ভারী বর্ষণে ভেসে গেছে কোটি টাকার মৎস্য

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত তিন দিনের ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত মৎস্য পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষীরা চরম হতশায় ভুগছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় রবিশষ্য পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও শ্রীমতি খালের বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে ভাটিখাইন, ছনহরা, আশিয়া ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক মাটির তৈরী ঘর বাড়ী ধ্বসে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক খুঁিট প্রবল বাতাসে খসে পড়ায় উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পৌর সদরের বিভিন্ন সড়ক ও আবাসিক এলাকা এবং থানা হাটে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় জনদুভোর্গ চরম আকার ধারণ করেছে।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে গত রবিবার সকালে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে তিন দিন ধরে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের প্রায় কয়েকশত মৎস্য চাষের পুকুর ও পোনা মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেক বাড়ী ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে রবিশষ্য পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে চাষীরা। এছাড়াও পটিয়া পৌরসদরের রামকৃষ্ণ মিশন সড়কের স্থায়ী জলাবদ্ধতার সাথে গতকাল যোগ হয়েছে নতুন থানা হাট, ষ্টেশন রোড, বিওসি রোড ও শাহ আমির স্কুল এবং হাসপাতাল সড়ক, আদালত সড়ক, ডাকবাংলো মোড়, ৫নং ওয়ার্ড হাজী পাড়া, গুয়াদন্ডী, গোবিন্দারখীল, শেয়ান পাড়া, বাহুলী, কচুয়াই, ভাটিখাইন সহ শতাধিক গ্রামে হাটু পরিমাণ ও ক্ষেত্রভেদে কোমড় পরিমাণ পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় জন দুর্ভোগ চরমে পৌছে।

পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নের ফারুকী পাড়ার ঈসা ফারুকী জানান, প্রবল বর্ষণ ও শ্রীমতির ফুলে ফেঁফে উঠা পানি ভাটিখাইন বাইপাস সড়কের ব্রিজ নির্মাণস্থল দিয়ে বেড়ি বাধ ভেঙ্গে কচুয়াই এলাকায় ঢুকে পড়লে ৫শতাধিক ঘর বাড়ী প্লাবিত হয়। এছাড়াও এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকার মৎস্য সম্পদ ও পোনা ভেসে যায়। ভাটিখাইন গ্রামের রানা সেন গুপ্ত জানান, তার বাড়ীর প্রায় ১০টি মাটির ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে এবং তার নিজের বাড়ী সহ অধিকাংশ ঘর বাড়ীতে পানি ঢুকে মূল্যবান মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। চক্রশালার ওয়াশিল ফকির মৎস্য হ্যাচারীর মালিক এম.এম এজহার বলেন, তার প্রায় ৮টি পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। কুসুমপুরার বারী এগ্রো ও মৎস্য হ্যাচারীর মালিক বজলুল বারী চৌধুরী জানান, এতো বেশী পানি এসেছে যে কোনো পুকুরকেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। বর্তমানে তার ৮টি পুকুরের ১০/১২ লাখ টাকার মৎস্য সম্পদ পানিতে ভেসে গেছে। কেলিশহরের কৃষক খায়ের আহমদ বলেন বৃষ্টির পানিতে কয়েশ একর জমির ফসল এখন পানির নিচে। যদি ২/১ দিনের মধ্যে পানি নেমে না যায় তাহলে সবজি আর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এতে সবজির দাম ৪/৫ ঘুন বৃদ্ধি পাবে। পটিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, পানিতে ব্যাপক মৎস্য পুকুর ভেসে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনের পর সঠিক তথ্য দেওয়া যাবে। পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, পানিতে রবিশষ্য সহ বিভিন্ন চাষাবাদের ফলন এখন পানির নিচে রয়েছে। যদি ২/১ দিনের মধ্যে পানি নেমে না যায় তাহলে সবজি চাষীদের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। ভাটিখাইন ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, প্রবল বর্ষণে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পুরোনো অনেক মাটির ঘর ধ্বসে পড়ে, মৎস্য সম্পদ ভেসে যায় এবং বিভিন্ন রবিশষ্য পানির নিচে তলিয়ে যায়।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্ষণে মৎস্য চাষ ও রবিশষ্য ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। এছাড়াও ১৭ ইউনিয়নে কয়েকটি ঘর ভেঙ্গে বিধ্বস্ত হয়েছে। বর্ষণ নামলে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.