ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিএনপি স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে

0

সিটিনিউজ ডেস্ক:: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এই রায় রিভিউয়ের আবেদন করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন নেতারা।

বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়ের ব্যাপারে দলের বক্তব্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।  এতে কথা বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ।

সাবেক আইনমন্ত্রী খসরু বলেন, ষোড়শ সংশোধনী রায়কে বিকৃত করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই এভাবে আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, যা আদালত অবমাননার শামিল।

গত ১ আগস্ট বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান আবার ফিরেছে সংবিধানে। আর সুপ্রিম জুডশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি কার্যকর করতে বিচারকদের জন্য গত বছর দেয়া আচরণবিধি সংশোধন করে ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দিয়েছে আপিল।

এছাড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদ, রাজনীতি, নির্বাচন কমশিন, সংবিধানের ৭০ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে নানা বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বক্তব্যে বিএনপি উৎফুল্ল, আর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে মন্ত্রিসভায়।

রায়ে বলা হয়, ‘মানবাধিকার ঝুঁকিতে, দুর্নীতি অনিয়ন্ত্রিত, সংসদ অকার্যকর, কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা। আর প্রযুক্তির উন্নতির সহায়তা নিয়ে অপরাধের প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ভীষণ রকম ক্ষতিগ্রস্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম নয়। এমন পরিস্থিতে নির্বাহী বিভাগ আরও অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং আর আমলাতন্ত্র দক্ষতা অর্জনে চেষ্টাহীন।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক মনে করেন, এই মামলার রায়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক ও মানহানিকর বক্তব্য এসেছে।

তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আট দিন পর আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রথম এ নিয়ে বক্তব্য দিল। দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে কিছু অনাকাঙ্খিত পর্যবেক্ষণ রয়েছে যা বিচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আর বিএনপি নেতারা রায়ের অপব্যখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী রায়ে কোথাও নেই এই সরকার অবৈধ। কিন্তু আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক সুযোগ নিতে চাচ্ছে।’

ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যে যেমন পারছে তাদের মতো করে রায়ের ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতারা ষোড়শ সংশোধনী রায় নিয়ে রাজনিতি করতে চাচ্ছেন, বিচার বিভাগ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু বিএনপি নেতারা তাই করছেন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে রিভিউ করা হবে কি হবে না, তা পরে দলীয়ভাবে জানাব। তবে আমরা চিফ জাস্টিজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি, সেটা রায়ের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।’

বিএনপি নেতারা বিচার বিভাগকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানাতে চাচ্ছে মন্তব্য করে খসরু বলেন, ‘বিচার বিভাগ এবং আইন সভা একে অপরের সহায়ক। সংসদের কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন করা আর বিচার বিভাগের কাজ হচ্ছে জুডিশিয়াল ন্যায়বিচার করা। আমরা বিচার বিভাগকে শ্রদ্ধা করি। বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি।’

উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষিত ষোড়শ সংশোধনী আবার পাস করা হবে- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী খসরু বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত। এটা দলের বক্তব্য নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাছান চৌধুরী নওফেল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.