ভারী বর্ষণে চকরিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত: বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

0

বশির আল মামুন,চকরিয়া(কক্সবাজার):: টানা তিন দিনের মুষলধারে বৃষ্টি ও মাতামুহুরী নদীর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও জোয়ারের পানি ঢুকে সপ্তাহের ব্যবধানে চকরিয়া উপজেলার নিম্মাঞ্চল আবারো প্লাাবিত হয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভা ও উপকূলীয় এলাকা সহ ১৮ ইউনিয়নের অনেক ঘর-বাড়িতে ঢলের পানি ও জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় চকরিয়ার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাতামহুরী নদীর পানি বর্তমানে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

চরমঝুকির মধ্যে রয়েছে চকরিয়া পৌর শহর রক্ষাবাধঁ ও ১ নং ঘুনিয়া –দিগরপানখালী গাইডবাধঁ।

গত রবিবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিনদিন মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় চকরিয়ার আভন্তরীন অনেক সড়ক পানিতে ডুবে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এতে উপজেলা সদরের সাথে গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান,

গত রবিবার দিবাগত রাত থেকে ভারী বর্ষণে ও মাতামহুরি নদীর বানের পানিতে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আবারো নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

এরমেধ্যে বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর বিএমচর, শাহারবিল, বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের প্রায় এলাকা ঢলের পানিতে ঢুবে গেছে।

এসব এলাকার অনেক ধর্মীয় ও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্টান সহ প্রায় ১৫ হাজার ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

মঙ্গলবার ও সারাদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় গত তিনদিনে এসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

ঠিকমতো কোথাও যাতায়ত করতে পারছে না। বানের পানি নতুন করে প্লাবিত হওয়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

অতি বর্ষণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আভ্যন্তরিণ সড়কে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

অনেক স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এরমধ্যে বেতুয়াবাজার সড়ক, বহদ্দারকাটা সড়ক, মানিকপুর সড়ক, হারবাং, বরতইলীতে পাহাড় ধসে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল নাগাদ দেখা গেছে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদীর দু’পাড়ে বসবাসরত মানুষকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।

চকরিয়া পৌরশহরে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অতিবর্ষণের পানি সহজেই নিষ্কাশন হতে না পেরে পৌরসভার হালকাকারা, জেলেপাড়া, কাজীর পাড়া, চরপাড়া, বিমানবন্দরপাড়া, ফুলতলী, করাইয়াঘোনা, নামার চিরিঙ্গা, খোয়াজনগর এলাকায় জলবদ্ধতা সৃস্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

১, ২, ৩,৪,৫, ৮ ও ৯ নং ওর্য়াডের অনেক বাড়ি-ঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে পানি ঢুকে পড়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে দেখাগেছে মাতামহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত বন্যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া কলেজ গেইট ও খুটাখালী গ্রামীন ব্যাংক এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

তাছাড়া ও চকরিয়ার চিরিংগা- কৈয়ারবিল সড়ক, চিরিংগা- কাকারা সড়ক, চকরিয়া-মগনামা সড়ক ও চিরিংগা-বদরখালী সড়ক, সহারবিল -বেতুয়াবাজার কেবি জালাল উদ্দিন সড়ক

কোনাখালী- বাংলাবাজার সড়ক, ভাংগারমূখ-দিগরপানখালী সড়ক(পাউবোর বেড়ীঁবাধ), সহ আভন্তরীণ সড়কের একাদিক স্থানে পানিতে ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।


এ ছাড়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের চরন্দ্বীপ, শাহার বিলের রামপুর, পশ্চিম বড়ভেওলা, বদরখালী,ডেমুশিয়া, খুটখালী এলাকার হাজার হাজার একর চিংড়ী ঘের জোয়ার ও বানের পানিতে একাকার হয়ে গেছে।

চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম জানান,

অতিবর্ষণে ও মাতামুহুরী নদী দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বরইতলীর গোবিন্দপুর, কাকারার শাহওমরাদ, মানিকপুর কৈয়ারবিল এলাকায় আবারো নতুন করে বানের পানি ঢুকে পড়েছে।

কাকারা সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো পযন্ত কোন বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করেনি।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, গত তিনদিন ধরে চকরিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

এ অবস্থার কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। চরম ঝুকির মধ্যে পড়েছে পৌর শহর রক্ষা বাধঁ।

ফলে নদীর পানি আর বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে পৌরসভার একাধিক নিমাঞ্চল।

মেয়র বলেন, গতকাল দুপুর থেকে পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর বাঁধ এলাকা অতিক্রম করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে নদীর পানি।

স্থানীয় মজিদিয়া মাদরাসাসহ আশপাশ এলাকার অন্তত শতাধিক পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ার কারনে লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে।

উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে বেড়ে চলছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি।

ইতোমধ্যে নদীর পানি ঢুকে তাঁর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে গতকাল সকাল থেকে পানি প্রবাহ বেড়েছে।

এ অবস্থার কারনে নদীর শাখা খাল হয়ে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে।

এলাকার দুর্গত জনসাধারণ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়ার কারনে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী নীচু এলাকার লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি।

এ অবস্থার কারনে দুই ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে ও জোয়ারের পানি প্রবাহ বেড়েছে।

এ অবস্থার কারনে উপজেলার রামপুর চরন্দ্বীপের চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প আরারো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে চিংড়ি প্রকল্প তলিয়ে গেলে মাছ ভেসে গিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে চিংড়িজোনের হাজারো চাষী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.