বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ বালি দিয়ে ভরাট : নেই তদারকি

0

বাঁশখালী প্রতিনিধি : বাঁশখালীর খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া এলাকায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে সাগর থেকে তুলে বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরীন অংশ। ফলে এই বেড়িবাঁধ কতটুকু স্থায়ীত্ব হবে তা নিয়ে স্থানীয় জনগণ নানা ধরনের প্রশ্নবানে জর্জরিত হলে ঠিকাদার এবং স্থানীয় নেতাদের চাপের মুখে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে বেড়িবাঁধের এই ওয়াটার বডিটা বালি দিয়ে ভরাট করলে ক্ষতির চেয়ে টেকসই হবে বলে তাদের অভিমত। তবে যেখানে বাঁধ হচ্ছে তার পাশে সাগর থেকে বালি উত্তোলন করে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরীন বিশাল অংশ ভরাট করায় বেড়িবাঁধের ধ্বসে পড়ার আশংকাও করছেন স্থানীয়রা।

বাঁশখালীতে যে কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ। ২৫১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের (সী ডাইক) ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীচ কোজিং ও পুনরাকৃতিকরণ ৯.৯০০ কি.মি, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কি. মি., বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ-২.০০০ কি.মি. কাজ করা হবে উপরোক্ত টাকা ব্যয়ে। ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩৫টি প্যাকেজে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের কাজ পায় তার মধ্যে সর্বোচ্চ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স ২০টি প্যাকেজ, অপরদিকে মেসার্স মতিউর এন্ড সন্স ৮টি, মেসার্স আরাধনা এন্টার প্রাইজ ২টি, মোস্তফা এন্ড সন্স ২টি নিয়াজ ট্রেডার্স ২টি, আলম এন্ড ব্রাদার্স ১টি প্যাকেজে কাজ পায়। যা ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে। যার মধ্যে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স।

বালি উত্তোলন করে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরীন বিশাল অংশ
বালি উত্তোলন করে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরীন বিশাল অংশ

অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর ও সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় ৮শ মিটার হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং ৪ হাজার ৫শ মিটার ঢাল সংরক্ষণ বাঁধ কাজ পায় তারা। বাহারছড়া ৫শ মিটার বাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স, গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টার প্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৩শ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং ৯শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স। বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২০১৫ সাল থেকে দেখানো হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে।

বর্তমানে এই কাজের মধ্যে খানখানাবাদ ইউনিয়নের উত্তর অংশ মৌলভী পাড়ার কিছু অংশ বেড়িবাঁধ নির্মাণ শেষের পর্যায়ে। শুধু ব্লক বসানো হলেই তা শেষ হবে এবং চলতি মাসের শেষ পর্যায়ে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়। এদিকে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধে অভ্যন্তরীন অংশে বালি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, মাটি না পাওয়ার প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে টিকাদারগণ বালি দিচ্ছে। তাতে কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষিণ।

বেড়িবাঁধ নির্মাণ
বেড়িবাঁধ নির্মাণ

তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ ভিন্নমত পোষন করেন। তাদের মতে কোন কারণে একবার বালি যদি লিগ করে তাহলে মুহুর্তের মধ্যে সব গুলো খসে পড়ে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী বলেন, কাজে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বিশেষ তদারকি ছাড়াও ট্রান্সফোর্সের মাধ্যমে বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ উন্নয়নে কাজের তদারকি করা হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের সিডিউল ব্যতিরেখে কাজ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বাঁধের মধ্যে ওয়াটার বডি যেটা ভরাট করা হচ্ছে সাগর থেকে বালি তুলে তা কোন সমস্যা হবে না। এটা আরো বেশি শক্ত এবং মজবুত হবে। বেড়িবাঁধের দীর্ঘ ৭.২ মিটার লেভেল মাটি দিয়ে করার মত যথাযথ মাটি ও পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে তিনি কোন ধরনের কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতি না হওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এদিকে বাঁশখালীবাসীর স্বপ্নের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোন ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ না করার জন্য বাঁশখালীর আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্প্রতি তিনি এক বৈঠকের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করে দেন। যাতে করে কোন ধরনের কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতি না হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.