রামগড় মাদকের রাজ্য !

0

রামগড়(খাগড়াছড়ি)প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির ভারত সীমান্তসংলগ্ন রামগড় উপজেলা ও এর আশপাশের পার্বত্য গ্রামীণ জনপদে স্কুল কলেজগামী কিশোর তরুনদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার ও পাচারপ্রবনতা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এতে অভিভাবকমহল ভীষনভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা তাদের সন্তানদের এই মরণনেশার ছোবল থেকে বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশের সত্যিকারের সক্রিয়তা চেয়েছেন। সোমবার (৮ মে ) রামগড় উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায়ও বিষয়টি ওঠে আসে।

রামগড় একনম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি বৈঠকে মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কথা বলা হলেও কাজে কিছুই হচ্ছে না। দিন দিন যেন মাদক বেড়েই চলছে এলাকায়। বলা যায় মাদকের স্বর্গরাজ্য এখন রামগড়।

সরেজমিন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামগড় সীমান্তের বিভিন্ন হাটবাজারে ইয়াবা,ফেনসিডিল,হেরোইন,গাঁজা,চোলাইমদসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য অবাধে বিক্রি হয়। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ফেনসিডিল,ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ,গাঁজা এবং দেশি চোলাইমদ এখানে খুবই সহজলভ্য।

রামগড় ও এর আশপাশের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়।  রামগড় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের বলেন,সাংগঠনিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে মাদকসেবীদের প্রতিহত করা না হলে এই মরণ নেশায় এলাকার যুব সমাজ ধংস হয়ে যাবে।

রামগড় সীমান্ত এলাকায় অসংখ্য মাদকসেবীর আস্তানার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে যেন এ সংখ্যা বাড়ছে। এদের এখনি প্রতিরোধ করা না হলে মাদক নামক বিষবৃক্ষ একসময় ডাল পালা মেলে মহীরুহে পরিনত হবে। মাদকের অপব্যবহার রোধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তিনি।

রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন মিয়া বলেন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেনীর বখাটে এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত, তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন খুবই সজাগ। মাদকসেবী সন্দেহভাজন তরুনদের কর্মকান্ডের ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখা হয়েছে।

মাদক পাচার ও মাদক সেবনের খবর পেলেই তাদের আটক করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া আছে বলে তিনি জানান। বৈঠকে খাগড়াছড়ি দক্ষিণাঞ্চল প্রেসক্লাব সভাপতি নিজাম উদ্দিন মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ঠেকাতে এলাকাবাসীদের নিয়ে মাদক প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক একটি জরুরি সভার আহবান জানান।

রামগড়ের মহামুনি, সোনাইপুল,দারোগাপাড়া,ফেনীরকূল,আনন্দপাড়া,আবাসিকএলাকা, পর্যটন এলাকা,জগন্নাথপাড়া,বল্টুরাম,গর্জনতলী,মাষ্টারপাড়া,চৌধুরিপাড়া,তৈচালা,লালছড়ি,লামকুপাড়া,খাগড়াবিল,গার্ডপাড়া,বাংলাবাজার, বাগানবাজার,বাঘমারা,বড়বিল,চিকনছড়া,হেয়াকো,বালুটিলা,আমতলা,কয়লামুখ,জালিয়া পাড়া,নাকাপা প্রভৃতি এলাকায় মাদকসেবীদের দৌরাত্য সবচেয়ে বেশি।

কমিউনিটি পুলিশের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো.আবদুল জলিল বলেন,এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকসেবীদের বেশ কয়েকবার বিতারিত করেছি। কিন্তু কয়েকদিন পরই তারা এলাকায় ফিরে আসে। এ জন্য দরকার স্থানীয় লোকজনের সচেতনতা। এদের প্রতিরোধে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়,রামগড় এলাকার অভিজাত পরিবারের সন্তানেরাও মাদকসেবীদের সাহচর্যে এসে মারাত্বকভাবে নেশার জগতে ঢুকে পড়ছেন।

পারিবারিক অশান্তির কারণে হতাশায় ভোগে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিপদগামী হয়ে পড়েন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হতাশা গ্রস্থ অভিভাবকেরা জানান, মাদকাসক্ত অবাধ্য সন্তানদের বাগে আনতে বন্ধুবান্ধব ও পারিবারের পক্ষে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু বহু চেষ্টার পরও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাচ্ছে না।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, পুলিশের পক্ষে একা মাদক বিরোধী অভিযানে সফলতা পাওয়া কঠিন। এ কাজে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনদের আন্তরিক ভাবে অংশগ্রহন খুবই জরুরী। কেননা মাদক সেবী ও পাচারের সঙ্গে স্থানীয়রা জড়িত থাকতে পারে। তবে এলাকায় মাদক পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি বৈঠকে উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি খবর পেয়ে এই প্রতিনিধি ও অন্য একজন সংবাদকর্মী রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান, পেছনের সীমানা প্রাচীরের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে রয়েছে। মাদকাসক্তরা নেশার সিরাপ খেয়ে খালি বোতল ছুড়ে ফেলে বিদ্যালয়ের ভেতর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের সামনের খোলা অংশে স্থাপিত শহীদ মিনার এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহড়ী মো.আবু তাহের বাধা দিতে গিয়ে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার হেনস্থার শিকার হয়েছেন। দফতরি মো.আবু বক্কর বলেন,বখাটেদের উৎপাত চরম পর্যায়ে,তারা কোন বারণ শুনতে চায় না। বিদ্যালয়ের পুরো এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অনুরোধ জানান তাঁরা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.