ব্যপক প্রস্তুতি মৎস্য ব্যবসায়িদের, পরিবহন সমস্যার আশঙ্কা

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি::কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১ লা মে মধ্যরাত থেকে মাছ শিকার বন্ধ করা হয়। দীর্ঘ তিন মাস পরে আজ ১লা আগষ্ট আবারো মৎস্য আহরণ ও পরিবহন শুরু হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ থেকে।

এই মৎস্য আহরণ ও পরিবহনকে কেন্দ্র করে ব্যপক প্রস্তুতি নিতে দেখা গিয়েছে মৎস্য ব্যবসায়ি ও জেলেদেরকে। রাঙামাটির বিএফডিসি মৎস্য পরিবহন ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ভোর ৬টা থেকে কাপ্তাই হ্রদেও বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ আসা শুরু করেছে।

মৎস্য ব্যবসায়ি জহিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ তিন মাস পরে মাছ ব্যবসা চালু হচ্ছে। আমরা বছরে নয় মাস এই ব্যবসা করতে পারি। তাই দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে আবারো মৎস্য ব্যবসা চালু করার জন্য আমরা সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি মৎস্য আহরণে কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হবে না। কিন্তু পরিবহন নিয়ে খুবই আশঙ্খায় রয়েছি। রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রামের এখনো পরিপূর্ণ পরিবহন যোগাযোগ চালু হয় নি। এছাড়া রাত আট টার পরে কোন পরিবহন যাওয়া যাবে না এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে। ফলে আমরা খুবই অসুবিধায় পরে যাবো। কারণ জেলেরা দেখা যায় দিনে ২-৩ বেলা জাল ফেলে কিন্তু পরিবহন সমস্যার জন্য জেলারা এখন একবারের বেশি জাল ফেলতে পারবে না। তাছাড়া আমরা বড় গাড়ি মৎস্য পরিবহন’র ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবো না, ছোট গাড়ি দিয়ে মৎস্য পরিবহণ করতে হবে। যার ফলে পরিবহন খরচ বেশি হবে। এসব সমস্যার ফলে দেখা যাবে মাছের দামের উপরে প্রভাব পরছে বলেও মন্তব্য করেন এই মৎস্য ব্যবসায়ি।
মৎস্য ব্যবসায়ি মো: কামাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ তিন মাস পরে মৎস্য আহরণ আবারো চালু হচ্ছে এটার জন্য আমরা খুবই খুঁশি। আশা করছি এইবারে ব্যবসা ভালো হবে। কিন্তু রাস্তার সমস্যা আমাদের খুবই চিন্তাই ফেলে দিয়েছে। বড় গাড়ি দিয়ে মাছ পরিবহন করা যাবে না, ফলে ছোট পরিবহন ব্যবহার করতে হবে। এতে করে পরিবহন খরচ বেশি পরে যাবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই বিএফডিসিতে মাছ প্যাকিং সেট’র সমস্যা রয়েছে। আমরা সঠিক ভাবে মাছ প্যাকিং করতে পারি না। যার ফলে আমাদের নানাবিদ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
মৎস্য ব্যবসায়ি ধন ত্রিপুরা বলেন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। বছরে নয় মাস আমরা ব্যবসা করতে পারি তাই সকল প্রস্তুতি সেরে নিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাছ পেকিং করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এছাড়া আমরা মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রে আশঙ্খায় রয়েছি। কারণ রাস্তার কাজ এখনো শেষ হয় নি। বিকল্প যে পথ তৈরি করা হয়েছে এতে ১ টনের বেশি বড় গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সে জন্য আমাদেরকে ছোট গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। যার কারণে আমাদের পরিবহন খরচ বেশি হবে। পরিবহন খরচ পুশিয়ে নিতে মাছের দামের উপরে প্রভাব পরতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই মৎস্য ব্যবসায়িও।

রাঙামাটি বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক কমান্ডার আসাদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ তিন মাস মে থেকে জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ ও পরিবহণ নিষেধ ছিলো। আজ পহেলা আগষ্ট থেকে মৎস্য আহরণ ও পরিবহণ শুরু হয়েছে। ভোর থেকে মাছ ঘাটে আসতে শুরু করেছে। আশা করছি গত বছরের তুলনায় এইবার আরো বেশি মৎস্য আহরণ ও পরিবহণ করা সম্ভব হবে। রেকট ছাড়িয়ে যাওয়ার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য গত ১১ এপ্রিল রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা সংক্রান্ত এক সভা হতে ১লা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ ও পরিবহন’র উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মাছ শিকার বন্ধকালীন হ্রদের মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছিলো।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.