শিক্ষা নিয়ে শঙ্কা কেন!

0

মানুষের মৌলিক চাহিদা সমূহের মধ্যে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা জাতির মেরুদণ্ড উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাকে জাতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়াও সরকারের সফলতার অংশ। শিক্ষা নিয়ে বৈষম্য থাকা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি কিংবা বেসরকারি যাই হোক না কেন সবখানে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করাই অনস্বীকার্য বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটা নিতান্তই অমূলক কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরতে পরতে বৈষম্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়ে সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা সব সময় নেতিবাচক মন্তব্য করেন কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা কাদের ঘাড়ে বর্তায়! তাহলে যারা শিক্ষা সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের কাজ কী? বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সবাই এক ধরনেরর  স্নায়ুচাপে ভোগছেন! সন্তান আধৌও গুণগত শিক্ষা অর্জন করতে পারছে কি না সে ব্যাপারে অভিভাবকরা শঙ্কায় থাকেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের(ইউজিসি) ওয়েব সাইটে প্রচারিত তথ্যে ও ইউজিসির মাননীয় চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে ৪৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে যা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের মনের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

এ ধরনের প্রতিবেদন নতুন কিছু নয়, বিভিন্ন সময় ইউজিসির ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম এ ধরনের নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ করে। তবে এ ধরনের প্রতিবেদনে শুধুমাত্র সংবাদ উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। গণমাধ্যম সূত্র ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করতে পারে কিন্তু যারা তথ্য দিচ্ছে তাদের বুঝা উচিৎ এমন তথ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারা। প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাদের হাতে? যদি কোন প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের নামে প্রতারণা করে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান কোন ক্ষমতা বলে ঠিকে আছে? ব্যাপারটা ছোট বেলায় শুনা গল্পের মত চোরকে বললাম চুরি কর আর গৃহমালিক সতর্ক থাকিস। এখানে আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের চোর বলছি না বরং তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য। শুধুমাত্র রূপক অর্থে বাক্যটা ব্যবহার করেছি। প্রত্যক্ষভাবে সতর্ক করলেন আবার পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিলেন- শিক্ষা নিয়ে কি একই সাথে দুই নীতি চলে! তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ভাষ্য হলো জনসচেতনতা তৈরির জন্য তাদের এই সতর্কবার্তা ।

কিন্তু কথা হচ্ছে সতর্কবার্তা নিয়ে কি শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করতে পারবে? নতুন ভর্তির কথা বাদ দিলাম ইউজিসি বা গণমাধ্যম কি একবারও চিন্তা করলো না এমন সংবাদে ৪৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যায়নরত শিক্ষাথীদের মনের অবস্থা কি হয়েছে। তারাও তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এ ধরনের সতর্কবার্তার কারণে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হবে কিন্তু প্রকৃত অর্থে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। দুই একটা ইউনিভার্সিটি হলে হয়তো জনগণ ভাবতো শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের অনিয়মের কারণে এমন সতর্কবার্তা প্রচার করছেন কিন্তু একসাথে ৪৬টি ইউনিভার্সিটির নাম উল্লেখ থাকায় অভিভাবকরা এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। সত্যি যদি ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টির এমন অবস্থা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসে সমাধানের পথ বের করতে পারতো। আর যদি সমস্যা সমাধান করা না যায় তাহলে অনুমোদন রেখে শিক্ষার্থীদের শুধু শুধু শঙ্কায় রাখা কতটুকু যৌক্তিক। তবে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যান্তরীণ কিছু সমস্যা থাকে, মালিকানা হোক কিংবা কর্তৃত্ব নিয়ে। আর বিরোধীয় বিষয় নিয়ে যদি আদালতে মামলা হয় তাহলে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বা অবৈধ বলা ঠিক না।

শিক্ষা নিয়ে শঙ্কা থাকা উচিত নয়, শঙ্কায় কখনো জ্ঞান অর্জন হয় না। একজন শিক্ষার্থী তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (অনার্স-মাস্টার্স) করার জন্য ব্যয় করে কিন্তু দীর্ঘ শিক্ষা জীবন শেষ করে যখন সে শুনে তার অর্জিত সনদ অবৈধ তাহলে তার মনের অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন! দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে এটা কোনো সুসংবাদ নয় কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা ডিগ্রি নিয়েছে তাদের কী অবস্থা অবস্থা হবে! সারা জীবন সার্টিফিকেটে একটা কালো দাগ তাদের বয়ে বেড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো কলখারখানা নয় যখন খুশি অনুমোদন দিলাম ভালো উৎপাদন না হলে বন্ধ করে দিলাম। একটা বিষয় বুঝা উচিৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন পরিস্থিতি(চালু আবার বন্ধ) শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় একই মানের হবে এটা ভাবাও ঠিক না।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে প্রায় ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী যা সরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের চেয়ে বেশি। দেশে বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়ের পর্যাপ্ততার কারণে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে তা না হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পর অনেকে কাঙ্খিত বিষয় পড়ার সুযোগ না পেয়ে ঝরে যেতো। সরকারকে মনে রাখতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ অনেকে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বড় বড় পদে কর্মরত আছেন। আগামীতে দেশের যেকোনো উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে তাদের অংশীদারিত্ব থাকবে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। সরকারের উচিত আপাতত আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্বদ্যিালগুলোর দিকে সুনজর দেওয়া এবং মানোন্নয়নে কাজ করা । মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে আগামী প্রজন্মকে শঙ্কামুক্ত শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়া উপহার দেওয়া। প্রতিষ্ঠান নয় মেধাকে মূল্যায়ন করে যোগ্যতাকে সবক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে। যদি আমরা বর্তমান প্রজন্মকে কাঙ্খিত শিক্ষা অর্থাৎ গুণগত ও বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হই তাহলে কখনো সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণ হবে না। কারণ বর্তমান প্রজন্মের মাঝেই লুকিয়ে আছে স্বপ্নের বাংলাদেশ।

মো. সাইদুল ইসলাম চৌধুরী
সহকারি সম্পাদক, মাসিক দখিনা

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.