বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের জয় : বিএনপি’র ভূমিধস

0

গোলাম শরীফ টিটু : বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭২ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩০ জন এবং সাধারন সদস্য পদে ৫৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছেন। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৯ জন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ১ এবং বিএনপির প্রার্থী ৪ জন বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। পুকুরিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী আসহাব উদ্দিন (ধানের শীষ), নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো: আক্তার হোছাইন (আনারস)। সাধনপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা (নৌকা), নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আহছান উল্লাহ চৌধুরী (আনারস)।

কালিপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এড. শাহাদত আলম (নৌকা), নিকটতম প্রার্থী বিএনপির আমিনুর রহমান চৌধুরী (ধানের শীষ)। খানখানাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বদরুদ্দিন চৌধুরী (নৌকা), নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জাহেদ আকবর জেবু (মোটর সাইকেল)। বাহারছড়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম (নৌকা), নিকটতম প্রার্থী বিএনপির মাষ্টার লোকমান আহমদ (ধানের শীষ)। কাথারিয়ায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শাহজাহান চৌধুরী (ধানের শীষ), নিকটতম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (অটো রিকশা)।

বৈলছড়িতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের কফিল উদ্দিন চৌধুরী ( নৌকা), নিকটতম প্রার্থী বিএনপির মো: ই্ব্রাহীম খলিল (ধানের শীষ)। শীলকুপে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মো: মহসিন (ধানের শীষ), নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হক সিকদার (নৌকা), গন্ডামারায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মো: লেয়াকত আলী (ধানের শীষ), নিকটতম প্রার্থী জামায়াত নেতা মো: আরিফ উল্লাহ (মোটর সাইকেল)। শেখেরখীল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মো: ইয়াছিন (নৌকা), নিকটতম প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা হামেদ হাসান (আনারস)।

চাম্বল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মুজিবুল হক চৌধুরী ( নৌকা), নিকটতম প্রার্থী জামায়াত নেতা আলী নেওয়াজ চৌধুরী ইরান (অটো রিকশা)। পুঁইছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সোলতানুল গনী চৌধুরী ( নৌকা), নিকটতম জামায়াত নেতা মো: সোলায়মান (ঢোল)। ছনুয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এম. হারুনুর রশিদ (মোটর সাইকেল), নিকটতম প্রার্থী বিএনপির রেজাউল হক চৌধুরী (ধানের শীষ)। সরল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রশিদ আহমদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনায় বাঁশখালীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিনক্ষন একাধিকবার পরিবর্তন, দলের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংবাদ সম্মেলন, দলের সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসুচী ও আদালতে রিট করে দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকার চেষ্টা সহ একাধিক কারনে ইউপি নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ ও শঙ্কা ছিল জনমনে। তবে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া সুষ্ট, অবাদ ও শান্তিপুর্নভাবে নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকবর্গের মতে, বাঁশখালীতে অনুষ্টিত এবারের ইউপি নির্বাচনে বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও এবার ইউপি নির্বাচনে তৃনমুল থেকে ভোটাররা জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আগের নির্বাচনে বিজয়ী জামায়াতের দুই চেয়ারম্যান এবার পরাজিত হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত জামায়াত ইসলামীর নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। পুকুরিয়াতে বিজয়ী বিএনপির প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মো: আক্তার হোছাইন। দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। সাধনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা ৫ হাজার ৬১৩ ভোট এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ চৌধুরী পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৭৮ ভোট।

এখানে জামায়াত প্রার্থী মৌলানা মহিউদ্দিনকে ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করেছে। খানখানাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এড. বদরুদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহেদ আকবর জেবুর। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, নৃশংসতম ১১ হত্যাকান্ড মামলার আসামী আমিনুর রহমান চৌধুরী ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের প্রার্থী এড. শাহাদত আলমের কাছে।

অপরদিকে গন্ডামারায় এস.আলম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উস্কানীদাতা হিসেবে আলোচিত-সমালোচিত বিএনপির নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, গন্ডামারায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকে রেখেছেন নেপথ্যে ভুমিকা। প্রায় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর।

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকবর্গের মতে, বাঁশখালী থেকে তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ভিত ভেঙ্গে গেছে। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্ত্বক রাজনীতির বিপরীতে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রাজনীতিকে মানুষ সমর্থন দিয়েছে। বিশেষ করে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্¦ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগনের আস্থা অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রেখেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.