বিদেশগামী যাত্রীদের ফিটনেস পরীক্ষার নামে হয়রানি

0

দিলীপ তালুকদার : মধ্যপ্রাচ্য তথা গাল্ফের দেশগুলোতে যেতে খোদ স্বদেশেই শারীরিক পরীক্ষার নামে হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একদিকে গামকার অনুমোদিত প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের শারীরিক ফিটনেসের ছাত্রপত্র আর অন্যদিকে থানা পুলিশের ছারপত্র। এই দুই সংস্থার আর্থনৈতিক হয়রানিতে নাকাল বিদেশ যেতে ইচ্ছুক যাত্রীরা। চাহিদা মতো টাকা দিলে পজেটিভ রিপোর্ট মিলে আর না দিলে নেগেটিভ। আর স্ব স্ব থানা পুলিশের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেতেও লাগে জন প্রতি ৫হাজার থেকে ৮হাজার টাকা।

পুলিশের কাছে এই ছাড়পত্রের জন্য কোন টাকা দেওয়ার নিয়ম নাই। অথচ নির্ধারিত টাকা ছাড়া রিপোর্ট মেলে না। এখানে অনেকে আছেন যারা কয়েকবার বিদেশ থেকে এসছেন। ভিসা পরিবর্তনের জন্য দেশে এসে এ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের রেমিটেন্সের চাকা সচল রেখেছে তাদের উপর এই হয়রানি কেন।

সূত্র জানায়, জিসিসি এপ্রুভড্ মেডিক্যাল সেন্টারস্ এসোসিয়েশনের (জিএএমসিএ/গামকা) মনোনীত মেডিক্যাল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তালিকার মধ্যে রয়েছে, নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড়ে অবস্থিত এপেক্স ডায়গনস্টিক সার্ভিস প্রাঃ লিঃ, প্রবর্ত্তক মোড়ে চেকআপ ডায়গনস্টিক সেন্টারসহ ৩ টি ডায়গনস্টিক সেন্টার। গত ১৫ মে নতুন করে ৯ টি ডায়গনস্টিক সেন্টারকে অনুমোদন দেয়া হয়। তবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে প্রবর্ত্তক মোড়ে চেকআপ ডায়গনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ৩৪ টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে ৯ টি ডায়গনস্টিক সেন্টারকে অনুমোদন দেয়া হয় বলে গামকা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, জিসিসি ভূক্ত দেশগুলোতে যেতে হলে শ্রমিকদের গামকা অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। এখানে ৩শত টাকা দিয়ে শুধু এন্ট্রি স্লিপ নিতে হয়। রক্তের এইচআইভি, ইউরিন পরীক্ষা, জন্ডিস পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি দিতে হয় ৫হাজার ১শত টাকা। মহিলা শ্রমিকদের জন্য প্রেগনেন্সি টেস্টের জন্য আরো ১শত টাকা বেশী দিতে হয়। টাকা বুঝে নেবার পর তাদের নির্ধারিত ডায়গনস্টিক সেন্টারের স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে টেষ্ট করিয়ে আনতে বলা হয়। অনেক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, এসব টেষ্ট অন্যত্র করাতে লাগে মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। নগরীর দামপাড়া এলাকায় অবস্থিত গামকা অফিসে ফিটনেস স্লিপ নেওয়া, ছবি তোলা, সার্ভারে তথ্য এন্ট্রি করার জন্য ভোর থেকে রাত ১০ টা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক নারী পুরুষ শ্রমিকদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪শত যাত্রী পরীক্ষা করার জন্য এন্ট্রি করেন বলে গামকা সূত্র জানায়।

জানাগেছে, উক্ত গামকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডকেটের সদস্যদের কাছে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বিপুল সংখ্যক বিদেশগামী শ্রমিক। এসমস্ত ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা শ্রমিকদের প্রতারিত করছে। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরাও তাদের কথা মতো বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হয়। কারন সময় মতো রিপোর্ট না পাওয়া গেলে ভিসার মেয়াদও চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে পজেটিভ রিপোর্ট নেন।

সূত্র জানায়, গত মাসে চেকআপ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার প্রায় ২০ জনের রিপোর্ট আনফিট বলে সিল মেরে দিয়ে দেয়। পরে উক্ত ২০ জনকেই পজেটিভ বলে রিপোর্ট দিয়ে দেয়। এই ২০ জনের কাছ থেকেই অতিরিক্ত ৫হাজার থেকে ৮হাজার টাকা করে নিয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে চেকআপ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কার্যক্রম গামকা কর্তৃপক্ষ ৩ মাসের জন্য বন্ধ করে দেন। গত ৪ এপ্রিল থেকে গামাকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সমস্ত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দালাল, নিরাপত্তা প্রহরী ও পুলিশ টাকার মিনিময়ে সিরিয়াল দিচ্ছেন। এদের হাতে টাকা দিলে সিরিয়ালের প্রয়োজন পড়ে না। সিরিয়াল ছাড়াই লোক ভিতরে ঢোকায়। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। প্রতিটা সেন্টারেই রয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যদের অবাধ পদচারনা। তাদের সাথে রয়েছে অফিসের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী। তাদের কাছে বিদেশ যাত্রীরা একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে।

আর একজন ভুক্তভোগী আব্দুল আলিম ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ইংরেজী তারিখে গামকার স্লিপ নিয়ে আগ্রাবাদ এপেক্স ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে যায়। ৫হাজার ১শত টাকা দিয়ে টেষ্ট করায়। তার সিরিয়াল নং এসএ-১৬-১২-৪১৬, জিসিসি কোড নং ০৫০২০৫। তাকে প্রথমে তার স্লিপের উপর আনফিট সিল মেরে দিয়ে স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেয়। কি কারনে আনফিট, তার কোন রিপোর্ট দেয়া হয় না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জিজ্ঞাসা করলেও কোন উত্তর এখানে মিলে না। পরবর্তীতে তিনি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পজেটিভ রির্পোট নিয়ে সৌদি আরব যায়। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে আছেন।

জানা যায়, এখান থেকে পজেটিভ রির্পোট প্রথমে যায় এসপি অফিসে। ওখান থেকে সংশিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। এই রির্পোট আনতে গেলে থানায় দিতে হয় ৪হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। থানায় টাকা না দিলে রির্পোট মিলে না।

ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এ ধরনের হয়রানির কারনে অনেকের ভিসার মেয়াদও খালাস হয়ে যায়। অথচ এ্ই ভিসা বের করতেও কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়। অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সংশ্লিষ্ট ডায়গনস্টিক সেন্টারের সাথে সমঝোতা করে চাহিদামত টাকা পরিশোধ করে রির্পোট নিতে বাধ্য হয়। তারা আরো বলেন, প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের রেমিটেন্সের চাকা সচল রাখেন। তাদের বিদেশে যেতে এতো হয়রানি কেন। তারা এহেন হয়রানি বন্ধের দাবী জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.