রাউজানে সাড়ে পাঁচ মাসে পুকুরে ডুবে ১২ শিশুর মৃত্যু
এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম)::চট্টগ্রামের রাউজানে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পুকুরে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা। গত ৫ মাসে গড়ে দু’তিন জন শিশু পুকুরে ডুবে মারা গেছে। বেশিরভাগ শিশুর বয়স ১ থেকে ৫ বছর। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বশেষ ৭ আগষ্ট সোমবার পুকুরে ডুবে আয়েশা ইসলাম (৩) নামের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে।সে উপজেলার পূর্বগুজরা ইউনিয়নের আয়েশা বিবির বাড়ির আরব আমিরাত প্রবাসী সেকান্দর হায়াতের কন্যা।
গত ৩ আগষ্ট পুকুরে ডুবে ফুয়াদ আনোয়ার সামি (১৩) নামে পঞ্চম শ্রেণীর (ইংলিশ মিডিয়াম) এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। সে রাউজান পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের আদালত ভবণ এলাকার চৌধুরী বাড়ির সৌদি আরব প্রবাসী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চৌধুরীর একমাত্র পুত্র ও রাউজান ইংলিশ স্কুলের ছাত্র। এর আগে ২২ জুলাই পুকুরে ডুবে আদিবা ইসলাম মাহি (২) নামে এক শিশু কন্যার মৃত্যু হয়। সে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরী হাট এলাকার আইয়ুব আলী সওদাগর বাড়ির আব্দুল মাজিদের মেয়ে। গত ১৪ জুলাই মো. রাব্বি (৪) নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গশ্চি গ্রামের অছিমিয়া চেয়ারম্যান বাড়ির সাহাবুদ্দিনের একমাত্র পুত্র। গত ৫ জুন উম্মে হাবীবা (২) নামের এক শিশুকন্যা পুকুরে ডুবে মারা যায়। সে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকার হাজী হামদু মুন্সি তালুকদার বাড়ির মো. রফিকের কন্যা।
গত ৩০ জুন আরফাত হোসেন (২) নামের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে উপজেলার পূর্বগুজরা ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের হাজি আজিজুর রহমান বাড়ির ওমান প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের একমাত্র পুত্র। গত ৯ মে মোহাম্মদ জোনায়েদ (৩) নামে এক শিশু পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের মুহাম্মদ মহসিনের পুত্র। গত ২৩ মে শহীদুল আলম (১০) নামে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রের মৃত্যু হয়। সে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন মধ্যপাড়া গ্রামের ফরিদুল আলমের পুত্র। গত ১০ মার্চ রাউজানে পুকুরের পানিতে ডুবে পুতুল (২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের উত্তর ঢাকাখালী গ্রামে মামার বাড়ীতে মা’র সাথে বিয়ের দাওয়াতে এসে এক শিশু পানিতে ডুবে শিশুটি মারা যায়। সে হাটহাজারী উপজেলার মধ্যম মাদার্শা বড়–য়াপাড়ার জনৈক মানিক বড়–য়ার কন্যা।
গত ৪ মার্চ শনিবার পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলো গোদারপাড় এলাকার অর্জুন সওদাগর বাড়ির প্রবাসী অরুন বড়–য়ার ছেলে দেবরাজ (৮) ও প্রবাসী সুমন বড়–য়ার ছেলে যুবরাজ (৫)। নিহত দুই শিশু পরস্পর চাচাতো চেঠাতো ভাই। উপজেলার উত্তর গুজরা গ্রামের আধার মানিক গোদার পাড়ায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিহা আকতার (২) নামের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। নিহত শিশু রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের বদু পাড়া সৈয়দ বাড়ির দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ হোসেনের কন্যা। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন রেজা শিশু মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘পারিবারিক অসচেতনতা ও সাতার না জানার কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ৩ আগষ্ট পুকুরে ডুবে নিহত ফুয়াদ আনোয়ার সামির মৃত্যুতে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি।
এঘটনার পর আমি প্রতি শুক্রবার ও শনিবার শিশুদের সাতার শেখানোর জন্য উপজেলা সরকারী বাসভনস্থ একটি পুকুর উন্মোক্ত ঘোষণা করেছি। শিশু সন্তানদের চোখে চোখে রাখার পরামার্শ দিয়ে তিনি বলেন পরিবারের সদস্যরা সচেতন হলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব।’