বাঁশখালীতে বালু উত্তোলনে বিলিন হচ্ছে বাড়িঘর

0

নিজস্ব প্রতিনিধি:: বাঁশখালীর পুইছড়ি ইউনিয়নের পুইছড়ি ছড়াতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দুই পাশের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিলিন হয়ে গেছে।

প্রতিনিয়ত ভাঙনের শিকার হচ্ছে নতুন নতুন বসত বাড়ি এবং ফসলি জমি। এ ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে প্রতিবার মুখর হয়ে পড়েছে পূর্ব পুইছড়ি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

গতকাল সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এ দৃশ্য দেখা যায়।

বাঁশখালী পুইছড়ি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে প্রবাহিত পুইছড়ি ছড়িটি একসময়ে এ এলাকার জনগণের জীবন যাত্রার উপকার সাধন করলেও বর্তমানে ছড়াটি বিশাল আকার ধারণ করায় এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকায় দুই পাশে বাড়িঘর বিলিন হতে শুরু করেছে।

চলতি বছর এ ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সাধারণ জনগণ এ ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে প্রতিবাদ মুখর হয়ে পড়েছে।

এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বাঁশখালী থানা পুলিশের এসআই উৎপল চক্রবর্ত্তী সঙ্গীয় ফোর্স সহ ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রশাসনিক সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে এলেও বিকালে বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নেতৃত্বে এক দল প্রশাসনিক কর্মকর্তাও ওই ভাঙনস্থল পরিদর্শন করে বলে জানা যায়।

জানা যায়, বাঁশখালীর পুইছড়ি ইউনিয়নের ছড়াটি ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানে ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের মালি পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, গর্জানিয়া মুড়া, বড় কবরস্থান, সিকদার পাড়া, নাপিত পাড়া, নোয়া পাড়া এবং ৫নং ওয়ার্ডের বছিরা বাড়ী, নাপিতা বিল, অর্পিত টিলা, বড়ুয়া পাড়া, গরজানিয়া পাড়া সহ দুই পাশের বাড়িঘর সহ ফসলী জমি বিলিন হতে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, পুইছড়িতে জঙ্গল পুইছড়ি বালু মহাল নামে সরকারি ভাবে ৬২০ দাগে ৬০ শতাংশ জমি লিজ প্রদান করা হয়।

যার সরকারি মূল্য ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হলেও তা ভ্যাট ট্যাক্স সহ ৮ লক্ষ ১১ হাজার টাকায় লিজ নেয় স্থানীয় আজিজুর রহমান।

তিনি লিজ নিলেও নিজ দায়িত্বে না রেখে স্থানীয় আরিফ চৌধুরীকে এর তদারকির দায়িত্ব দেন।

আরিফ চৌধুরীর নেতৃত্বে মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে আশপাশের উপরোক্ত এলাকাগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

বাড়িঘর বিলিন হওয়া হোসনে আরা বেগম ও মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্যরা জানান এক সময় এ ছড়াটি ছোট থাকলেও বর্তমানে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে দুই পাশে ফসলী জমি বাড়িঘর থেকে শুরু করে সবকিছু বিলিন হয়ে পড়ছে।

এলাকার ইউপি সদস্যা রেহেনা বেগমের পুত্র মোহাম্মদ হামিদ হাছান চৌধুরী মাছুম জানান পুইছড়ি ছড়ার ভাঙনের ফলে দুই পাশের বাড়িঘর যেভাবে বিলিন হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যে এ এলাকা কয়েক হাজার মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়বে।

পুইছড়ি ছড়ার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ফলে রাস্তা সহ আশপাশের প্রচন্ড ক্ষতিসাধন হওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান সোলতান গণি চৌধুরী গত ১৪ই জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০ জুলাই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে।

অপরদিকে বালু উত্তোলনের দুই পাশে বাড়িঘর থেকে শুরু করে ফসলী জমি বিলিন হয়ে পড়ছে।

সাধারণ জনগণের কথা বিবেচনা করে এর প্রতিকার চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি এবার তারা যে ব্যবস্থা নেয়।

এদিকে বালু মহলের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী জানান আমরা সরকার থেকে লিজ নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। তাতে যদি সাধারণ জনগণের ক্ষতিসাধন হয় তাহলে আমরা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকব।

আর সরকার আমাদের জায়গা যদি চিহ্নিত করে দেয় তাহলে আমাদের আর কোন আপত্তি থাকবে না।

ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন মরভুমিতে পরিণত হচ্ছে।

সরকারী এক জায়গার অনুমোদন নিয়ে অন্য জায়গা হতে বালু উত্তোলনের মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি বিক্রিয়ের ফলে দিন দিন বিলীন হতে বসেছে পূর্ব পুঁইছড়ি এলাকার অধিকাংশ বসতঘর।

অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে রাস্তা-ঘাট ও শত শত বছরের পাহাড় গুলো ধ্বংস হয়ে বনায়নের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।

পুরো এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন রোধে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকায় দিন দিন ওই এলাকার ফসলী জমি ও বাড়ীঘর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার ফসলী জমি, জীব বৈচিত্র্য, ঘর-বাড়ী, বসত ভিটা, রাস্তা-ঘট, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ মূলবান জাতীয় সম্পদ বিলীন হওয়ার পাশা-পাশি পরিবেশের বিপর্যয় গড়ছে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.