মাতামুহুরী খুলতে পারে পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত

0

বশির আলমামুন,চকরিয়া(কক্সবাজার)::দুইদিকে উচুঁ নিচু পাহাড় আর পাহাড়। মাঝখানে আকাঁ বাকাঁ পথে নদী সচ্ছ ও নীল জলরাশিতে টইটম্বুর। নদীতে নৌকা অথবা স্পীড বোটে ভ্রমনের সময় উপভোগ করবেন দু’পাশের পাহাড়ে রাশিরাশি গগনচুম্বি হরেক রকম বনজ গাছগাছালি, বাশঁঝাড়, ঝাঁড়ফুল, বনো ফুলের মৌমৌ গন্ধ দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহে ঘন আচ্ছাদিত বন এ যেন প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্ঠি। আর বনের এই পিনপতন নিস্তব্দতা ভাঙ্গে খুব ভোরে পূর্বাকাশে সূর্যের লাল আভা যখন উকি মেরে গাছপালা ঢাল আর পাতা ভেদ করে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তখন শুরু হয় পাকপাখালির কিছিরমিছির আওয়াজ, ঝিঝি পোকার শব্দ, বন মোরগ, হরিন, খেক শিয়াল, বন্য শুকর,বন কুকুর সহ অসংখ্য বন্য প্রাণীর ডাক। আর এরকম প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে কার না মন চায়। শহরের যান্ত্রিকজীবন ও কুলাহল মূখর কর্মব্যস্তার ফাঁকে নিজেকে হানিকের জন্য এ রকম নির্জনতায় বিলিয়ে দিতে ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতি প্রেমিরা একবার হলেও ছুটে আসতে পারেন এমন একটি দর্শনীয় জায়গায়।

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ছায়াঘেরা প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে ও মাতামহুরী নদীর তীরে অবস্থিত শতাব্দির এতিহ্যবাহি প্রাচীন জনপদ মানিকপুর গ্রামের দক্ষিনে ইয়াংছারটেক থেকে পার্বত্যজেলা বান্দরবরে লামা পর্যন্ত নদী পথে ৮ কি: মি: নৌকা ভ্রমনটি যেন পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠবে নবদিগন্তের শুভ সুচনা।

মিয়ানমারের আরাকান পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি হয়ে বান্দরবান জেলার অসংখ্য ছোট বড় পাহাড় অতিক্রম করে কক্সবাজারের চকরিয়ার বুকচিরে বঙ্গোপসাগর চ্যানেলের সাথে মিলিত হয়েছে কক্সবাজারের অন্যতম প্রধান নদী মাতামুহুরী। সু-উচ্চ দিগন্তজোড়া সবুজ পাহাড় ও উপত্যকা চিরে বয়ে চলা এ নদীর দীর্ঘ গতিপথের বাঁকে বাঁকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানকার নিসর্গ দেখে বিমুদ্ধ দেশি-বিদেশি পর্যটক। দার্জিলিং বা জাফলং এর চেয়ে কম নয় আমাদের মাতামুহুরী নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। এমনই মন্তব্য ওই অঞ্চল ঘুরে আসা প্রকৃতি প্রেমিকদের। এলাকাবাসীর অভিমত নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিয়তাসহ এই অঞ্চলকে পর্যটনের আওতায় এনে ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা চালু করা গেলে মাতামুহুরী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প এই অঞ্চলেএকটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।

আরাকান পর্বতমালা থেকে নীচে নেমে আসা মাতামুহুরী নদী বান্দরবানের আলীকদম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দীর্ঘ ২৮৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে চকরিয়া হয়ে মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে কক্সবাজারের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী মাতামুহুরী। আর নদীর দু’তীরে সুদীর্ঘ পথের সু-উচ্চ পাহাড়ের ঢালুতে ও উপত্যকার মাঝে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য লোকালয়; যেখানে পাহাড়ী ও বাঙালী জনগোষ্ঠীর আদি জীবনধারা বহমান। প্রকৃতির ঢেলে সাজানো এসব বৈশিষ্টই কাছে টানছে পর্যটকদের। পাহাড় আর নদীর সহবস্থানের এই অঞ্চলটি একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত থাকায় এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি ঘটায় বর্তমানে সড়ক অথবা নদীপথে যোগাযোগ খুবেই সহজ। যার কারণে ইয়াংছার টেক থেকে লামা পর্যন্ত নদী পথে মাতামহুরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পর্যটকদের দিনদিন আকৃষ্ঠ করছে বেশী। ইদের ছুঠি কিংবা অন্যান্য ছুঠিতে প্রকৃতি প্রেমি পর্যটকরা কিছুক্ষনের জন্য নদীর সচ্ছ পানিতে নৌকায় ভ্রমন ও নিজেকে বিলিয়ে দিতে ছুঠে আসেন এ জায়গায়। নদী পথে ভ্রমনে সময় নৌকা থেকে নদীর নীল জল হাত দিয়ে মূখে ও গায়ে ছিঠিয়ে দিতে দিতে কখনযে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায় পর্যটকরা। এ কারনেই পর্যটন সম্ভবনায় অত্র এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবী জোরদার হয়ে ওঠছে। প্রাথমিকভাবে সীমিত এলাকা নিয়ে এই অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনার সূচনা করা যেতে পারে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা মাতামুহুরী তীরের সন্তান, তরুন উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফারুক মো: আমিনুল কবির চৌধুরী মনে করেন- প্রাথমিকভাবে মাতামুহুরী নদীর মানিকপুর থেকে লামা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাকে ঘিরে মাতামুহুরী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের সূচনা হতে পারে।

তিনি বলেন- কক্সবাজারের মানিকপুর থেকে বান্দরবানের লামা পযন্ত মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে রয়েছে সু-উচ্চ পাহাড়। পাহাড়ে রয়েছে নানা জাতের চিরহরিৎ বৃক্ষ। পাহাড়ের মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলা এই নদীর দু’তীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার। পাহাড়ের ঢালে অথবা উপত্যকায় রয়েছে বাঙালী লোকালয় ছাড়াও মার্মা ও মুরং পল্লী। নৌ পথে এসব লোকালয় একটি অপরটির সাথে যুক্ত। রয়েছে নৌ-পথের যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুবিধাও। এই সুবিধার আরো একটু উন্নতি ঘটিয়ে প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে এখানে গড়ে ওঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।

একই বক্তব্য সমর্থন করেন মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা চকরিয়া সমিতি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক এম হামিদ হোসাইন। তার মতে, মাতামহুরী নদীতে নৌকা ভ্রমণ খুবেই আনন্দদায়ক পর্যটকদের ও ভাল লাগবে। তাই নদীর দু’তীরে পাহাড় ঘেরা সবুজ অরণ্য নিয়ে একটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের সূচনা করতে সরকারের কাছে দাবী জানান তিনি।

চকরিয়ার মাতামুহুরী তীরের আরেক সন্তান ও চারু শিল্পী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান- ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভ্রমণপিপাসুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে গত কয়েক বছর আগে মাতামুহুরী নদী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের একটি সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। সকলেই এর সম্ভাবনার কথা বলেছে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন ( টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন- মাতামুহুরী নদী তীরের সু-উচ্চ পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনে করে হয় আমরা দার্জিলিং এর চেয়ে কম কিসে?

তিনি বলেন- লামা থেকে মানিকপুর পযন্ত মাতামুহুরী নদীকে ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা চালু করা গেলে মাতামুহুরী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।

জানা যায়, গত শত বছর ধরে মাতামুহুরী নদীর মানিকপুর থেকে লামা পর্যন্তন্ত নৌ-সার্ভিস রয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান। ভ্রমণ করতে হলে মানিকপুর বাজার ঘাট থেকে উজানে লামা সার্ভিসের বোট ধরতে হয়। সময় লাগে এক থেকে দেড়ঘন্টা। আর ভাটায় ফিরতে সময় লাগে ঘন্টাখানেক। ভাড়া ৩০ টাকা। যদি কেউ রিজার্ভ বোট নিতে চায় সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। কি ভাবে যাবেন বাস যোগে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পৌর শহরে নেমে সেখান থেকে সিএনজি অথবা ম্যাজিক গাড়িতে করে পূর্বদিকে প্রায় ৭ কি:মি: পথ অতিক্রম করে মানিকপুর বাজারে যাবেন এরপর ঘাট থেকে বোটে উঠবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.