বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাধা নাকি ঠিকাদারের গড়িমসি

0

জাহেদুল হক,আনোয়ারা::চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পোল্ডারে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। অনুন্নয়ন রাজস্ব অর্থায়নে কাজটি পেয়েছে মোস্তফা এন্ড সন্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা এলাকাবাসীর বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে স্থানীয়রা বলছেন কাজে বাধার অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারের লোকজন কাজে ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়,ভূমি প্রতিমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ,জিও ব্যাগ,জিও টিউব ও ব্লক পূন:স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুরের গহিরা মালিপাড়া থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত ১২৬৭ মিটার অংশে এসব কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে স¤প্রতি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে পাউবো কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এরপর গত ২১ মার্চ মঙ্গলবার থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় জমির মালিক আবদুন নুর জানান,দিনের বেলায় বেড়িবাঁধের খাদ থেকে মৃত বালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছে। জমির মালিকদের কোন কিছু না বলে গভীর রাতে এস্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি তুলে নিচ্ছে। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে মাটি খননের ফলে ফসলি জমিগুলো পুকুরে পরিণত হচ্ছে। তাছাড়া পাউবো একরের এক-দেড়শ ফুট বাইরে গিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছে। যে কারণে এলাকাবাসী (জমির মালিকেরা) তাদের বাধা দেয়।
পাউবোর এক কর্মকর্তা জানান,যেখানে জলোচ্ছ্বাসে এলাকাটি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে,সেখানে এলাকাবাসী কাজে বাধা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। থোক বরাদ্দের কাজ হওয়ায় হয়তো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গড়িমসি করছে। কারণ হিসেবে তিনি আরো জানান, থোক বরাদ্দের অর্থ ছাড় সাপেক্ষে কিস্তিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেয়ে থাকে। তার আগে ঠিকাদার থেকে কাজ বুঝিয়ে নেয় পাউবো। বরাদ্দের এসব টাকা ছাড় পেতে সময় লাগবে অন্তত তিন বছর। এরইমধ্যে আবারো জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেসে গেলে পুনরায় বাঁধটি নির্মাণ করতে হবে ওই ঠিকাদারকে। এ কারণে হয়তো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ না করার জন্য অজুহাত দেখাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বর্ষা মৌসুমে যাতে নদ-নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে জনপদ ভাসাতে না পারে সে জন্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নদীর তীর সংরক্ষণে প্রতিবছর অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দেওয়া মোট বাজেটের প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় এ খাতে। কিন্তু সময়মতো প্রকল্পের টাকা না পাওয়া,বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়ায় এবং নির্মিত বেড়িবাঁধ সংস্কারে কোনো টাকা বরাদ্দ না দেওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে সুফল পাচ্ছে না সরকার ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। সাগর ও শঙ্খের ভাঙ্গন রোধে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও অনেক ক্ষেত্রেই কাজের কাজ কিছু হয় না। বরং দুর্নীতির কবলে পড়ে বিভিন্ন প্রকল্পের পুরো অর্থ জলে যায়। আর প্রভাবশালী ঠিকাদাররা কাজ শেষ না করেই টাকা তুলে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম পাউবোর সদস্য মো.আমিন শরীফ বলেন,বাঁধ নির্মাণ কাজে এলাকাবাসী বাধা দেয়নি,সমন্বয়ের অভাব। ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছেমতো কাজ করায় এসব হচ্ছে। তারা জমির মালিকদের সাথে সমন্বয় না করে কাজ করছে। এতে জমির মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ দাবি তুলতে গিয়ে এলাকাবাসীকে মামলার হুমকি দিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। বিষয়টি সমন্বয় করে কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশিদার মোহাম্মদ ইমরানের মুঠোফোনে কল করা হলে পরিচয় অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন তিনি। রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম জানান,মাটি কাটার টাকা দাবি করে স্থানীয় একটি মহল এসব করছে শুনেছি। তবে কারা বা কার ইন্ধনে এসব হচ্ছে তা জানি না। যেভাবে হোক বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করতে হবে।
জানতে চাইলে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী কায়ছার উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৬৭ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য জানুয়ারিতে টেন্ডার আহবান করা হয়। আর ৯ মার্চ এসব কাজের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোস্তফা এন্ড সন্স। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ শুরু করলে স্থানীয়দের বাধার অভিযোগ উঠে। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষ বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছে। আশা করছি খুব শিগগির আবার কাজ শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহার বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.