রবীন্দ্র আলোয় চট্রগ্রাম : জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

0

আরিফ চৌধুরী : রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাঙলির জাতীয় চেতনার,জাতিসত্বা নির্মানের অসাম্প্রদায়িক মানবিত চেতনা, বাঙালি সংস্কৃতির সৃজনে ও সাহিত্যের অন্তহীন প্রেরণার উৎস। বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও কবির অর্ন্তদৃষ্ঠির চেতনায় ছিলো বিশ্ব সাহিত্য, দার্শনিক চিন্তাধারা ও শান্তির অন্বেষা। তার গান আমাদের জাতি ও রাষ্টের স্বাতন্ত্র্য পরিচায়ক। পুর্ববঙ্গে তথা বাংলাদেশের সাথে রবীন্দ্রনাথের ছিলো আত্বার সর্ম্পক। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ ও পারিপার্শিকতার নিবিড় স্পর্শে কাটিয়েছেন অনেকটা সময় এবং বাঙালির জাতীয় জীবনের পরতে পরতে রবীন্দ্রনাথ অনিবার্য প্রেরণা শক্তিরুপে আর্বিভূত হয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবি বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্রগ্রামে এসেছিলেন ১৯০৭ সালের জুন মাসে। ১৯০৭ সালের ১৭ জুন সকালে কবি চট্রগ্রাম পৌছেঁছিলেন। আর খুব কম সময়ের সফরে তিনি ফিরে যান ১৮ জুন রাতের ট্রেনে। যদিও কবির উদ্দেশ্য ছিলো বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের একটি শাখা গঠনকল্পে পরিবেশ পরিদর্শন করা। তবে কবি চট্রগ্রাম স্বচোখে দেখার ও রবীন্দ্র পরিকর কেদারনাথ দাশ গুপ্ত ও যামিনীকান্ত সেনের আমন্ত্রণ কবির চট্রগ্রামের আগমন ও হতে পাওে বলে অনেকের ধারণা। বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ঠ লেখক ঠাকুর দাশ মুখোপাধ্যায় (১৮৫১-১৯৩০) এর এক পত্রের জবাবে কবি লিখেছিলেন, “আপনার পত্রে দেখিলাম আপনি চট্রগ্রাম অবস্থান করে আছেন্ জায়গাটির নাম শুনে একটু তরু ছায়াময় পাহাড়-পর্বতের দৃশ্য মনে উদয় হইল।এখানে কি দশদিগন্তের চির চষ্ণল সমুদ্রের নীলরেখা কি দেখিতে পাওয়া যায়’।

উনবিংশ শতাব্দীর মহাভারত নামে খ্যাত কুরুক্ষেত্র –রৈবতক প্রভাব কাব্য রচয়িতা ‘পলাশীর যুদ্ধ’ কবি মহাকবি খ্যাত চট্রগ্রামের নবীন চন্দ্র সেন এর সাথে তারযোগাযোগ ছিলো। স্বদেশ জাগ্রত স্বদেশ আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদেও পুরোধা রবীন্দ্র স্নেহভাজন যামিনী কান্তের অগ্রজ সে সময়কার খ্যাতনামা জমিদার কমলাকান্ত সেনের পুত্র নলিনীকান্তের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোযাযোগ ছিল রবন্দ্রিনাথ ১৯০৫ সালে বঙ্গভংঙ্গ আন্দোলনের প্রতিরোধে চট্রগ্রামের জনগনের মধ্যে উদ্দীপনার সংবাদ ও কবির কাছে পৌঁছে ছিলো।

চট্রগ্রামের মানুষের মধ্যে স্বদেশ চেতনা ও রাজনৈতিক চেতনা রবীন্দ্রনাথকে চট্রগ্রামের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু নলিনীকান্তের জীবদ্দশায় কবি সময় করে উঠতে পারেননি চট্রগ্রামে আসার আগ্রহ থাকলেও। কবি সরাসরি চট্রগ্রামে আসেননি পুর্ববঙ্গে বরিশাল হয়ে চট্রগ্রামে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। উদ্দেশ্য ছিলো মেয়ে মীরার শ্বশূর বাড়িতে মীরাকে দেখতে আসা। কবির সঙ্গে তখন কবির আপনজন কেদারনাথ দাশ গুপ্ত ছিলেন। কেদারনাথ চট্রগ্রামের আরেক কৃতি পুরুষ।

তিনিই প্রথম বিলেতে রবীন্দ্র সংবর্ধনার অয়োজন করেছিলেন। কবির নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগেই এই কেদারনাথই কবি কন্যার বিয়ের সন্ধ্যান দিয়েছিলেন। রবন্দ্রি নাথ ভাতৃপুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও কেদারনাথ দাশ গুপ্ত কে নিয়ে বরিশাল হয়ে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন ১৯০৭ সালের ১৭জুন সকালে চট্রগ্রাম এস পৌঁছান।তখন চট্রগ্রামের আবহাওয়া খুব ভাল ছিলোনা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। তবুও চট্রগ্রামে রবীন্দ্রনাথের আগমনে যাত্রা মোহন সেনের নেতৃত্বে চট্রগ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে একটি সংর্বধনা সভার আয়োজনের জন্য সংর্বধনা কমিটি গঠন করা হয়। রবীদ্রনাথের আগমনে চট্রগ্রামের রেলওয়ে ষ্টেশনকে ফুলে ফুলে সাজানোর ব্যবস্থা করা হয়।

স্থানীয় গন্যমান্যদের উপস্থিতিতে ষ্টেশন থেকে কবিকে পুস্পসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে চট্রগ্রামের জেনারেল হাসপাতালের পাহাড়ের উওরে কমলাকান্তের দোচালা বিশাল বাড়িতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ দিন বিকেলে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য পরিষদের শাখা স্থাপনের বিষয়ে

আলোচনার জন্য আইনজীবী রজনী রঞ্জন সেনের বাসায় সাহিত্য মোদিদের নিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। সে সভায় মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন, কবি গুনাকর নবীন চন্দ্র দাশ, তার বড়ভাই তিব্বত পরিব্রাজক শর‌্যচন্দ্র দাশ, লেখক সাংবাদিক আবদুর রশীদ সিদ্দিকী, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, নাদের আলী, আবদুর রহমান দোভাষ, কাজেম আলী মাষ্টার, শশাংক মোহন সেন ছাড়াও জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণির গুণী ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

পরদিন ১৮ ই জুন সকালে কবি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে চট্রগ্রাম শহর ঘুরে ঘুরে দেখেন, কর্ণফুলি নদীর জাহাজ ঘাট, প্রাকৃতিক সৌন্দয্য , পাহাড়ের নির্জনতা দেখে কবি মুগ্ধ হয়ে উঠেন। ঐদিন বিকেলে কবিকে সংর্বধনা দেয়ার জন্য সদরঘাটের কমলা বাবুর থিয়েটার হলে এক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয় কবির চট্রগ্রাম আগমন উপলক্ষে । সে সংবধনা সভায় কবি ভাষণ প্রদান করেন। কবি জীবনে এই প্রথম লিখিত ভাষণ ছাড়া মৌখিক ভাষণ প্রদান করেন চট্রগ্রামের সৌন্দয়ে মুগ্ধ হয়ে।

কবি সভায় অনুজ কবি শশাংক মোহন সেনের পিতা বজ্র মোহন সেনের অনুরোধে একটি গানও খালি গলায় পরিবেশন করেন। সেই সময় কবির আগমনের খবর কলকাতার বন্দে মাতরম, ও বেঙ্গলী পত্রিকায় ফলাও করে ২২ও ২৩ জুন প্রকাশিত হয়। কবি সল্প সময়ের আগমনের পাঠ শেষ করে রাতের ট্রেনেই সঙ্গীদের নিয়ে র কলকাতার উদ্দেশ্য চট্রগ্রাম ত্যাগ করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.