রাঙামাটিতে বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগে তদন্ত

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি,সিটিনিউজ : রাঙামাটি শহরের রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি’র ফরম ফিলাপ, প্রশংসাপত্র ও মার্কশিট উত্তোলনে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩০ জুলাই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ২০১৭ সনে এই বিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।

লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, ফরমফিলাপ, প্রশংসাপত্র ও মার্কশিট উত্তোলনের সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়তি টাকা নেয়।

যে খানে বিজ্ঞান বিভাগে ফরম ফিলাপের জন্য ১,৮৫০ টাকা সেখানে নেওয়া হয়েছে ৩,২০০ টাকা।

মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় ১,৭৫০ টাকার মধ্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে ৩,০০০ টাকা আদায় করে।

এই আদায় বাবদ তাদের বিদ্যালয় কর্তৃক কোন রশিদ কিংবা লিখিত ডকুমেন্ট দেওয়া হয়নি।

লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সকালে বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন।

রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সনের এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৪১ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্র শাক্যমুনি চাকমা বলেন, ফরম ফিলাপের সময় আমাদের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়।

প্রশংসাপত্র ও মার্কশিট নেওয়ার সময় ১০০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের প্রতিজনের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তাও কোন রশিদ কিংবা লিখিত কাগজ না দিয়ে।

তিনি আরও জানান, আমরা মোট ১৩০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিই। তারমধ্যে ১০৩ জন কৃতকার্য হয়েছে। আমাদের সবার কাছ থেকেও ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

একই বর্ষের ছাত্রী এন্টি চাকমা বলেন, আমরা প্রশংসাপত্র উত্তোলনের সময় ৩০০ টাকা করে জমা দিই।

কিন্তু ফরমফিলাপের সময় আমাদের মার্কশিটের টাকা নেওয়া হয়, তবে স্কুলের স্যাররা মার্কশিট ও প্রশংসাপত্রসসহ আমাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এন্টি জানান, আমরা আর এই টাকা ফেরত চাই না, তবে ভবিষ্যতে যেন আমাদের ছোট ভাই-বোনদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়, এজন্য বিদ্যালয়ের সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।

জয় বড়ুয়া নামে এক ছাত্র বলেন, আমরা নিম্মি ম্যাডামের কাছে ৩০০ টাকা দিয়ে প্রশংসাপত্র ও মার্কশিট নিয়েছে।

এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমাদের সেশন শেষ হলেও আমাদের থেকে এবছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন নেওয়া হয়েছে। তবে রশিদ দিলেও রশিদের মধ্যে কোন তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নিম্মি চাকমা জানান, মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র বাবদ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে এবারও ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।এবং হেড স্যারকে এ টাকা দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু উনি এখন তা অস্বীকার করতেছে।

এমনই যদি হতো যে আমি টাকা দিই নাই উনাকে। তাহলে এতদিন অভিযোগ না করে উনি এখন কেন বলছে। তিন উনি বিষয়টা অস্বীকার করছে। আর আমি উনাকে টাকা দিয়েছি এই বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিত দিয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক বলেন, পাহাড় ধস ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে আমিই প্রথম ছাত্রছাত্রীদের হাতে প্রশংসাপত্র ও মার্কশিট তুলে দিই। আর মার্কশিট বাবদ ৩০০ টাকা নেওয়ার কথা উঠলেও ওই টাকা আমি হাতে পাইনি, কিংবা বিদ্যালয়ের ফান্ডেও এই টাকা জমা হয়নি।

আমার দায়িত্ব নেওয়া সময় হতে এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ আমার আরোপিত হয়নি। এপর্যন্ত বিদ্যালয়ের ফান্ডে মোট ৫৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮শ ৫০ টাকা ৩২ পয়সা জমা আছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ফরম ফিলাপে বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা লিখিত অভিযোগ করলেও তেমন কোন প্রমাণ দিতে পারেনি।

আর প্রশংসাপত্র ও মার্কশিট নেওয়ার সময় ৩০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে রশিদ ব্যাতিত এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.