ভরা মৌসুমেও ধরা পড়ছে না ইলিশ
কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড:: ইলিশ মৌসুম শুরুর আগে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল বুননের কাজ করেছিলাম যাতে ইলিশ মৌসুমে তা শোধ করে দিতে পারি।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ ইলিশের ভরা মৌসুমেও মাছের দেখা পাচ্ছি না আমরা। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেছিলেন সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বাবুল জলদাস। জুলাই থেকে অক্টোবর হচ্ছে ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম।
এ সময়ে হাট-বাজারে ইলিশ মাছের কেনাবেচা চলে জমজমাট। দামটাও থাকে কিছুটা নাগালের মধ্যে।
এখন জুলাই মাস শেষ হয়ে আগষ্ট মাস চলছে কিন্তু এই ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন সীতাকুণ্ডের শতাধিক জেলে।
সাগরে আসা- যাওয়ার খরচ পর্যন্ত উঠছে না। দাদনের টাকা আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
জেলেরা জানান, এই সময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা কিন্তু সাগরে জাল ফেলে কোন ইলিশ ধরা পড়ছে না। যা সামান্য মাছ পাচ্ছি তা বিক্রি করে খরচের টাকাও উঠছে না।
এর মধ্যে দাদন ব্যবসায়ীদের কিভাবে দেবো ? এখন দুই-তিন দিন সাগরে কাটিয়ে এক টুকরি মাছ পর্যন্ত ভরছে না। অথচ একটি বোড নিয়ে সাগরে গেলে তেলসহ অনেক টাকা খরচ।
সে হিসেবে পযাপ্ত মাছ না পেলে খরচের টাকাটাও উঠেনা। অনেকে দাদনের টাকা নিয়ে সাগরে গেছেন। তাঁদের অবস্থা খুবই খারাপ। সুদ বাড়ছে, কিন্তু আয় নেই।
সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফেরিঘাট গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে জেলেরা মলিন মুখে বেড়িবাঁধের ওপরে উঠছেন মাছ নিয়ে। প্রতি জন জেলের হাতে একটি করে মাছের টুকরি। কারও টুকরিতে তিন-চারটি, কারও টুকরিতে পাঁচ-ছয়টি ইলিশ মাছ রয়েছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে জোড়আমতল,বার আউলিয়া, শীতলপুর, ভটিয়ারী উপকূল এলাকায় ।
কেন ভরা মৌসুমেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, এ প্রসঙ্গে কুমিরা ঘাট এলাকার জেলে সুমন দাশ জানান, হয়তো শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের কারণে এমনটা হতে পারে, কারণ জাহাজ থেকে যে কালো তেল সাগরে পড়ে তার ফলে পানি দুষিত হয়ে যায় তাই মাছ কাছে আসতে চাই না, অন্যত্র চলে যায়।
জাহাজের বজ্যের কারণে সাগরের এই অংশে মাছ কমে যাচ্ছে। শুধু ইলিশ নয় পানি দূষিত হওয়ার ফলে সাগরের অন্যান্য মাছও কমে গেছে, আগের মতো বিভিন্ন ধরণের মাছ জালে ধরা পড়ে না।
এই অবস্হায় জেলেদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সীতাকুণ্ডের অনেক জেলে পেশা পরিবর্তন করেছে বলে জানান, বার আউলিয়া এলাকার জেলে পাড়ার হরি রঞ্জন জলদাস।