বারইয়ারহাটে সোনালী ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবী ব্যবসায়ীদের

0

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই:  চট্টগ্রাম জেলার প্রথম শ্রেণীর বারইয়ারহাট পৌরসভায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রয়ত্ব সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা চালুর দাবী তুলেছে এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মিরসরাই উপজেলায় ব্যাংকটির দুইটি শাখা থাকলেও সেগুলো উপজেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত হওয়ায় সরকারী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উত্তরাংশের জনগণ। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সরকারী ৪১ টি ভাতা দেওয়া হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে।

তাছাড়া পৌরকর পরিশোধ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চালান ফরমের টাকা জমাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য জনগণকে সোনালী ব্যাংকের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে ব্যাংকের শাখা দুইটিতে টাকা জমা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন গ্রাহকের দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। এতে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মসময়। দু’টি পৌরসভা ও ১৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে মিরসরাই উপজেলা গঠিত। প্রায় ৫ লাখ লোকের বসবাস উপজেলাটিতে। সোনালী ব্যাংকের মিরসরাই শাখা থেকে ফেনী মহিপাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যাংকটির আর কোন শাখা নেই।

তাই চট্টগ্রাম জেলার প্রথম শ্রেণীর বারইয়ারহাট পৌরসভায় ব্যাংকটির একটি শাখা চালু করা হলে সেখান থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে বলে দাবী ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, ব্যাংটির দুইটি শাখার একটি মিরসরাই পৌরসদরে এবং অপরটি নিজামপুর বাজারে অবস্থিত। শাখা দুইটি উপজেলার মধ্য ও দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। ৪৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মিরসরাই উপজেলায় মিরসরাই পৌরসভা ও ৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে মিরসরাই থানা। আর প্রথম শ্রেণীর বারইয়ারহাট পৌরসভা ও বাকী ৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় জোরারগঞ্জ থানা। মিরসরাই থানার আওতায় নিজামপুরে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও জোরারগঞ্জ থানার চৌধুরীহাট এলাকায় একটি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।

মিরসরাইতে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’। যেখানে ৩৫ হাজার একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে ছোট বড় ৫০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থান হবে ১৫ লাখ লোকের। মিরসরাই উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বারইয়ারহাট পৌরসভা।

জোরারগঞ্জ থানায় এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তর রড় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম’র ব্লেড কারখানা। যেখানে প্রায় দশ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বিএসআরএম ছাড়া মিরসরাই উপজেলার উপর দিয়ে দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যাওয়া মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। রামগড়ে ভারতের সাথে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

স্থলবন্দরের জন্য বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় একটি টার্মিনাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বারইয়ারহাট হয়ে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়ককে চার লেইনে রূপান্তরের জন্য অর্থবরাদ্ধ দিয়েছে একনেক। যেটি বাস্তবায়ন হলে সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দারা এক ঘন্টার মধ্যে বারইয়ারহাট হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসতে পারবে।

বারইয়ারহাট পৌরসভায় মাছ বাজারে প্রতিদিন বিকিকিনি হয় এক কোটি টাকার মাছ। পৌরসভার বাঁশ বাজার, কাঠ মার্কেটে লেনদেন হয় অর্ধকোটি টাকার বেশী। বৃহত্তর ফেনী নদী বালু ব্যবসায়ী সমিতির অফিস বারইয়ারহাট পৌরসভায় অবস্থিত। এছাড়া পৌর বাজারে ধান বাজার ও গরুর বাজার রয়েছে। বারইয়ারহাট পৌর বাজারে ৮ টি বেসরকারী ব্যাংকের শাখা রয়েছে।

জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জোরারগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রার অফিস, একটি মহিলা কলেজসহ ৩ টি কলেজ, ১৯ টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১১ টি মাদ্রাসা, অর্ধশত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০ টি ব্রিক ফিল্ড, ১ টি সিএনজি ফিলিং ষ্টেশানসহ ৪ টি ফিলিং ষ্টেশান। মিরসরাইয়ে অর্ধলাখেরও বেশী প্রবাসী রয়েছে। যারা প্রতিমাসে কোটি টাকার উপর রেমিটেন্স পাঠান। চট্টগ্রাম জেলার মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত মুহুরী প্রজেক্টের দূরত্ব বারইয়ারহাট পৌরসভা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার।

বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ৪ টি প্রাইভেট হাসপাতাল, ১৫ টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ারসহ প্রায় ৩ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও বারইয়ারহাটে গড়ে উঠেছে জেলা শহরের ন্যায় অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিভিন্ন বিপনী বিতান। ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে বারইয়ারহাট পৌরসভার গুরুত্ব অনেক। তাই পৌরবাজারে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপন হলে সরকার রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি জনগণকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারবে।

বারইয়ারহাট গ্রীণ টাওয়ারের পরিচালক সৈয়দ আলীম উদ্দিন বলেন, বারইয়ারহাট প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও এখানে সরকারী সোনালী ব্যাংকের কোন শাখা নেই। বারইয়ারহাট পৌর বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন কোটি টাকার উপর লেনদেন হয়। পৌর এলাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। পৌর এলাকায় সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা হলে সরকারী সেবা পেতে জনগণের আরো সহজ হতো।

বারইয়ারহাট পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন (ভিপি) বলেন, পৌর এলাকায় সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপনের দাবী দীর্ঘদিনের। এখানে বেসরকারী ৮-১০ টি ব্যাংকের শাখা থাকলেও সরকারী কোন ব্যাংকের শাখা নেই। বর্তমানে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা জনগণ সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। পৌর এলাকায় ৩ হাজারের অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া এখানের অনেক যুবক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। ব্যাংকের একটি শাখা হলে তাহলে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স আদায় করা সম্ভব হবে।

উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ইয়াছমিন আক্তার কাকলী বলেন, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিকভাবে মিরসরাই প্রচুর সম্ভাবনাময়। সরকারী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা জনগণ সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ব্যাংকের একটি শাখা হলে এলাকাবাসী ও ব্যাবসায়ীরা উপকৃত হবে।

সোনালী ব্যাংকের মিরসরাই শাখার ব্যবস্থাপক সুবাশিষ ঘোষ বলেন, উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ব্যাংকের একটি শাখা চালু করার জন্য বারইয়ারহাটের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। আমি বিষয়টি জেলা অফিসের মাধ্যমে হেড অফিসে জানাবো।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.