রাঙামাটি ভয়াবহ পাহাড় ধসের দুই মাস

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি :: রাঙামাটি জেলায় গত ১৩ জুন সংগঠিত হয়েছিলো পাহাড় ধস। পাহাড় ধস দুর্ঘটনার প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হতে চলেছে।

এই ঘটনায় সারা জেলা জুড়ে নিহত হয়েছে ১২০ জন, তার মধ্যে সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন চার জন এবং আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।

পাহাড় ধস দুর্ঘটনার ফলে সারা জেলায় হাজারো ঘর-বাড়ি ক্ষয়গ্রস্ত হয়েছে।

এই ঘটনার পরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও পরে অন্য স্থানে বাড়ি ভাড়া করে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাড়ি মেরামত করে ফিরে গিয়েছে নিজ ঠিকানায়।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত যাদের বাড়ি পরিপূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা অবস্থান করছে বেশ কিছু আশ্রয় কেন্দ্রে।

রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী রাঙ্গাপানি এলাকার বাসিন্ধা বিজয় কেতন চাকমা বলেন, ১৩ জুনের আগের থেকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো রাঙামাটিতে।

ঐদিন রাত যত গভির হয় তত বৃষ্টি বেড়েই চলছিলো। বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতও হচ্ছিলো প্রচুর। রাত শেষে ভোর বেলা উঠে দেখি রাঙ্গাপানি এলাকার রাস্তা ধসে গিয়েছে সাথে বহু বাড়ি-ঘর মাটি চাপা অবস্থায় রয়েছে।

আমার এলাকার প্রায় বাড়ি-ঘর পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একই পরিবারে তিন জন মারা গিয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি।

সনাতন পাড়ার উজ্জল মল্লিক বলেন, আমাদের এলাকাতে পাহাড় ধস দুর্ঘটনায় বহু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মারা গিয়েছে অনেকে। আমার ছেলে লিটন মল্লিক সহ তার স্ত্রী এবং পাঁচ বছরের বাচ্চাও মারা যায়।

স্মৃতিকারত এই পিতা সেই দিনের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে ছেলে হারা বেদনার স্মৃতিকথা বলতে থাকেন। ছেলে, ছেলের বউ ও একমাত্র নাতি হারিয়ে লিটন মল্লিকের মাতাও বাকরুদ্ধ অবস্থায় চোখর জল মুছতে থাকে এসময়ে।

ভেদভেদী এলাকার বাসিন্ধা জসিম মিয়া বলেন, সেই দিনের ঘটনার কথা আমরা কখনো ভুলবো না। দিনের বেলা প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে কাজকর্ম শেষ করে বাড়ি ফিরে আসি।

রাতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাত যখন প্রায় তিনটা তখন সেহেরি খেতে উঠেছি। সেহেরি খেতে উঠে দেখি আমার বাড়ির পশ্চিমের পাহাড়টি ধসে পরেছে।

তার কিছুক্ষণ পরে বাড়ির পাশের আমগাছটি বাড়ির চালের উপর ভেঙ্গে পরে। সাথে সাথে বাড়ির ভিতরে বউ-বাচ্চাকে ডাক দিতে গেলে বউ ও আমার মা বাইরে বেরিয়ে আসে কিন্তু বাচ্চা ঘুমানো অবস্থায় থাকার ফলে বাড়ির ভিতরে আটকে যায়।

অনেকক্ষণ পরে এলাকার ছেলেরা সহ আমার বাচ্চাকে উদ্ধার করে রাঙামাটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেই দিনে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকা শুভ পাল বলেন, প্রচুর বৃষ্টিপাত ও সাথে বজ্রপাতের কারণে আমরা রাতে ঘর থেকে বের হতে পারি নি। কিন্তু ভোর বেলা এক বন্ধুর ফোন পেয়ে ঘর থেকে বাহির হয়।

পরে সংবাদ পায় এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস হয়েছে বহু মানুষ এখনো পর্যন্ত মাটি চাপা অবস্থায় রয়েছে। সাথে সাথে আমরা বেশি কিছু বন্ধু মিলে ঘটনাস্থলে যায় এবং উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.