।

কিন্তু এ বছর বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস কোনটিটেই তেমন বেচা-কেনা হয়নি। তাদের আশা ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আগে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহুরে ফুলের আগাম অর্ডার পাওয়া যাবে। কিন্তু বিশ্ব ভালবাসা দিবসের একরাত আগেও উল্লেখযোগ্য অর্ডার না পাওয়ায় হতাশায় ভর করেছে চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে।

জানা যায়, উপেজলার বরইতলীর ২’শ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। তন্মধ্যে ১’শ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ১’শ হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাসসহ অন্তত ১৫ জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। আগের বছর যেখানে ১’শ গোলাপ বিক্রি হতো ৫০০-৬০০ টাকায় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকায় এবং ১’শ গ্লাডিওলাসের দাম ছিল গত বছর ২০০০-২২০০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকায়। এরপরও আশানুরুপ অর্ডার পাওয়া যাচ্ছেনা ।

বরইতলী এলাকার ফুলচাষী যায়েদ বলেন, এক বিঘা গোলাপ ও দুই বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছি। বর্তমানে গোলাপ ৩ টাকা ও গ্লাডিওলাস ১৪ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এক বিঘা গোলাপ রোপণে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৪ হাজার চারার দাম ৪০ হাজার টাকা। আর রোপণসহ অন্যান্য খরচ আরও ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিচর্যার খরচ রয়েছে বাড়তি। এই বছর আশানুরুপ ফুল বিক্রি না হওয়ায় খুবই ক্ষতির মধ্যে পড়বো।

চকরিয়া গোলাপ বাগান সমিতির সভাপতি মঈনুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন ফুল চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু কৃত্রিম ফুল এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমাদানির কারণে দেশীয় ফুলের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বরইতলীর প্রায় ২’শ হেক্টর জমিতে গোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে।

তিনি আরো বলেন, ফুল বিকিকিনির ভরা মৌসুম শুরু হলেও তেমন বেচা-কেনা না হওয়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। এমনকি বিশ্ব ভালবাসা দিবস ঘিরেও ফুলের বাজারে কাটছেনা মন্দাভাব। অন্যান্য বছর এই সময়েএক কোটি টাকার উপরে ফুল বিক্রি হলেও এবছর ৫০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে এই এলাকায় ফুলের চাষ কমে যাবে

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.