শঙ্খনদীর ভাঙ্গন রোধে নিম্নমানের পাথর দিয়ে ব্লক তৈরি

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ  : উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তবর্তী শঙ্খনদীর ভাঙ্গন রোধে বর্তমান সরকার ১শ ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে। তবে ব্লক বসানোর কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শঙ্খনদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে এ বরাদ্দ পাওয়া যায় বলে জানা যায়। চানখালীর মুখ থেকে ধোপাছড়ি পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে ব্লক বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এ প্রকল্পে ব্লক তৈরিতে মানা হচ্ছে না সরকারের দেয়া নিয়মাবলি। নিম্নমানের বালি ও নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্লক। এছাড়া কম ব্লক তৈরি করে খাতায়-কলমে বেশি দেখানো হচ্ছে।

ফলে সরকারের নেয়া প্রকল্প শঙ্খনদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ ভেস্তে যেতে বসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বৎসরে শঙ্খনদীর ভাঙ্গনে সরকার ১শ ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। যথারীতি টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে ব্লক বসানোর কাজ শুরু হয়। শঙ্খনদীর ভাঙ্গন ঠেকানোর লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শঙ্খনদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ হলে চন্দনাইশের বরমা, চর বরমা, বৈলতলী, দোহাজারী, চাগাচর, রায়জোয়ারা, ধোপাছড়ি সহ পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার চরতী, দ্বীপ চরতী, আমিলাইশ, কালিয়াইশ, চিড়িংঘাটা, পুরানগড় সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।

বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের নামে টেন্ডার নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন সাব-ঠিকাদার দিয়ে কাজ চালাচ্ছে ব্লক তৈরির। সর্বনিম্ন দরদাতাদের কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাদের কাজ দেয়ার অভিযোগ করেছেন কিছু সংখ্যক ঠিকাদার। ফলে সরকারের কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় সব ঠিকাদারেরা ব্লক তৈরিতে সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে স্থানীয় বালি, নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় ব্লক তৈরি ও ব্লক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কয়েক লক্ষ ব্লক তৈরি হবে। বিধি মোতাবেক প্রতি ব্লক তৈরির নিয়মে ৬টি পাথর, ৩টি মোটা বালি, ১ বস্তা সিমেন্ট দেয়ার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালি ও পাথর। সে সাথে অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করার কারণে এসব ব্লক ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা সত্তে বেশ কয়েকজন শ্রমিক ব্লক তৈরিতে অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেছেন, যেমন করে কাজ করতে বলে, তেমনি করে কাজ করি। ভালো-মন্দ দেখবেন স্যারেরা। যারা কাজ তদারকি করার কথা, তারা মুরগির রান দিয়ে ভাত খেয়ে চলে যায়। তাহলে আর ভালো কাজ কিভাবে হবে। স্থানীয়রা জানান, সরকার উপজেলার শঙ্খনদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার মানুষ খুবই খুশি। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের বিবরণী উল্লেখ করে কোন সাইনবোর্ড না দেয়ায় তারা বলতেও পারে না কাজের গুনগতমান ঠিক হচ্ছে কিনা, কি কি কাজ হবে এখানে। ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য প্রতিদিন ব্লক বানানো এবং বসানোর কাজ চলছে।

ঠিকাদারের লোকজনদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা কোন তথ্য দিতে চায় না। ঠিকাদারের লোকজন জানান, কাজের বর্ণনাযুক্ত সাইনবোর্ড না থাকলেও কাজের মান সঠিক রয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান আনোয়ারুল মোস্তফা চৌধুরী দুলাল বলেছেন, সরকারের মহতী উদ্যোগের কারণে উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ব্লক তৈরিতে নজরদারি রাখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদী সুফল থেকে বঞ্চিত হবে শঙ্খনদীর তীরবর্তী মানুষ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.