ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকুক
আবছার উদ্দিন অলি :: রমজানকে ঘিরে সারাদেশে চলছে ভেজালের মহা উৎসব। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত চলছে ভেজালের সাথে বসবাস। যার ফলে নানা রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কোমলমতি শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না ভেজাল খাবার, ভেজাল ঔষধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। যত্রতত্র ভেজাল, বিষাক্ত, ফরমালিনযুক্ত খাবার খেয়ে আগামী প্রজন্মকে সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠার পথকে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে।
সবধরনের মাছ, মাংস, মুরগী, ডিম, আম, জাম, কাঁঠাল, খেজুর, কিচমিচ, সেমাই, ঘি, কলা, পেপে, লিচু, কমলা, আপেল, মিষ্টি, ঔষুধ, ঘি, মসলা, তৈল, বিস্কুট, নুডুস, চিপস, জুস, পাউরুটি, চকলেট, কোমল পানীয়, মিনারেল ওয়াটার, তরমুজ, আনারস, পেয়ারা, আঙ্গুর, টমেটো, শাক-সবজি, মৌসুমী ফলের নামে বিশ খাচ্ছি। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা সব ফলেই রাসায়নিক দ্রব্য ফরমালিন মিশ্রিত। বিষাক্ত খাবার খেয়ে ক্যান্সার, জন্ডিস, ডায়বেটিস, হৃদরোগসহ নানা রোগে ভুগছে সব বয়সী মানুষ।
ঘরে ঘরে ঔষধের বক্স। ঔষধের দাম বাড়ছে খেয়াল খুশি মত। নজরদারি নেই ঔষধের মান ও বিক্রিতে। প্রতিদিন ঔষধ কেনা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। বছরে তিন লক্ষ লোক এ ধরনের ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে কিডনী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঔষধের দোকানে যখন নকল ও ভেজাল ঔষধ পাওয়া যায় তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জনসাধারণ। প্রতিদিন আয়ের ৪০% চিকিৎসা ও ঔষধ খাতে ব্যয় হচ্ছে। ডাক্তার ফি, প্যাথলজি টেষ্ট ও ঔষধ কিনতে কিনতে মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।
শুধু ফরমালিনই নয়- প্রায় সব খাদ্যেই উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে বাজারজাতকালীন পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপকরণ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সবমিলিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যে, কোনো খাদ্য। এছাড়াও এসব পণ্যে উচ্চমাত্রার প্রিজারভেটিভ, ক্ষতিকর কৃত্রিম রঙ, উচ্চমাত্রার ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট ও ও মোল্ডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফুড কালার ১০-১২টা, ব্যবহার করতে পারব বলা হলেও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ফুড কালারের দোকানে ২শ থেকে ৭ হাজার টাকা কেজি দামের কালার বিক্রি হচ্ছে।
ল্যাবরেটরি কেমিক্যাল কিনতে যান, সেখানেও ১টা ৫০০ টাকা তো আরেকটা ৪ হাজার টাকা। কোয়ালিটির ডিফারেন্সটা এভাবেই মেশায়। এগুলো মনিটরিং করতে হবে। ফুড কালার এক অর্থে সবই খারাপ। কিছু কালার রয়েছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো অতি মুনাফার জন্য কমদামি রঙগুলো ব্যবহার করছে।
যেমন- কাপড়ের রঙ জিলাপিতে মেশানো হচ্ছে। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোর কোনটাতে কী প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা যাবে, কত পরিমাণে করা যাবে বা অন্য কোনো উপাদান ব্যবহার করা যাবে কিনা সেগুলো সম্পর্কে একটা গাইডলাইন দেয়া আছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে সেগুলো যথাযথ পালন করা হচ্ছে না।
আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো নির্ধারিত মাত্রার ৩ থেকে ৫গুণ বেশি প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিষ্টেট, জেলা প্রশানের নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। এ কাজে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, বিএসটিআই, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, একযোগে কাজ করছে। ভেজাল দ্রব্য বিক্রিত প্রতিষ্ঠান গুলোকে পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করণ নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে চলতি মাসে ভেজাল বিরোধী অভিযানে অভিজাত এলাকার নামী-দামী হোটেল রেস্তোরা শপিং মলকে নোঙরা খাবার, ইফতার বিক্রি, ভেজাল খাবার পরিবেশনের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও বাজারে নিম্নমানের ভেজাল ঘি কারখানা বন্ধ ও বিক্রিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব ভেজাল ঘি দিয়ে রান্না করা খাবার খেয়ে জনসাধারণ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মূলত বিয়ে, গায়ে হলুদ, মেহেদী, বৌ-ভাত, ওয়ালিমা সহ নানা রকমের অনুষ্ঠানে ভেজাল ঘি বাবুচিদের যোগসাজশে বিক্রয় হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের এই সাহসী ভেজাল বিরোধী অভিযানের কারণে মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে সচেতনতা, সজাগ হয়েছে নগরবাসী। জরুরী ভাবে এই ভেজাল বিরোধী অভিয়ান নিয়মিত ভাবে ৬মাস চলতে থাকলে ভেজাল দ্রব্য বিক্রি বিপনন বন্ধ হয়ে যাবে এবং এই বিষয়ে নগরবাসী সোচ্চার হয়ে উঠবে।
নগরবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে নগরবাসী। রমজানকে সামনে রেখে ফুটপাত দখল, অবৈধ যত্রতত্র পার্কিং, যানজট, অতিরিক্ত দামে শপিং মলে মালামাল বিক্রি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, মার্কেট গুলোতেও অভিযান চালানো প্রয়োজন।