মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান, গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার

0

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই::মিরসরাই উপজেলার একটি দোতলা ভবনে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলা সদরের মিরসরাই ডিগ্রি কলেজ রোড়ের মিরসরাই পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মিরসরাই গোভনীয়া এলাকার রিদওয়ান মঞ্জিলের নীচতলায় কুমিল্লার চান্দিনায় গ্রেনেডসহ আটক দুই জঙ্গি হাসান (৩০) ও জসিমের (৩২) স্বীকারোক্তি মোতাবেক কাউন্টার টেররিজম ইউনিট রাতভর অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২৯ টি গ্রেনেড, ৭ টি কালো পাঞ্জাবি, আরবি অক্ষরে (লা ইলাহা ইল্লালাহু, আল্লাহু, রাসুল, মুহাম্মদ) লেখা কালো রঙের একটি ব্যানার, ছোট-বড় ৯ টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট কার্বন স্টীলবল, ৪০ টি পাওয়ার জেল, ১১ কেজি বিস্ফোরক সদৃশ পাউডার। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মীনা। এদিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম দল ঘটনাস্থলে বিকাল ৪ টায় পৌঁছে কয়েকটি গ্রেনেডসহ বিস্ফোরক দ্রব্য ধ্বংস করে।

জঙ্গি জসিম উদ্দিন ও হাসানের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে মিরসরাই সদরের রিদওয়ান মঞ্জিলে অভিযান চালানো হয়। এই বাড়িতেই থাকতেন তারা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও সিএমপির বোম/ডিসপোজাল ইউনিট যৌথভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে।
নুরে আলম মীনা জানান, ওই বাড়ি থেকে ২৯ টি গ্রেনেড, ৭ টি কালো পাঞ্জাবি, আরবি অক্ষরে (লা ইলাহা ইল্লালাহু, আল্লাহু, রাসুল, মুহাম্মদ) লেখা কালো রঙের একটি ব্যানার, ছোট-বড় ৯ টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট কার্বন স্টীলবল, ৪০ টি পাওয়ার জেল, ১১ কেজি বিস্ফোরক সদৃশ পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় মিরসরাই থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে ৮ জন জঙ্গির নাম পাওয়া গেছে। এসব জঙ্গি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে সাময়িক সময়ের জন্য আস্তানা গড়ে তোলে।
পুলিশ সুপার জানান, জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলতে বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। ভাড়া নেওয়ার সময় জঙ্গিরা নিজেদের কাপড়ের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। নিজেদের নাম কামাল ও মাহমুদ বলে জানান। এই নামেই ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেন বাড়ির মালিকের কাছে। তারা আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গি সংগঠনকে অনুসরণ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোন সংগঠন তা তিনি বলতে পারেননি। এই পর্যন্ত এই চক্রের নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে জানা যায় চক্রটির সঙ্গে আরো ৮/৯ জন জড়িত রয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক শাফায়াত জামিল ফাহিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদৌলা রেজা, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমদ সুমন, সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই) মাহবুবুর রহমান, মিরসরাই উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তার কাকলী, মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন, মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইরুল ইসলাম।
রিদওয়ান মঞ্জিলের মালিক রিদওয়ান উদ্দিন জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার দোতলা ভবনের নিচতলার একটি ইউনিট ভাড়া দেন। শিশুসহ এক নারী এবং দুইজন পুরুষ বাসাটি ভাড়া নেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিশুসহ ওই নারী বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে চলে যান। গত সোমবার পুরুষ দুই জনও বাসা থেকে বের হন। তারা আর ফেরেননি। পরে জানতে পারি তারা জঙ্গি এবং কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।
মিরসরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘রাতে পুলিশের স্পেশাল দুইটি টিম কুমিল্লায় আটক হওয়া এক জঙ্গিকে নিয়ে রিদোয়ান মঞ্জিলে অভিযান চালায়।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইরুল ইসলাম জানান, মিরসরাইয়ে অভিযান চালানো বাড়িটির নাম ‘রিদওয়ান মঞ্জিল’। দোতলা বাড়িটির নিচতলায় থাকতেন গ্রেপ্তার হওয়া দুই জঙ্গি। বাড়ির মালিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের সঙ্গে একজন নারী ও একটি শিশুও থাকত। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তারা (ওই নারী ও শিশু) চলে যান। অভিযানের সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। অভিযান শেষে বাড়িটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে। মিরসরাই থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাত থেকে সেখানে অবস্থান করে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত অধিক গতিসম্পন্ন গাড়ি চিহ্নিতকরণে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় অভিযান চলছিল। ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির সার্জেন্ট কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চলাকালীন বেলা সোয়া ১১ টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের অধিক গতিচিহ্নিত হয়। পুলিশ গাড়িটি ধাওয়া করে থামানোর পর বাস থেকে নেমে আসা যাত্রীবেশী দুই যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে দুইটি বোমা ছোঁড়ে। বোমাগুলো বিস্ফোরিত না হওয়ায় পুলিশ তাদের পেছনে ধাওয়া করলে, তারা বোমা ছোঁড়া অবস্থায় দৌঁড়ে একটি গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে। ওই সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জসিমকে এবং আহত অবস্থায় হাসানকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ টি বোমা ও ১ টি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.