যুবলীগের রাজনীতি ঠিকাদারী ও সন্ত্রাসী

0

গোলাম শরীফ টিটু : বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ বঙ্গবন্ধু’র নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহনের পাশাপাশি, মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলনেও যুব সমাজই ছিল রাজপথে অগ্রগামী। কখন গঠিত হবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি? দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর ধরে নগর যুবলীগের কমিটি গঠনের বিভিন্ন তৎপরতার খবর শোনা গেছে। কমিটি গঠনে নামের তালিকা সংগ্রহ ও পদ পেতে কোটি টাকার লেনদেন নিয়েও চলেছে নানা গুঞ্জন। একজন সাবেক ছাত্রনেতা জানান,’তিন মাসের কমিটি ৩ বছর সংগঠন আঁকড়ে ধরে রাখে। যারা সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নেই। সংগঠনকে ব্যবহার করে করছে ব্যবসা-বানিজ্য ও ঠিকাদারী।

অভিযোগ রয়েছে, নগরীর সাজাপ্রাপ্ত, পুলিশের তালিকাভুক্ত, চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যুবলীগের কমিটিতে পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে নগর যুবলীগের কমিটি ঘোষনা হতে পারে এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। এমনকি পদ বানিজ্যের অভিযোগও ওঠে তখন। সমালোচনার পরে আর কমিটি ঘোষনা করা হয়নি। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রেলওয়ে সদর দপ্তর সিআরবিতে ডাবল মার্ডার মামলার আসামী থেকে শুরু করে ভুমিদস্যু, সাইনবোর্ড ব্যবসায়ী, অস্ত্র ও হত্যা মামলার আসামীরা কমিটিতে পদ পেতে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

সাবেক ছাত্রনেতাদের মতে, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও সরকারের ভাবমুর্তি বিনষ্টের জন্য দায়ী যুবলীগ নেতা নামধারীদের কমিটিতে পদ দেওয়া ঠিক হবে না। মেধাবী, পরীক্ষীত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দিলে দল উজ্জীবিত হবে। তাদের মতে, ২০১৩ সালের জুলাইতে গঠিত আহবায়ক কমিটি ৩ মাসের মধ্যে সম্মেলন করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু নগরীর ৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে হাতেগুনা কয়েকটি ওয়ার্ডে সম্মেলন ছাড়া নামমাত্র কমিটি ঘোষনা করা হয়। জানা যায়, এ আহবায়ক কমিটিতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও মেয়র আ.জ.ম নাছিরের অনুসারীদের মধ্যে ৫০ জনের একটি তালিকা দেওয়া হলেও সেখানে মাত্র ৭ জনকে রাখা হয়েছিল।

বাকীসব সদস্যরা ছিলেন সভাপতি এবিএম মহিউদ্দি চৌধুরীর অনুসারী। যে কারনে যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে অসন্তোষ ও কোন্দল বৃদ্ধি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নগর যুবলীগেও গঠেছে দৃশ্যমান বিভক্তি। বিভক্ত যুবলীগ এখন পৃথকভাবে বিবৃতি দিচ্ছে। আলাদা বৈঠক করছে। নিজেদেরকে আলাদাভাবে গোছানোর চেষ্টা করছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, গত ৬ মে শনিবার চট্টেশ্বরী এলাকার একটি ভবনে সাবেক মন্ত্রী ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. আফসারুল আমীন এমপি এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা বৈঠক করেছেন। যার মধ্যে নগর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক দিদারুল আলম, সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব, সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মান্নান ফেরদৌস, দিদারুল আলম, নগর যুবলীগের সদস্য বেলায়েত হোসেন চৌধুরী সহ যুবলীগের বেশকিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তারা সংগঠনের ভবিষ্যত কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে যুবলীগকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মপরিকল্পনা করেন।

এদিকে সম্প্রতি নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে লালদিঘি ময়দানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ডাকা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মানের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ন আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহাবুবুল হক সুমন। ওই বিবৃতিতে দিদারুল আলমের নাম ছিল না।

অপরদিকে সুইমিংপুল নির্মানের পক্ষে এবং আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে সাধুবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন নগর যুবলীগের জ্যেষ্ট সদস্য কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব সহ কয়েকজন নেতা। সাম্প্রতিক এ বৈঠকে থাকা নগর যুবলীগের সিনিয়র সদস্য কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, মুলত বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কর্মীদের গেট টুগেদার। ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনের কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এবং নতুন সদস্য সংগ্রহের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ১০১ সদস্য বিশিষ্ট নগর যুবলীগ কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গ কমিটি করারও নির্দেশনা তখন দেয়া হয়। দুই মাস পর এ কমিটি বয়স চার বছর পুর্ন হবে। কিন্তু সংগঠনকে তৃনমুল পর্যায়ে শক্ত ভিত্ত্বি দিতে ব্যর্থ হয়েছে আহবায়ক কমিটি। যে কারনে এখনো সম্মেলন করে কমিটি করতে পারেনি তারা। সময় যতই গড়িয়েছে সংগঠনটির দায়িত্বশীল নেতাদের মাঝে দুরত্ব তত বেড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে চেন অব কমান্ড।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মো: মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং ফরিদ মাহমুদের মধ্যে সম্প্রতি বিলবোর্ড ব্যবসা নিয়ে প্রচন্ড বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। বিলবোর্ড ব্যবসার সাথে মুলত যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের একাংশের অভিযোগ মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির কাজের চুক্তি করে এককভাবে লাভমান হয়েছেন।

এরপরও নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদক পদে স্থান পেতে নগর যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ন আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান ফেরদৌস, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিদারুল আলম, সুমন দেবনাথ ও নুরুল আনোয়ার প্রমুখ নেতা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে অনেকের মতে, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও দিদারুল আলমকে সভাপতি ও সম্পাদক করে কমিটি চুড়ান্ত হতে পারে। এই দুইজনের মধ্যে বাবর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী ও দিদারুল আলম সাধারন সম্পাদক ও মেয়র নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

দুজনের বিরুদ্ধে পুর্বাঞ্চল রেলওয়েতে টেন্ডারবাজির অভিযোগ আছে। দুজনের অনুসারীদের মধ্যে ঘটেছে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা। নেতাকর্মীদের অনেকের মতে, নগর যুবলীগের দ্বিধাবিভক্তি ও দুই নেতার পক্ষে-বিপক্ষে বিবৃতি দলের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। অবিলম্বে ক্লিন ইমেছের নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি ঘোষনা করা না হলে প্রতিহিংসা ও আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি ফের চাঙ্গা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.